:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
বাংলা চলচ্চিত্রের জ্যেষ্ঠ অভিনেতা আবদুল্লাহ সাকী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
রোববার দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে জামালপুরে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন ঢালিউড অভিনেতা আবদুল্লাহ সাকি। এক মাস আগে দ্বিতীয়বারের মতো স্ট্রোক করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হন তিনি। এর পর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। অবশেষে টানা এক মাস বাসায় শয্যাশায়ী থাকার পর আজ রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে এই অভিনেতার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন অভিনেতার ছেলে শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সৌদ।
আবদুল্লাহ সাকির ছেলে শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাবা দুই বছর আগে প্রথম স্ট্রোক করেন। তার পর থেকে শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এর মধ্যে আমরা জামালপুরের ফিজিওথেরাপি দিয়েছি। তখন কিছুটা ভালো ছিলেন। হাঁটতে পারতেন। তখন অনেক কিছুই মনে রাখতে পারতেন। অনেক সময় কথা বলতে সমস্যা হতো। এর মধ্যে মাসখানেক আগে আরেকটি স্ট্রোক করে একদম কোমায় চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। একদম বিছানায় পড়ে যান। তিনি খেতেও পারতেন না। পাইপ দিয়ে খাওয়াতে হতো। কথাও বলতে পারতেন না। বাবা কাউকে সেভাবে চিনতেও পারতেন না। এর মধ্যেই হঠাৎ আজ দিবাগত রাত একটার দিকে বাবা মারা যান। বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
১৯৯০ সালের দিকে আবদুল্লাহ সাকি শখে অভিনয় শুরু করেন। তিনি পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর বেশির ভাগ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এই পরিচালকের সঙ্গে সাকির ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে চাকরির জন্য নিয়মিত অভিনয়ে সময় দিতে পারতেন না। জানা যায়, আবদুল্লাহ সাকি সরকারি চাকরি করতেন। তিনি ২০০৭ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। তার পর থেকে ঢাকাতেই থাকতেন। তখন বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন। নাটকও প্রযোজনায় আসেন। পরবর্তী সময় তাঁর ইচ্ছা হয় গ্রামের বাড়ি চলে যাবেন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি গ্রামের বাড়িতেই সময় কাটাচ্ছিলেন। নয়ন নামে তাঁর একজন সহকারী এই অভিনেতাকে দেখভাল করতেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অভিনয় নিয়ে আবদুল্লাহ সাকির কোনো অভিমান ছিল কি না, এমন প্রশ্নে তাঁর ছেলের জানান, তাঁর বাবা ব্যক্তিগত ইচ্ছাতেই শখে অভিনয় করতেন। যত সিনেমায় অভিনয় করেছেন, সব কটিতেই তিনি অভিনয় করে সন্তুষ্ট ছিলেন। অভিনয় নিয়ে চাওয়ার চেয়ে বেশি পেয়েছিলেন। তিনি খুশি ছিলেন।
ঢাকাই ছবির দর্শক নন্দিত ছবি ‘প্রেমগীত’,‘ঝিনুক মালা’, ‘মাটির কোলে’, ‘গরিবের বন্ধু’, ‘হারানো প্রেম’, ‘মায়ের দোয়া’, ‘রাস্তার রাজা’,সহ ৭০টির মতো সিনেমায় অভিনেতা ছিলেন আবদুল্লাহ সাকি।
অভিনেতা আবদুল্লাহ সাকীর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন চিত্রনায়ক ওমর সানি। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্র অঙ্গনে। শোক প্রকাশ করেছেন তার সহকর্মী থেকে শুরু করে অনেকে।
শোক প্রকাশ করে চিত্রনায়ক ওমর সানি তার ফেসবুকে লিখেছেন, একটা দুঃসংবাদ পেলাম এখন আমার বিখ্যাত ছবি ‘প্রেম গীত’র আমার সাথে খান চাচা অভিনয় করেছিলেন, আমাদের অসংখ্য ছবির শিল্পী সাকী ভাই গতরাত একটার সময় ইন্তেকাল করেছেন, উনার কাছের একজন মানুষ আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন। সাকী ভাইকে আল্লাহ জান্নাত নসিব করুন।
৮০ দশকে চলচ্চিত্র আগমন ঘটেছিল আবদুল্লাহ সাকীর। নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর সিনেমায় অভিনয় করে অভিষেক হয়েছিল তার। ৯০ দশকে বাংলা সিনেমায় নিয়মিত কাজ করেন আবদুল্লাহ সাকী। অভিনয় দিয়েই দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন এ অভিনেতা। কিন্তু জীবনের শেষ বয়সে অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন।
অভিনেতা আবদুল্লাহ সাকিকে বেলা ১১টার দিকে গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তাঁর জন্ম ১৯৫৬ সালে। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে সোনিয়া সাকি। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। সাকির স্ত্রী নাহিদা সাকি মেয়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তিনি সর্বশেষ ২০১৬ সাল পর্যন্ত অভিনয় করেন। সবশেষ এই অভিনেতা ওয়ার্নিং সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন বলে জানান তাঁর ছেলে।