:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
এপ্রিল মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৯৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৭৮ জন। নিহতের মধ্যে ৪৯ জন নারী এবং ৮৮ শিশু ছিলেন।
এ ছাড়া ১৯১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২০১ জন, যা মোট নিহতের ৪০.৪৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৪.৩১ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৯ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১.৯৩ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭১ জন, ১৪.২৮ শতাংশ।
একই সময়ে ৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। ১৬টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ৬৭ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৩ মে) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের সই করা বিজ্ঞপিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী ২০১ জন (৪০ দশমিক ৪৪ শতাংশ), বাসযাত্রী ১৪ জন (২ দশমিক ৮১ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৩১ জন (৬ দশমিক ২৩ শতাংশ), প্রাইভেট কার আরোহী ৫ জন (১ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ৯৯ জন (১৯ দশমিক ৯১ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নছিমন-ভটভটি-চান্দের গাড়ি-মাহিন্দ্র-টমটম-লাটাহাম্বা) ১৮ জন (৩ দশমিক ৬২ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান আরোহী ২০ জন (৪ দশমিক ২ শতাংশ) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৯টি (৩৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৬০টি (৩৭ দশমিক ১২ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭১টি (১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৩৮টি (৮ দশমিক ৮১ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৩টি (শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৭১টি (১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯৫টি (৪৫ দশমিক ২৪ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৯টি (২৫ দশমিক ২৯ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দিয়ে, ৩৫টি (৮ দশমিক ১২ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করে এবং ২১টি (৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যেসব যানবাহন
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনগুলোর মধ্যে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক ২৭ দশমিক ২৬ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেট কার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ; স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নছিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-টমটম-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা-ধানমাড়াই গাড়ি) ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং অন্যান্য (পুলিশের পিকআপ, ওয়াসার পানির গাড়ি, তেলের ট্যাঙ্কার, ২৪ চাকার লরি, বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন ও অজ্ঞাত গাড়ি) ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
যানবাহনের সংখ্যা
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা হলো ৮২৯টি। এর মধ্যে ট্রাক ১০৭, বাস ১০৪, কাভার্ড ভ্যান ২৪, পিকআপ ৪৮, ট্রাক্টর ২১, ট্রলি ১৩, লরি ৫, ড্রাম ট্রাক ৮, মাইক্রোবাস ১৪, প্রাইভেট কার ১৯, অ্যাম্বুলেন্স ২, পৌরসভার মেয়রের জিপ ১, মোটরসাইকেল ২১৩, থ্রি-হুইলার ১৪৫ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৫৭ (নছিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-টমটম-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা-ধানমাড়াই গাড়ি), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান ৩২টি এবং অন্যান ১৬টি (পুলিশের পিকআপ, ওয়াসার পানির গাড়ি, তেলের ট্যাঙ্কার, ২৪ চাকার লরি, বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন ও অজ্ঞাত গাড়ি)।
দুর্ঘটনার সময়কাল
সময় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, সকালে ২৬ দশমিক ৯১ শতাংশ, দুপুরে ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, বিকালে ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১০ দশমিক ২০ শতাংশ এবং রাতে ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, প্রাণহানি ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫ দশমিক ০৮ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ, প্রাণহানি ১৯ দশমিক ৯১ শতাংশ; খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ, প্রাণহানি ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ; সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ; রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও প্রাণহানি ঘটেছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১২২টি দুর্ঘটনায় ১৩৪ জন নিহত। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। ২১টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়েছে। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ২১টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৩ জন। সবচেয়ে কম রাঙামাটি ও বরগুনা জেলায়। এ দুটি জেলায় সামান্য মাত্রার চারটি দুর্ঘটনায় কোনও প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ২৩টি দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ৩৪ জন আহত হয়েছে।
নিহতদের পেশাগত পরিচয়
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৩ জন, বিজিবি সদস্য ৩ জন, আনসার সদস্য ১ জন, গ্রাম পুলিশ ২ জন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ৯ জন, দন্তচিকিৎসক ১ জন, পল্লিচিকিৎসক ১ জন, ডিপিডিসি কর্মকর্তা ১ জন, দুদকের কর্মকর্তা ১ জন, বন বিভাগের কর্মকর্তা ১ জন, তহশিলদার ১ জন, সাংবাদিক ৩ জন, আইনজীবী ২ জন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ৫ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১১ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ২ জন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৯ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২৮ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৪ জন, পোশাকশ্রমিক ৭ জন, কাঠমিস্ত্রি ৩ জন, ইটভাঙা শ্রমিক ৪ জন, এবং সারা দেশের স্কুল- মাদরাসা-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।