:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আলজাজিরা গাজায় সাংবাদিকদের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলের হামলায় নিহত সাংবাদিকরা হলেন- সাংবাদিক মুস্তফা আল-সাওয়াফ, আলোকচিত্রী মুসাব আশৌর, আল-আকসা টেলিভিশনের প্রকৌশলী আমর আবু হায়া, আল-আকসা টেলিভিশনের প্রশাসক আব্দু আলহালিম আওয়াদ।
রোববার সকালে আলজাজিরার প্রতিবেদনে গাজা উপত্যকার বুরেইজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের বোমা হামলায় দুই সাংবাদিকের প্রাণহানির তথ্য জানানো হয়। নিহত দুই সাংবাদিকই কুদস নিউজে কর্মরত ছিলেন। তারা হলেন সাংবাদিক সারি মনসুর ও হাসুনেহ সেলিম।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) শনিবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত (১৮ নভেম্বর) ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪২ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহত সাংবাদিকদের বেশিরভাগই ফিলিস্তিনি। এছাড়া ইসরায়েল ও লেবাননিজ সাংবাদিকও চলমান এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন।
১৯৯২ সাল থেকে সংঘাতে দায়িত্বপালনের সময় হতাহত সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ ও পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক এই সংগঠন। তারা বলেছে, সংঘাতে হতাহত সাংবাদিকদের পরিসংখ্যান প্রকাশের সময় থেকে এখন পর্যন্ত যেকোনো সংঘাতের প্রথম এক মাসে সর্বোচ্চসংখ্যক সাংবাদিকের প্রাণহানির রেকর্ড হয়েছে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের আন্তঃসীমান্ত আক্রমণের পর থেকে হাসপাতাল, বাসস্থান এবং উপাসনালয়সহ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থাপনায় টানা বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তাদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু।
আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলিদের প্রাণহানি এক হাজার ২০০ জনে পৌঁছেছে বলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে। যদিও প্রথমে হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছিল ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরের আল আমাল হাসপাতালে বিদ্যুৎ এবং পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গত ৬ দিন ধরে ওই হাসপাতালটি পানি এবং বিদ্যুৎ ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
পুরো গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে সেখানকার বেশিরভাগ হাসপাতালেই খাবার, পানি, জ্বালানি এবং ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বেশির ভাগ হাসপাতালের কার্যক্রমই বন্ধ হয়ে গেছে।
অপরদিকে উত্তর গাজার পর এবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহর ছাড়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর আগে গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী স্থল অভিযান শুরু করার পর লাখ লাখ মানুষ সেখান থেকে পালিয়ে খান ইউনিসে আশ্রয় নেন। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন নিদের্শনার ফলে দক্ষিণাঞ্চল থেকেও লোকজনকে সরে যেতে হচ্ছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসকে একেবারে নির্মূল করে ফেলাই হচ্ছে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১২০০ মানুষের মৃত্যু হওয়ার পর পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচ হাজারই শিশু।
শনিবার খান ইউনিসের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ওই ঘটনার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। কিন্তু খান ইউনিসে লিফলেট বিতরণ করেছে ইসরায়েল। সেখানকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
