:: কানিজ ফাতেমা ::
প্রতিবছর কোরবানির সময় অনলাইনে পশুপ্রেমীদের আহাজারি শুরু হয়,যাদের একটা বড় অংশ ইসলাম ধর্ম অনুসারি নন। সারাবছরই যখন নানা কারনে পশু হত্যা চলতে থাকে তখন শুধুমাত্র কোরবানি ঈদের সময়ই এই রব তোলায় তারা তুমুল সমালোচিতও হন,শুরু হয়ে যায় নাস্তিক বনাম বিশ্বাসী সাইবার যুদ্ধ। কিন্তু একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমি নিজেও কোরবানি নিয়ে বিচলিত হই, কেন হই তা নিয়ে এই লেখা।
কোরবানি একটি ইবাদত, সামর্থ্যবানদের জন্য ওয়াজিব। কিন্তু বাংলাদেশে কোরবানি যতটা ইবাদত তার চেয়েও বেশী ব্যবসা,শতকোটি টাকার ব্যবসা। কিন্তু অন্যান্য ব্যবসায়ের সাথে এর পার্থক্য হলো এই ব্যবসার মূল পন্য প্রানীরা অর্থাৎ এমন কিছু যার প্রাণ আছে, যে বুঝতে পারে। কোরবানির প্রানীদের প্রতি আমাদের আচরণবিধি নিয়ে ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও না ব্যবসায়ী না ক্রেতা কারো যেন তা মানার ভ্রুক্ষেপই নেই, বড় তাড়াহুড়োর ইবাদত।
এক প্রানীকে অন্য প্রানীর সামনে কিছুতেই জবাই করা যাবেনা, এটা জবাইয়ের একটা মৌলিক, আবশ্যপূরনীয় শর্ত। অথচ শহরের ফ্ল্যাট বাড়ীর গ্যারেজে, শহরের রাস্তায়, গ্রামের মাঠে একটার সামনে আরেকটাকে শুইয়ে দেয়া হয়,শুধু জবাই না, সম্পূর্ণ গরু বানানোও হয় অন্য প্রানীদের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোরবানি উপলক্ষে গরু পেলে পুষে বানিজ্যিক ভিত্তিতে বড় করা হয়,গরু মোটাতাজাকারী অসৎ ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে বলছি, নির্দিষ্ট সময় পর এদের গরুর ব্যাপারীদের কাছে শহরাঞ্চলের উদ্দ্যেশ্যে বিক্রি করে দেয়া হয়। গরুগুলো বানিজ্যিক ট্রাকে লটে লটে শহরের দিকে যাত্রা শুরু করে,এদেরকে ঠাসাঠাসি করে ট্রাকে তোলা হোয়,নাকের ছিদ্র দিয়ে দড়ি ঢুকিয়ে মুখ শক্ত করে আটকে দেয়া হয় রেলিঙয়ের সাথে, দড়ির দৈর্ঘ্য থাকে ছোট। এই অস্বস্তিকর শারীরিক অবস্থায় শুরু হয় আট-নয় ঘন্টা বা তারো বেশী লম্বা সফর। ঈদের আগে মহাসড়কগুলোয় থাকে তীব্র যানজট,বিশেষ করে শহরগুলোর ঢোকার মুখে,পথে পথে দালালদের সাথে দফারফার সময়ক্ষেপন, আট নয় ঘন্টার যাত্রা বেড়ে কখনো দিন পার হয়ে যায়।
গরু ঘোড়া নয়, সে সারাজীবন দাঁড়িয়ে থাকে না, সে বসে।কিন্তু এই দীর্ঘ যাত্রায় গরুগুলি একবারো বসতে পারেনা,বসতে পারাতো দূরের কথা,ঘাড় নাড়ানোর ন্যুনতম সুযোগও থাকে না। তাদের খাবার জন্য কোন বিরতি দিয়ে সময় বা অর্থের বাড়তি অপচয় করা হয়না। গরুর মাংস রাখার ফ্রিজটা আমরা যতটা যত্ন করে বাসায় আনি, গরুটা কিভাবে আমাদের বাড়ী পর্যন্ত পৌছায় তা নিয়ে কখনোই একটুও ভাবি না!
এক অসহনীয় কষ্টকর যাত্রা শেষে তারা যখন হাটে এসে পৌছায় তখন শুরু হয় কষ্টের দ্বিতীয় ধাপ।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গরুগুলোকে বাঁশের সমান্তরাল খুঁটিতে নাকে দড়ি দিয়ে মুখ উচুঁ করে এক বিশেষ পদ্ধতিতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় যতদিন না বিক্রি হয়ে যায়।এই বিশেষ পদ্ধতিতে দাঁড় করিয়ে রাখলে বিক্রেতাদের কী গরুকে দেখতে বিশেষ সুবিধা হয় কিনা জানা নেই। কিন্তু যেহেতু গরুও একপ্রকার প্রানী তাদেরও শিড়দাড়ায় তীব্র ব্যাথ্যা হবার কথা কিন্তু স্রেফ বোবা বলে কিছু বলতে পারেনা, আমরাতো মানুষ, আমাদের অনুভূতি কখন এতটা বোবা হয়ে গেলো। এ ব্যাপারে একটা প্রাসঙ্গিক হাদীস বলি, রাসূল (সাঃ) বলেন
‘এসব বোবা প্রানীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো,যখন তারা চড়ার মত উপযুক্ত হবে তখন তাদের উপর চড়ো,যখন তাদের বিশ্রামের দরকার হবে বিশ্রাম দাও’। (আবু দাউদ)
দ্রুত বিক্রি হয়ে গেলে এই অমানবিক প্রদর্শনী শেষ হয়ে গেলেও এর পর শুরু হয় আমাদের ইট কাঠের এই অমানবিক শহরে তাদের কষ্টের তৃতীয় ধাপ।
ইউরোপ, আমেরিকার অনুকরনে যে ফ্ল্যাট কালচার আমরা গড়ে তুলেছি তা আমাদের সমাজ-সংস্কারের সাথে বেমানান, এ এমনই অমানবিক সংস্কৃতি যেখানে বাড়িতে অতিথি আসলেও বলে দেয়া হয় অতিথিদের গাড়ি বাইরে রাখতে,ইউরোপ,আমেরিকায় এমন বেয়াদবি মার্কা সাইনবোর্ড কোথাও দেখতে পাবেন না। যেখানে অতিথিদের গাড়ি রাখার জায়গা হয়না সেখানে খড়, গোবরের নোংরা নিয়ে আসা আস্ত গরু একটা আপদ ছাড়া আর কিছু নয়। ফ্ল্যাট কেনার সময় আমরা কখনো কেউ কী ভাবি বছরে একবার কোরবানির মত একটা ওয়াজিব ইবাদত পালন করতে হবে, সে কয়দিন গরুটা, ছাগলটা কোথায় থাকবে, তাকে কোথায় জবাই দেয়া হবে?
খেয়াল করে দেখবেন ঢাকা শহরে এখন আর প্রাকৃতিক পরিষ্কারক কাক দেখতে পাওয়া যায়না,আমাদের ফ্ল্যাট কালচার এত অবৈজ্ঞানিক পরিষ্কার পদ্ধতি ব্যবহার করে যে কাক এই শহর থেকে বিলীন হয়ে গেছে,অথচ নোংরা শহর,অমানবিক শহরের তালিকা করলে এই শহর র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকবে!
যাদের সামর্থ্য নেই তারা অনেকেই হাট থেকে গরু মাইলের পর মাইল হাটিয়ে আনেন, অনেক প্রানীই প্রথমবার শহর দেখে ভড়কে যায়, ছুটে পালাতে চায়, মেরে ধরে এদেরকে সোজা করা হয়। গাড়ী করে আনলেও তার প্রথম যাত্রার কষ্টেরই পুনরাবৃত্তি হয়।এত দীর্ঘ ক্লান্তির পর গ্যারেজের কোনায় কানায় তাদের জায়গা হয়, কখনো হয়ইনা, ফ্ল্যাট সংলগ্ন রাস্তাই সই। কোরবানির দিন পর্যন্ত গ্যারেজের দরজা টানা আর কয়েকশ গাড়ির বিকট শব্দে তাদের দিন পার হয়।
অথচ কিছুদিন আমাদের গাড়ীগুলো আমরা অন্য কোথাও রাখার ব্যবস্থা করতে পারি বা কোরবানির পশুর জন্য কোন মাঠ, গাড়ীতে খড় বিছিয়ে, দড়িটা পর্যাপ্ত পরিমান লম্বা রেখে যাতে প্রানীটা দাঁড়াতে অথবা বসতে পারে এমন ব্যবস্থা করে আনা যায়, ইবাদতের সাথে জড়িত যে ব্যবসায় তার ব্যাপারে মুসলমানদের কী কিছুই করার নেই ?
গ্রামের কোন গৃহস্থের বা খামারের আদরের গরুটার শহরের অমানবিকতার শেষ ধাপটা রচির হয় স্বয়ং পবিত্র কোরবানির দিনে। কিভাবে দিনের পর দিন আমরা স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অমান্য করে আমরা কোরবানির শো অফ বা মাংস খাওয়ার আয়োজন করি তা বলবো এখন!
ইসলাম মতে জবাইয়ের সময় প্রানীটা থাকবে শান্ত, তাকে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি খেতে দিতে হবে,তার পেট থাকবে ভর্তি,তাকে পাল থেকে আলাদা করে আদর করে হাত বুলিয়ে নিয়ে আসতে হবে,মানসিকভাবে যতটা সম্ভব আস্বস্থ করতে হবে।তারপর একটা অতি ধারালো ছুড়ি দিয়ে অভ্যস্ত হাতে একটানে,এক প্রচেষ্টায় জগুলার ভেইন কেটে দিতে হবে।
রাসূল (সাঃ) বলেন,
অবশ্যই আল্লাহ সবকিছুতেই কল্যান রেখেছেন,তাই যখন তোমরা মারবে, সুন্দরভাবে মারবে, যখন জবাই করবে,সুন্দর করে জবাই করবে,তাই তোমাদের প্রত্যেকে ছুরি ধারিয়ে নিবে এবং জবাইয়ের প্রানীকে আরামদায়কভাবে মরতে দিবে!’ (সহিহ মুসলিম,১৯৫৫)
কিন্তু আপনি কি দেশে কোন জবাইয়ের প্রানীকে আরামে মরতে দেখেন?
আমাদের প্রানীরা মৃত্যুর আধঘন্টা, একঘন্টা ধরে ভয়ানক ভীতির মধ্য দিয়ে যায়,ভয়ে তাদের চোখ বের হয়ে আসতে চায়,তাদেরকে কষে দড়ি দিয়ে ভালো করে বাঁধা হয়,হাতে বড় ছুরি নিয়ে লোকেরা তাদের সামনে ঘোরাফেরা করে,অনেকে তাদের সামনে ছুরি ধারায়ও। দড়ি দিয়ে বেঁধে,ছুরি এনে তাদেরকে আসলে কী করা হবে সবই তারা টের পায়,রাসূল (সাঃ) বলেন,
‘তোমরা কি কোন প্রানীকে দুইবার মারতে চাও,একবার তার চোখের সামনে ছুরি ধারিয়ে তো আরেকবার গলা কেটে?” **
এভাবে প্রানীদের মৃত্যুর আগে কয়েক মৃত্যুর কষ্ট দেয়া , মানসিক কষ্ট দেয়া ইসলামে হারাম, স্রেফ হারাম।
গরুর গলায় দড়ি, চার পা শক্ত করে বেঁধে জবাই আমাদের কোরবানির অতি পরিচিত ছবি , অথচ এভাবে জবাইয়ের কোন অনুমতি ইসলাম দেয়না।
এমনকি রক্ত বেরিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত কোনভাবেই কোন প্রানীকে বাঁধা যাবেনা।
(মুসলিম,হাদীস নং ১৯৫৯)
এখন হয়তো বলবেন গরুর চার পা না বেঁধে কিভাবে জবাই দেবো?
প্রানী বড় হলে খুঁটির সাথে শুধু এক পা বাঁধা জায়েজ আছে কিন্তু তাতেও যদি সুবিধা না করতে পারেন তাহলে প্রশ্ন হলো আমাদের গরুই জবাই দিতে হয় কেন, ঈদুল আযহা গরুর কোরবানির ঈদেই পরিনত হলো কেন, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও এই ভূখণ্ডের মানুষ এত গরু কোরবানি দিতো না, এটা জবাই দিলে বেশী সোয়াব তাও নয়, এটা একটা নব্য ট্রেন্ড। ছাগল বা ভেড়া খুব সহজেই না বেঁধেই জবাই দেয়া যায়,সাইজে ছোট হওয়ায় এদের পরিবহনে এরা কম কষ্ট পায়, এতে সুন্নত মানা সহজ হয়,কোরবানির হক আদায় হয়। আমরা গরুই কেন কোরবানি দেই এর পেছনে অনেকে রাজনৈতিক কারন আনলেও মূল কারন নিহিত থাকে আমরা কেন ঈদের আগেই কেন নতুন ফ্রিজ, ডিপ ফ্রিজ কিনি, ছাগল, ভেড়ার মাংস নিশ্চয় একটা আস্ত ডিপ ফ্রিজ ভরাতে পারেনা। এভাবে সামাজিক মর্যাদা, ফ্রিজ ভর্তির জন্য কোরবানি দেয়া কতটা ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
একবার এক সাহাবী ভেড়া জবাই করতে যেয়ে মায়া বশত না জবাই করেই চলে আসলেন,এসে রাসূল (সাঃ)কে জবাই না করার কারনটা খুলে বললেন। রাসূল (সাঃ) দুবার তাঁকে বললেন, ‘তুমি আল্লাহর প্রানীর প্রতি দয়া দেখিয়েছো,আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া দেখাবেন’।
জবাই করাও শিখতে হয়,এটা জন্মগত কিছু না।একটানে এক প্রচেষ্টায় প্রানী জবাই করতে হয়, কিন্তু দেখা যায় অনেকে ঈদের দিনই প্রথম জবাই চেষ্টা করতে যান, কোন প্রশিক্ষণ না কিছু না। আমার এক প্রতিবেশী এক বার গরুর গলার তিন জায়গায় তিন পোঁচ দিয়ে গরু জবাই করেছিলেন, বুঝতেই পারছিলেন না,কোথায় পোঁচটা দিবেন, গরুকে শুইয়ে রেখে, তার উপর ডজনখানেক লোক বসিয়ে, দুই জায়গার রক্ত বের করে শলা পরামর্শ করে সিদ্বান্ত নিচ্ছিলেন ঠিক কোথায় কাটতে হবে, সময় লেগেছিলো প্রায় দশ মিনিট, সুবাহানাল্লাহ, এক জীবনে পবিত্র কোরবানির নামে কত বীভৎসতা দেখেছি! ওনেকেই জগুলার ভেইন ও স্পাইনাল কর্ডের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনা, স্পাইনাল কর্ড কেটে দিলে প্রানীটার মারাত্নক কষ্ট হয় এবং এটা হারামও। ভুল ধমনী কেটে দিলে ঠিকমত রক্ত বেরিয়ে যাবেনা, মৃত্যু হতে দেরী হয়, প্রানীটা কষ্ট পায়। জবাইয়ের আগে যারা অভিজ্ঞ, যারা জানেন তাদের থেকে একটু জানাশোনা, পড়াশোনা করতে হবে না?
এক প্রানীকে অন্য প্রানীর সামনে কিছুতেই জবাই করা যাবেনা, এটা জবাইয়ের একটা মৌলিক, আবশ্যপূরনীয় শর্ত। অথচ শহরের ফ্ল্যাট বাড়ীর গ্যারেজে, শহরের রাস্তায়, গ্রামের মাঠে একটার সামনে আরেকটাকে শুইয়ে দেয়া হয়,শুধু জবাই না, সম্পূর্ণ গরু বানানোও হয় অন্য প্রানীদের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে।
প্রানী অধিকার রক্ষা করার জায়গা ও সময় কিছুই আমাদের নেই, অর্থের গরীব আমরা নই,গরুটা অনেক দাম দিয়েই কেনা হয়, ফ্ল্যাটখানাও দামী, এই দৈন্যতা অন্তরের, ইসলাম না মানতে মানতে অন্তর কঠিন হয়ে যাবার।
নিজেদের অন্তর ইস্পাত কঠিন হয়ে গেছে আমরা এজন্য চিন্তিত না,আমরা আছি জবাইয়ের ছবি ফেসবুকে দিয়ে নাস্তিকদের সাথে যুদ্ধে! এক কোরবানির ঈদ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহমানের সাথে সংহতি জানিয়ে ফিড রক্তের ছবি দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছেন,আমি নাস্তিক নই কিন্তু আমি দেখে কষ্ট পেয়েছি,আমার মত আরো অনেকে কষ্ট পেয়েছে, এটা ইসলাম না।যে বা যারা এভাবে ছবি শেয়ার করেন তারা নিশ্চিত আপনাদের কোরবানিটা আদৌ হয়েছে,এত অহংকার কিসের?
শুধু যে কোরবানির সময় নয় জবাইয়ের এই অন্যায় চলে সারা বছর ধরে,শুধু দেশে না,দুনিয়া জুড়ে।আমরা সারা বছর ধরে যত প্রানীজ মাংস খাই তার ৯৯ শতাংশই চূড়ান্ত কষ্ট দিয়েই জবাই করা,শহরের সমস্ত দোকান, ভ্যানে এক মুরগীর সামনেই আরেক মুরগী জবাই ও ছিলা হয়,গর্ভবতী গরু, ছাগল দেদারসে জবাই হয়, আগে পা ভেঙ্গে দিয়ে পরে আরাম করে জবাই করা হয় তবু কোরবানি নিয়েই লিখলাম কেন? ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমি জবাই করতে হয় এমন প্রানীজ আর কিছুই খাই না, হালাল খাবারের উছিলায় আর হারাম জবাই প্রমোট করিনা ।
ইবরাহীম (আঃ)র কলিজার টুকরো ইসমাইল (আঃ)র প্রাণের একটা দুম্বা কোরবানি হয়েছিলো, রাসূল (সাঃ)র পিতা আব্দুল্লাহর প্রাণের বদলে একশ দুম্বা কোরবানি হয়েছিলো, বড় আদরের ব্যক্তিদের বদলে এই অবলা প্রানীগুলো জবাই হয়েছিলো, সেই স্মৃতির সম্মানে, দয়াময় আল্লাহর উদ্দ্যেশ্যে, আ্মার ওয়াজিব ইবাদতের জন্য একটা প্রানী পরিবহন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কত কষ্ট পায় তার কোন দায় কী আমাদের নেই? কোরবানি কেউ নাস্তিক হয়ে গেলে উপহাস করেন কেন, একজন বিশ্বাসীরতো বরং এতে কষ্ট পাওয়ার কথা, আপনারা ইসলামের সৌন্দর্য তাদের সামনে তুলে ধরতে পারেননি!
যে নিষ্ঠুরভাবে আমরা কোরবানি দিই তাতে নাস্তিক কেন স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সাঃ) দুঃখ করতেন, আমাদের মুসলমানদের দুঃখ হয় কী!
** হাদীসটি শিয়া সূত্রের, তবে সুন্নী শাখা মতে জবাইয়ের স্থানে পশুকে টেনেহিঁছড়ে নিয়ে যাওয়া, শোয়ানোর পর জবাই করতে দেরি করা, পশুর সামনে ছুরি ধারানো মাকরুহ। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৪/৮১)
আমি কোনও ধর্মে বিশ্বাস করি না কারণ এই বিখ্যাত ত্যাগটি অত্যন্ত রক্তাক্ত, আল্লাহ এই দরিদ্র প্রাণীদের উপর নির্যাতন বা হত্যা করার জন্য মানুষকে পাঠান না, দুঃখের বিষয় যে তারা আজকাল পশুর কষ্ট উপভোগ করার জন্য এদেরকে ধরেছে, মানব এর কোনও মানবিকতা নেই, ঈশ্বর তাঁর পুরানো গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে একজন লোক ছিলেন যার কাছে তিনি তাঁর বৃদ্ধ বয়সে একটি পুত্রকে দিয়েছিলেন এবং তারপরে তাকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে যেটিকে মান্য করেছিলেন বলিদান করার জন্য জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং যখন তিনি পুত্রকে হত্যা করতে চলেছিলেন তখন তিনি তাকে প্রেরণ করেছিলেন একটি মেষ যাতে এটি উত্সর্গ করতে পারে, এবং সেখান থেকে আমি শুনিনি যে ঈশ্বর ভয়ঙ্কর প্রাণীদের হত্যা করার জন্য তিন বা এক সপ্তাহের পার্টি করার জন্য আমাদের পশুদের বলি দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন এবং তারাও জানেন না যে প্রাণীরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে কারণ তারা পাস করেনি কোনও স্যানিটারি নিয়ন্ত্রণ নেই তবে আমি একমত নই যে তারা ধর্মের কারণেও এগুলি করেছে এবং একদল পুরুষকে একটি গরুকে কুড়াল বা কুঁচি মারতে দেখে এই চিত্রগুলি নিষ্ঠুর হয় এবং ঈশ্বর তাদের গ্রহণ করেন না এবং যেহেতু প্রাণীগুলি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়
পৃথিবীর বাস্তবতার নিরিখে আপনি পশু হত্যা না করে পারবেন না, নানাকারনে এটা চলবেই! প্রতিটি মৃত্যুই একটি কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায় হোক সে মানুষ বা পশু কিন্তু ইসলাম যেভাবে বলেছে সেভাবে জবাই করলে পশু অনেক কম কষ্টে মারা যাবে, সে লক্ষ্যেই কাজ করছি! আপনাকে ধন্যবাদ!