:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৭টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার অনেক বেশি। এর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে ঋণ খেলাপির হার ৮২ দশমিক ৬১ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, এবি ব্যাংকের ১৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ শতাংশ আর রূপালীর ১৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এই চারটি ব্যাংক বাদ দিলে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ওয়ান, উত্তরা ও আইএফআইসি ব্যাংকের।
ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকের ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং আইএফআইসি ব্যাংকের ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই সাতটি ব্যাংক বাদ দিলে তালিকাভুক্ত বাকি ২৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় কিছুটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে। এই ব্যাংকগুলোর গড় খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে আটটি ব্যাংকে খেলাপির হার বিতরণ করা ঋণের ৩-৪ শতাংশের মধ্যে, ১২টি ব্যাংকের ৪-৫ শতাংশের মধ্যে, চারটি ব্যাংকের খেলাপির হার ৫-৬ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। আর একটি ব্যাংকের খেলাপির হার ৬-৭ শতাংশের মধ্যে এবং আর একটি ব্যাংকের খেলাপির হার ২-৩ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। যদিও ৩৩ ব্যাংকের গড় খেলাপির হার ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তবে যেসব ব্যাংক পুঁজিবাজারে নেই, সেগুলোর গড় খেলাপির হার এর চেয়েও প্রায় তিন গুণ বেশি।
জুন পর্যন্ত পুঁজিবাজারের এই ৩৩টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫৬ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৪৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে সাতটি ব্যাংক বাদ দিলে খেলাপি ঋণের পরিমাণও অনেক কমে যাবে। কেননা এই সাতটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণই ২৭ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। এই সাত ব্যাংকের গড় খেলাপির হার ২৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন’২২ শেষে দেশে খেলাপি ঋণের নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। অলোচ্য সময়ে ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
জানা গেছে, করোনার মধ্যে ব্যাংকগুলোকে বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলেও খেলাপি না করার নির্দেশনা ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল এই নির্দেশনার কারণে খেলাপি ঋণ কমে আসবে ব্যাংকের। কিন্তু ঘটেছে উল্টোটা। এই সময়ে বেড়ে গেছে ঋণ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে কোনো কোনো ব্যাংকের কমেছেও। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক খেলাপি ঋণের দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরও ঋণ পরিশোধ করছে না দেশের ব্যবসায়ীরা। ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছেই খেলাপি ঋণ।
করোনার কারণে গেল দুই বছর আরো সুবিধা পেয়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত করে রাখা হয়েছে ওই সময়ের ঋণকে। এসব ঋণকে খেলাপির পরিমাপে আনলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে।