:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাকিস্তানে ৯ জন এবং আফগানিস্তানে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮। এর উৎপত্তিস্থল আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের হিন্দুকুশ পার্বত্য এলাকায়। তবে মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫।
ইউরোপীয়-ভূমধ্যসাগরীয় সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, এর উপত্তিস্থলের এক হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভারত, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানেও ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের পর উত্তর ভারতের বেশ কয়েকটি প্রদেশে প্রায় দুই মিনিটের মতো কম্পন অনুভূত হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, মানুষজন রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে জড়ো হচ্ছেন। ভূমিকম্পের কারণে তাদের ঘরের ভেতরে জিনিসপত্র পড়ে গেছে বলেও জানান তারা।
এদিকে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, মঙ্গলবারের ভূমিকম্পে পাকিস্তানে প্রায় ৩০ সেকেন্ডের মতো স্থায়ী হয়।
রাওয়ালপিন্ডিতে থাকা বার্তা সংস্থা এএফপির এক সাংবাদিক জানান, ভূমিকম্পের সময় মানুষ তাদের বাড়ি থেকে দৌড়ে বের হয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তারা কোরআন তেলওয়াত করতে থাকেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আফগান অঞ্চল বাদাকসানের জুর্ম শহরে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের তীব্রতায় উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের শহরগুলোর বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে পথে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এলাকাগুলোর কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি কয়েক স্থানে ভূমিধস দেখা দিয়েছে।
এদিকে লাহোরের প্রত্যক্ষদর্শীরা সিএনএনকে জানিয়েছেন, সেখানেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বৃহত্তম শহরেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
জানা গেছে, সোয়াত উপত্যকার হাসপাতালগুলোয় অন্তত ২৫০ মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১৫ জন সামান্য আহত হয়েছে। আর দুই শতাধিক মানুষ অজ্ঞান হয়েছিলেন। এই প্রদেশের অন্যান্য এলাকায় ৫২ ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের উদ্ধারকারী দল রেসকিউ ১১২২ এর ডিজি ডা. খাতের আহমেদ জানান, তারা স্বাবি ও লোয়ার দির এলাকা থেকে উদ্ধারের ডাক পেয়ে ঘটনাস্থলে টিম পাঠিয়েছেন।
উদ্ধার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোয়াবি জেলার শেখজানা গ্রামে ভূমিকম্পের কারণে বাড়ির ছাদ ধসে পড়ায় পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতদের রাজার তহসিল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কেপি পুলিশ জানিয়েছে, সদর থানার সীমানায় মর্দানে একজন আহত হয়েছে । অন্যদিকে, প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোয়াতের কালাম এলাকায় কারানডুকে সেতুর কাছে ভূমি ধসে পড়ে। এতে বাহরাইন-কালাম সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। কেপি স্বাস্থ্য বিভাগও প্রদেশের সব হাসপাতালে জরুরি অবস্থা জারি করেছে এবং এর কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। শফিউল্লাহ গন্ডাপুর নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, সোয়াতে প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি গিলগিট-বালতিস্তান (জিবি)-এর পার্বত্য অঞ্চলেও ঝাঁকুনি দিয়েছিল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভূমিধসের কারণে একটি খামারের গবাদিপশু মারা গেছে। এ ছাড়া ভূমিধসে কোহিস্তানের হারবান এলাকায় কারাকোরাম মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। এতে উভয় পাশে বেশ অনেক লোক আটকা পড়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে অনেক ভবনে ফাটলের খবরও পাওয়া গেছে।
কাবুলের বাসিন্দা খাতেরা বার্তাসংস্থা এএফপিকে ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘এটি একটি ভয়ঙ্কর কম্পন ছিল। আমি আমার জীবনে আগে কখনও এমন কম্পন অনুভব করিনি।’
ভূমিকম্পের সময় অনেক পরিবার পারস্য নববর্ষ বা নওরোজ উদযাপনের জন্য তাদের বাড়ির বাইরে ছিলেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ দুর্যোগ মোকাবিলা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুনে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।