:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় শুধু গণিতেই ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০২ পরীক্ষার্থী ফেল করেছেন। অন্যদিকে এবার গণিতে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে যশোর বোর্ড। এ বোর্ডটিতে গণিতে পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
এবারের ফলাফলে দেশসেরা হয়েছে যশোর বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ।
রোববার (১২ মে) প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছর ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থী ১৬ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৪২ হাজার ৩১৪ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৩ জন। এরমধ্যে পাস করেছে ১৫ লাখ ৭২ হাজার ৪৩২ জন। অর্থাৎ, ১০টি বোর্ডে ফেল করেছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৬২৭ জন। এরমধ্যে শুধু গণিতে ফেল করেছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০২ জন। অর্থাৎ, ফেল করা শিক্ষার্থীদের অর্ধেকের বেশি গণিতে অকৃতকার্য হয়েছে।
বোর্ডভিত্তিক ফলাফলে এ বছর গণিতে সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে মাদরাসা বোর্ড। বোর্ডটিতে ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই গণিতে ফেল করেছে।
এ ছাড়া ঢাকা বোর্ডে ফেলের হার ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ, কুমিল্লায় ১২ দশমিক ০৪ শতাংশ, দিনাজপুরে ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ, ময়মনসিংহে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭ দশমিক ৬৩, বরিশালে ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে ফেল করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গণিতে ফলাফল খারাপ হওয়ায় এবার জিপিএ-৫ কমেছে। গত বছর ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও এবার তা ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন।
ফলাফলে পিছিয়ে থাকাদের মধ্যে কুমিল্লা বোর্ডের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এ বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। সাধারণ ৯টি বোর্ডের মধ্যে কুমিল্লায় গণিতে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে শিক্ষার্থী। এ বোর্ডে গণিতে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ গণিতে ফেল করেছে মোট শিক্ষার্থীর ১২ দশমিক ০৪ শতাংশ।
কেন বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী গণিত ও ইংরেজিতে ফেল করেছে- জানতে চাইলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে ভীতি রয়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি কাটিয়ে এবং শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের আওতায় আনার জন্য কাজ করা হবে।
কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, কুমিল্লা গঠিত। এ বছর এই ৬ জেলার ১ হাজার ৭৮০টি প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩২৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ছেলে ৭৪ হাজার ৭৩০ জন এবং মেয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৯৫ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৮১ জন। এর মধ্যে ছেলে ৫৮ হাজার ৭৮২ জন এবং মেয়ে ৮৩ হাজার ২৯৯ জন। বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। অকৃতকার্য হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী।
প্রকাশিত ফলাফলে সন্তুষ্ট না হলে খাতা চ্যালেঞ্জ বা ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। এই কার্যক্রম সোমবার (১৩ মে) থেকেই শুরু হয়ে চলবে ১৯ মে পর্যন্ত।
অনলাইনে মাধ্যমে ঘরে বসেই এ আবেদন করা যাবে। পরে বোর্ড তার খাতা যাচাই-বাছাই করে দেখে আবেদন নিষ্পত্তি করবেন।
শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণিতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায় থেকে গণিতের দুর্বলতা শিক্ষার্থীদের খারাপ ফলাফলের পেছনে মুখ্য কারণ।
বাকি বিষয়গুলোতে ফেলের হার
গণিত ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অন্য বিষয়গুলোতে ফেলের হার তুলনামূলক কম। এরমধ্যে বাংলায় ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ইংরেজিতে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ, পদার্থবিজ্ঞানে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, রসায়নে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ, আইসিটিতে ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, হিসাববিজ্ঞানে ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও পৌরনীতিতে ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ড. সমীর কুমার ভৌমিক বলেন, সব বিষয়েই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন। তবে গণিতের গুরুত্বটা আরও বেশি। গণিত চর্চার বিষয়। এটা মুখস্ত করার বিষয় নয়। শিক্ষার্থীরা যত বেশি গণিত চর্চা করবে, তত বেশি দক্ষ হয়ে ওঠবে। গণিতে দুর্বলতা দূর করতে অবশ্যই গণিতচর্চায় জোর দিতে হবে। এজন্য প্রশিক্ষিত ভালো শিক্ষক থাকাটা জরুরি।
গণিতে এবার সবচেয়ে ভালো ফল করা যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব বলেন, ২০২৩ সালের এইচএসসিতে যশোর বোর্ডের ফল খারাপ হয়েছিল। এরপর থেকে আমরা স্কুল-কলেজগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন সভা-সেমিনার করেছি। কেন ফল খারাপ হলো, সে বিষয়গুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছিলাম। কিছু বিষয় চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ফলস্বরূপ আমরা এবার এসএসসিতে বেশ ভালো ফল করেছি।
সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রমা বিজয় সরকার বলেন, ‘আমার বোর্ডে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অস্বাভাবিক ফল করেছে, যাতে বোর্ডের গড় পাসের হার কমে গেছে। এছাড়া মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেশি ফেল করেছে। সার্বিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে।’
পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন যেভাবে
শুধুমাত্র টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল ফোন থেকে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে RSC বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর রোল নম্বর বিষয় কোড লিখে Send করতে হবে 16222 নম্বরে।
ফিরতি এসএমএস-এ আবেদন বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন দেওয়া হবে। এতে সম্মত থাকলে মেসেজ অপশনে গিয়ে RSC Yes PIN Contact Number (যেকোনো অপারেটর) লিখে Send করতে হবে 16222 নম্বরে।
ফল পুনর্নিরীক্ষণে ক্ষেত্রে একই এসএমএস-এর মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে কমা (,) দিয়ে বিষয় কোড আলাদা লিখতে হবে। যেমন- ঢাকা বোর্ডের একজন শিক্ষার্থী বাংলা ও ইংরেজি দুটি বিষয়ের জন্য টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখবে RSC DHA Roll Number । ফল পুনর্নিরীক্ষণে প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা করে কেটে নেওয়া হবে।