:: খুলনা প্রতিনিধি ::
খুলনার রূপসা উপজেলার সালাম জুট মিলের পাট গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর ১৬টি ইউনিট কাজ করছে।
বুধবার বিকেল ৫টা ৩৮ মিনিটে আগুন দিকে রূপসার জাবুসা চৌরাস্তা মোড় এলাকায় অবস্থিত সালাম জুট মিল এর ৩নং গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পাশের আরও দুটি গুদামে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কর্মরত শ্রমিকরা ভয়ে গুদাম থেকে বেরিয়ে আসেন।
আগুন লাগার ৪ ঘণ্টার বেশি সময় পার হলেও তা নিয়ন্ত্রণে আসেনি
ফায়ার সার্ভিস জানায়, বিকেলে পাটকলের বাইরে থেকে আগুনের কুণ্ডলী দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। একইসঙ্গে স্থানীয়ভাবেও আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলতে থাকে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিকেলে প্রথমে রূপসা ও পরে টুটপাড়া ফায়ার স্টেশন থেকে চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। আগুন ছড়িয়ে পড়লে খুলনার বিভিন্ন স্টেশন থেকে মোট ১১টি ইউনিট যোগ দেয়। এ ছাড়া নৌবাহিনীর ফায়ার ইউনিটও আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। তবে এখনো আগুন লাগার কারণ এবং হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া পানি সংকটের কারণে আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আরও সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে বাংলাদেশ নৌবাহিনীও যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা -ইউএনও কোহিনুর জাহান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। পাশাপাশি নৌবাহিনীর ফায়ার টিমও কাজ করছে। আগুনের তীব্রতা অনেক বেশি, নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগতে পারে। ঘটনাস্থলে আমাদের কর্মকর্তা ও পুলিশ রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (খুলনা) ফারুক হোসেন শিকদার বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের খুলনার বয়রা, টুটপাড়া, রূপসা ও বাগেরহাটের ফকিরহাট থেকে ১৪টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে। নৌবাহিনীর ২টি ইউনিটও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। তারা আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
খুলনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফিন্সের উপ-পরিচালক মামুন মাহমুদ জানান, একই সঙ্গে কয়েকটি গোডাউনে আগুন লাগায় নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
সালাম জুট মিল এর ম্যানেজার বশির আহম্মেদ বলেন, ‘৩ নম্বর গুদামে অবস্থিত ১টি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শর্টসার্কিট হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা ঘটে। অল্প সময়ের মধ্যে ২ নম্বর এবং ১ নম্বর গুদামেও অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে।’
প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এম এম এ সালাম সাংবাদিকদের বলেন, ৩টি গুদামে উৎপাদিত পণ্য ছিল ৭৫০ টন যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং কাঁচাপাট ছিল ১৩০০ টন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ কোটি। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, বিকেল সোয়া ৫টার দিকে হঠাৎ করে সালাম জুট মিলে আগুন লাগে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা।
আজাদ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আসরের নামাজ পড়ে বেরিয়ে দেখি সালাম জুট মিলে আগুনের ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। মসজিদের মুসল্লি ও স্থানীয়রা দৌড়ে এসে দেখে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আসার আগেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।