।। ফজলে এলাহী ।।
আইয়ুব বাচ্চু নামটি ঠিক কবে, কখন প্রথম শুনেছিলাম তা মনে নেই। তবে নামটির সাথে পরিচয় সেই শৈশব থেকেই “সোলস” ব্যান্ডের এলবাম কভারে থাকা নামের তালিকা দেখে। এরপর ধীরে ধীরে আইয়ুব বাচ্চু নামের মানুষটিকে চেনা ও জানা।
৯০ দশকের শ্রোতাদের কাছেও আইয়ুব বাচ্চু নামটি পাগল করা এক নাম, অনেক ভালোবাসার এক নাম। আইয়ুব বাচ্চু ও তার সমসাময়িকরা যেভাবে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতকে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ও আন্তর্জাতিক মানে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সে ধারাটি কি বর্তমান প্রজন্ম ধরে রাখতে পেরেছে?
আমাদের কাছে তখন সোলসের ১ম ও একমাত্র পরিচিত মুখ তপন চৌধুরী। আমাদের বাসায় তখন বাজারে প্রকাশিত নতুন অডিও এলবাম নিয়মিত আসতো আমার মা ও মামার কারণে। মা ছিলেন খুব গানপাগল মানুষ। ভারতের মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোর কুমার, হৈমন্তী শুক্লা, লতা মুঙ্গেশকার, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের রুনা লায়লা, ফেরদৌস ওয়াহিদ, আজম খান, বশির আহমেদ, ফিরোজ সাইদের গান নিয়মিত বাজতো আমাদের বাসায়। তখনও ব্যান্ড সংগীত বাংলাদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রোতাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়নি কিন্তু সোলসের এলবাম নিয়মিত কেনা হতো বলে সোলসের সাথে পরিচয় আর তপন চৌধুরী সোলস ও সোলসের বাহিরে আধুনিক এলবামে খুবই জনপ্রিয়। বিটিভিতে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটক ” প্রতিশ্রুতি ” ( মানস বন্দোপাধ্যায় – লুৎফুন নাহার লতা – মেঘনা অভিনীত) এর এক পর্বে ” মন শুধু মন ছুয়েছে” গানটি ব্যবহৃত হয়েছিলো যারপর থেকে সোলস শ্রোতাদের কাছে আরও জনপ্রিয়তা পায়।
তপন চৌধুরীর ১ম একক এলবাম প্রকাশের পর বাসায় যখন এলবামটি আনা হলো তখন ক্যাসের কভারের গায়ে তপন চৌধুরীর ছবির নিচে বড় বড় করে লেখা ” সুর ও সংগীতঃ আইয়ুব বাচ্চু “। ক্যাসেটটি প্রতিদিনই আমাদের ঘরে বাজানো হতো। স্কুল থেকে ফিরে আমি নিজেও প্যানাসনিকের ক্যাসেট প্লেয়ার সামনে নিয়ে বসে যেতাম গান শুনতে। তপন চৌধুরীর সেই এলবামের ১ম গান ” মনে করো তুমি আমি/চলে গেছি সবুজ ছোট সেই গ্রামে” গানটির ভক্ত হয়ে যাই তখন থেকেই। গানটির মধ্য গীটারের যে মেলোডিয়াস টিউনটা আইয়ুব বাচ্চুর নিজের বাজানো সেটা তখনও বুঝতে পারিনি শুধু বুঝতাম গানের শুরুতে ও মাঝখানে গীটারের ছন্দটা দারুণ। বিটিভিতে ব্যান্ড শোর অনুষ্ঠানে সোলসকে দেখতাম কিন্তু অনেকের ভিড়ে ব্যক্তি আইয়ুব বাচ্চুকে চিনতে পারিনি তখনও। বিটিভির ব্যান্ড শোতে সোলসের ” মন শুধু মন ছুয়েছে”, ” নদী এসে পথ “, “কলেজের করিডোরে দেখেছি “, “প্রতিদিন প্রতিটি মুহুর্ত কেন ” গানগুলোর পরিবেশনা দেখেছি আর মুগ্ধ হয়েছি। উল্লেখ্য যে তখন সোলসের পরিবেশনা মানেই ছিলো তপন চৌধুরী আর তার চারপাশে নাসিম আলী, আইয়ুব বাচ্চু সহ অন্যান্য সদস্যারা। ২/৩ বার সম্ভবত নকীব খানও ছিলো কিবোর্ডে।
এরপর আইয়ুব বাচ্চুকে ১ম চিনি মামা যখন আইয়ুব বাচ্চুর ১ম একক এলবাম কিনে এনেছিলেন। এলবাম কভারে লিখা ” আইয়ুব বাচ্চু ভলিউম ১” আর কভারের উপরের অংশে আইয়ুব বাচ্চুর ছবি যার নিচে লিখা ” মোহাং আইয়ুব বাচ্চু”। এই প্রথম আইয়ুব বাচ্চুর চেহারা চেনা ও জানা যে আইয়ুব বাচ্চু শুধু গীটারই বাজান না গানও গাইতে পারেন। ৮০র দশকের শেষ দিকে বিটিভির ব্যান্ড শো আর ঘরে থাকা অডিও ক্যাসেটের কল্যাণে আমাদের কাছে তখন অবসকিউর, চাইম, নোভা, ফিডব্যাক ব্যান্ডগুলো দারুণ পরিচিত। স্কুলে বন্ধুরা মিলে আমরা দলবেঁধে গাইতাম ” বাবারে বাবা, ও বাবা ভন্ড বাবা “, ” ছাইড়া গেলাম মাটির পৃথিবী “, ” আমার জন্য লিখো শুধু একটা গান “, ” নাতি খাতি বেলা গেলো শুতে পারলাম না”, ” ও রাখাল ছেলে রাখাল ছেলে একটু দাঁড়াও”, “নাইরে নাইরে নাই খোকন কোথাও নাই “, ” একঝাঁক প্রজাপতি ছিলাম আমরা “, ” ও মৌসুমী বলো কার তুমি” গানগুলো। তখনও আইয়ুব বাচ্চু আমাদের মাঝে প্রভাব ফেলেননি বা আমরা তাকে পুরোপুরী বুঝতে পারিনি।
৯০ দশকের শুরুর দিকের ঘটনা। তখন এরশাদ সরকারের পতন হয় হয় এমনবস্থা। সেইসময় এক ঈদে যথারীতি বিটিভির ব্যান্ড শো ছিলো আমাদের সবচেয়ে প্রিয় অনুষ্ঠান। ঈদের ব্যান্ড শোতে সোলস ও তপন চৌধুরী আমাদের মুখস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু সেই প্রথম ঈদের ব্যান্ড শোতে সোলসকে দেখলাম তপন চৌধুরী ছাড়া। গান গাইছে গীটার হাতে ঝাকড়া চুলের একজন যাকে আইয়ুব বাচ্চু নামে চিনি। ” একদিন ঘুম ভাঙা শহরে ” শিরোনামের দারুণ একটা গান পরিবেশন করলো সোলস যার কন্ঠে ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। পুরো গান ও পরিবেশনা মাথার উপর দিয়ে গেলো!! পুরাই অস্থির, রকিং এক পরিবেশনা। সোলসে এতদিন যেভাবে দেখতাম তার চেয়ে পুরো ভিন্নভাবে সোলসকে দেখলাম সেদিন আমরা। ব্যান্ড শো শেষে বারবার সোলসের গানটা গাওয়ার চেষ্টা করেছি, গানের শুরুর মাঝখানের কোন কথা মনে নেই শুধু ” একটি কিশোর ছেলে / একাকী স্বপ্ন দেখে / কি যে সুখ, কি যে সুখ ” বলে চিৎকার করতাম। এই প্রথম আইয়ুব বাচ্চু আমার মনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। একদিন দেখি বড় ভাইয়া একটা এলবাম কিনে এনেছেন যার নাম ” নাসিম আলী, ভলিউম 1″ যে এলবামের কভারেও লিখা ” সুর ও সংগীতঃ আইয়ুব বাচ্চু” যা দেখে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম ” এটা কি মোহাং আইয়ুব বাচ্চু সে? ” ভাইয়া বললেন ” হু”। এলবাম কভারে ব্যান্ড শোতে সোলসের তপন চৌধুরীর পাশে খঞ্জনী বাজিয়ে হেলে দুলে নাচতে থাকা কোকড়া চুলের পরিচিত মুখ নাসিম আলীর ছবি দেয়া। এলবামটির ১ম গান ” যতিন স্যারের ক্লাসে ” ও ২য় গান ” পথে যেতে যেতে খুঁজেছি তোমায় আমি ” গান দুটোর প্রেমে পড়ে গেলাম। দুদিন পর ভাইয়া সাদা রঙের কভারের একটা ক্যাসেট আনলেন যার নাম ছিলো ” ময়না ” আর কভারের উপরে আইয়ুব বাচ্চুর দাঁড়িয়ে থাকা একটা পুরো ছবি দেয়া। ময়না এলবামের ” হাশরের ময়দানে কারও মাফ মিলবে না ” গানটা আমার দারুণ ভালো লেগে যায়। সারাক্ষণ গানটা গুনগুন করে গাওয়ার চেষ্টা করতাম। এভাবে অল্প অল্প করে আইয়ুব বাচ্চুকে চিনতে শুরু করি আমি।
আইয়ুব বাচ্চুকে একটু একটু করে চেনার সময়ে একদিন শুনলাম ” সোলস” ছেড়ে আইয়ুব বাচ্চু চলে গেছেন। কোথায় গেছেন কি করছেন কিচ্ছু জানি না। সোলস ছাড়া নতুন আইয়ুব বাচ্চুকে প্রথম দেখতে পেলাম সেই আমাদের প্রিয় বিটিভির ঈদের ব্যান্ড শো তে যখন উপস্থাপিকা বললেন ” এবার আসছে লাভ রানস ব্লাইন্ড”। ” পেপার পেপার ” বলে ৪ জন সদস্যর ব্যান্ড লাভ রানস ব্লাইন্ড বা এলআরবি তাদের পরিবেশনা শুরু করলেন যার মধ্যমণি আইয়ুব বাচ্চু । বিটিভিতে এলআরবির ১ম পরিবেশনা ” একটি হকার, কেউ নেই তার” গানটি ছিলো দুর্দান্ত এক পরিবেশনা, বিশেষ করে গানের শেষের এক মিনিটের আইয়ুব বাচ্চু, স্বপন ও ড্রামার জয়ের জ্যামিংটা ছিলো সুপার, অসাধারণ। আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম এলআরবির পরিবেশনায় আর বুঝে গেলাম আইয়ুব বাচ্চু নতুন কিছু, দারুণ কিছু নিয়েই আসছেন আমাদের মাঝে।
বিটিভির ব্যান্ড শোতে ১ম পরিবেশনাতেই মুগ্ধ করা এলআরবি ও আইয়ুব বাচ্চুকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বাংলাদেশের অডিও ক্যাসেটের ইতিহাসে সর্বপ্রথম প্রকাশিত একসাথে দুটো নতুন এলবাম প্রকাশ প্রমাণ করে শ্রোতাদের চমকে দিয়েছিলো আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবি। আইয়ুব বাচ্চু ছাড়া এমন চ্যালেঞ্জিং আইডিয়া আর কারও মাথা থেকে আসা সম্ভব না। একটা এলবাম প্রকাশ করে যেখানে ব্যর্থতার সংখ্যা আছে সেখানে একইসাথে দু দুটো এলবাম প্রকাশের সাহস আইয়ুব বাচ্চু দেখিয়েছিলেন এবং শুধু সফলই হোননি হয়েছিলেন মহাসফল। এলআরবি শ্রোতা মহলে তুমুল ঝড় তোলে। আমরা পাই এক নতুন আইয়ুব বাচ্চুকে এবং ব্যান্ড সংগীত প্রবেশ করে নতুন প্রলয়ংকারী এক ইতিহাসে যে ইতিহাসের রচয়িতাদের মাঝে আইয়ুব বাচ্চু থাকেন শীর্ষ নেতৃত্বে। চারিদিকে এলআরবির ” হকার”, ” একদিন ঘুম ভাঙা শহরে”, ” স্মৃতি নিয়ে”, ” তুমি ছিলে আমি ছিলাম “, ” শেষ চিঠি”, ” মাধবী ” গানগুলো। এলআরবির এই দুটো এলবামে প্রাধান্য পায় ” হকার”, ” পেনশন”, ” রিটায়ার্ড ফাদার”, ” মাধবী ” শিরোনামের জীবনমুখী গানগুলো।
সোলসের আড়ালে পড়ে থাকা আইয়ুব বাচ্চুর শুরু হয় নতুন করে নিজের নামটিকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই যার শুরুতেই তিনি ১০০% সফল। আমাদের কাছে আইয়ুব তখন একটা ক্রেজ। বছর যেতে না যেতেই আমরা হাতে পাই এলআরবির নতুন আরেকটা এলবাম যার নাম ” সুখ”। যথারীতি আবারও এলআরবি তথা আইয়ুব বাচ্চুর ঝড় তোলা অডিও বাজারে ” চলো বদলে যাই “। এই একটি গানই এলআরবি ও আইয়ুব বাচ্চুকে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাসে অমরত্ব দিয়ে দেয় সেদিন। মজার বিষয় হলো ” চলো বদলে যাই ” গানটির চেয়েও আরও দারুণ কয়েকটি গান ছিলো ঐ একই এলবামে ” রুপালী গীটার”, ” কি আশাতে”, ” যত বেশি আমি “, ” আমি জানিনা তুমি কেমন আছো ” শিরোনামের গানগুলো কিন্তু সব গান ছাপিয়ে ” চলো বদলে যাই ” গানটি হয়ে যায় সুপার ডুপার বাম্পার হিট। সংখ্যা ৩ টি কিন্তু প্রকাশকাল ২ টির হিসাবে এলআরবির ৩ টি এলবামই পরপর সুপারহিট আর আমাদের কাছে আইয়ুব বাচ্চু হয়ে যান ব্যান্ড সংগীতের সুপারহিরো যা তিনি মৃত্যুরক্ষণ পর্যন্ত ছিলেন। “হকার “থেকে শুরু করে আমাদের – বিস্ময় ” পর্যন্ত ৯০ দশকে প্রকাশিত এলআরবির সবগুলো (৮টি) এলবাম ছিলো সুপারহিট যা অডিও এলবামে বিরল একটা ঘটনা।
এলআরবি ছাড়াও “আইয়ুব বাচ্চু” নামটি আমরা তখন দেখেছিলাম বহু জায়গায় বহুবার। ব্যান্ড সংগীতের জোয়ারের সেই দিনগুলোতে অখ্যাত তরুন কন্ঠগুলোকে যখন কেউ সহযোগীতা করতে চাইতো না তখন তাদের কাছে আইয়ুব বাচ্চুই ছিলেন একমাত্র ভরসা। একেবারে অপরিচিত অখ্যাত কন্ঠ মনসুরের এলবামেও দেখি ” সুর ও সংগীতঃ আইয়ুব বাচ্চু” যা দেখে অনেকেই মনসুরের এলবামটি কিনে। সেই এলবামে ” শোন নাকি শোন ঐ / ভালোবাসা ডাক দিয়ে যায় ” , ও ” নীল কাগজে লিখা / বন্ধু তোমার চিঠি পেয়েছি” গান দুটো আজও গুনগুন করে গাই। সম্ভাবনাময় কন্ঠ মনসুরকে এরপর আর পাইনি। জুয়েল নামের এক কন্ঠকে তো আমরা শ্রোতারা সেদিন আইয়ুব বাচ্চুর আপন ছোট ভাই মনে করেছিলাম কারণ আধুনিক গানের দারুণ এক কন্ঠ জুয়েলের সব এলবামেই দেখি আইয়ুব বাচ্চুর সুর ও সংগীত। আইয়ুব বাচ্চু কতটা উঁচু মানের সুরকার ও সংগীত পরিচালক সেটা ৯০ দশকে প্রকাশিত জুয়েলের ৫ টি এলবামেই প্রমাণ করে।ব্যান্ড শিল্পী না হয়েও ব্যান্ডের শ্রোতাদের কাছে জুয়েলের জনপ্রিয়তার সবটুকুর অবদান আইয়ুব বাচ্চুর। আইয়ুব বাচ্চু জুয়েলের এলবামগুলোতে যে সুর ও সংগীত রচয়িতা করেছিলেন তা রকস্টার আইয়ুব বাচ্চুর সম্পুর্ন বিপরীত। আগে থেকে কেউ না জানলে বুঝতেই পারবে না যে ৫টি এলবামই আইয়ুব বাচ্চুর সুরে।
এলআরবির বাহিরে একা আইয়ুব বাচ্চু ও ব্যান্ড মিক্সড এলবামে সম সাময়িকদের সাথে আইয়ুব বাচ্চু সবখানেই নিজের জাতটা তিনি চিনেয়েছিলেন। সবখানেই ছিলেন অসাধারণ, দুর্দান্ত। একক এলবাম ” “কষ্ট” যখন বাজারে তখন প্রিন্স মাহমুদের শক্তি, ব্যান্ড মিক্সড টুগেদার, নোভার ” স্কুল পলাতক মেয়ে”, জেমসের ” পালাবে কোথায়”, সোলসের ” আজ দিন কাটুক গানে” ও ওয়ারফেজের “অবাক ভালোবাসা” এলবামগুলোও বাজারে। কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুর একক এলবাম ” কষ্ট” এর বাজিমাৎ কেউ ঠেকাতে পারেনি। আইয়ুব বাচ্চু নিজের জায়গা ঠিকই করে নিলেন স্বমহিমায়। সারাদেশের হাটে, মাঠে, ঘাটে আইয়ুব বাচ্চুর ” আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি / তাই তোমার কাছে ছুটে আসি” বাজতে লাগলো।
ব্যান্ড মিক্সডের জোয়ারে যখন সারাদেশ ভাসছিলো তখনও আইয়ুব বাচ্চু সেরা। কখনও নিজের সুরে, কখনও প্রিন্স মাহমুদ, আশিকুজ্জামান টুলু, আশরাফ বাবু, জুয়েল বাবুর সুরে আইয়ুব বাচ্চু নিয়মিত শ্রোতাদের মাতিয়ে রেখেছিলেন। ” সেই তারা ভরা রাতে “, ” পালাতে চাই “, ” জানিনা কেন অন্ধকারে তুমি একা “, ” আমার দুটি আকাশ ছিলো”, ” কোন অভিযোগ নেই যে আমার “, ” সারারাত তুমি হেটেছো আমার “, ” আমার সমাধির পর “, ” এখন অনেক রাত “, ” যখন তোমার ঐ চোখে “, ” মেয়ে “, ” পথ থেকে পথে “, ” বেলা শেষে ফিরে এসে”, ” কোথাও নেই আমি তুমিহীনা “, ” ময়ুরী”, ” কতদিন দেখেনি দু চোখ “, ” অভিমান নিয়ে দিন কেটে যায় “… এমন অসংখ্য অসংখ্য জনপ্রিয় গান আছে ব্যান্ড মিক্সড এলবামগুলো জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে আইয়ুব বাচ্চুর অবদান। এভাবে তিলে তিলে গড়ে উঠা এক আইয়ুব বাচ্চুকে আমি ও আমার সমবয়সীরা দেখেছিলাম আর শিখেছিলাম কিভাবে ইতিহাসে অমরত্ব নিতে হয়। আইয়ুব বাচ্চু আমাদের কাছে শুধুই একজন সেরা সংগীতজ্ঞ নন, একজন সংগীতযোদ্ধাও বটে।
৮০র মাঝামাঝি থেকে পুরো ৯০ দশক জুড়ে একজন আইয়ুব বাচ্চুকে আমরা যেভাবে পেয়েছিলাম, চিনেছিলাম ২০০০ এর পর বেড়ে উঠা আজকের প্রজন্ম তেমনভাবে পায়নি। এখনও আইয়ুব বাচ্চুর সব সেরা /শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিগুলো সেই ৯০ দশক জুড়ে। আইয়ুব বাচ্চুর তীক্ষ্ণ সুমধুর কন্ঠ, মেলোডিয়াস সুর ও গীটারের ঝংকার সব ৯০ দশকেরই সৃষ্টি। তাই তো ৯০ দশকের শ্রোতাদের কাছেও আইয়ুব বাচ্চু নামটি পাগল করা এক নাম, অনেক ভালোবাসার এক নাম। আইয়ুব বাচ্চু ও তার সমসাময়িকরা যেভাবে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতকে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ও আন্তর্জাতিক মানে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সে ধারাটি কি বর্তমান প্রজন্ম ধরে রাখতে পেরেছে? আইয়ুব বাচ্চু নিজের জীবিত অবস্থায় দেখে গিয়েছেন তাঁর ও তাঁর সমসাময়িকদের অনেক কষ্টে গড়া বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের পতন বা অবক্ষয় যা হয়তো তাঁকে খুব কষ্ট দিতো।