:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
কাতারের মধ্যস্থতায় অনেক নাটকীয়তার পর গাজায় শুরু হয়েছে বহুল আলোচিত যুদ্ধবিরতি। আগামী চার দিন চলবে এই যুদ্ধবিরতি। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৭টায় এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
প্রায় সাত সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধে এই প্রথম যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলো। এই যুদ্ধবিরতিতে হামাস ১৩ জন ইসরায়েলি নারী ও শিশু জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিপরীতে প্রায় ৪০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু বন্দীকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল।
দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, যেসব জিম্মি একই পরিবারের, তাদের একসঙ্গে রাখা হবে। জিম্মিদশা থেকে মুক্তি দিতে প্রতিদিন বেশ কিছু বেসামরিক নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। চার দিনের মধ্যে ৫০ জন ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ মুখপাত্র আরও বলেন, বুধবার থেকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যেভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছিল, বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত মিশর ও দোহায় উপস্থিত পক্ষগুলোর সঙ্গে সেভাবেই সমন্বয় করা হয়েছে। সভাগুলো খুব ভালো ও ইতিবাচক পরিবেশে হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, অবশ্যই ফলটি ছিল চুক্তি বাস্তবায়ন পরিকল্পনার অংশ। আমরা সবসময় বলেছি-এমন কিছু হওয়া দরকার, যা কংক্রিট এবং জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে প্রস্তুত।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার দিনের এই যুদ্ধবিরতিতে বন্দিবিনিময় ছাড়াও গাজায় মানবিক সহায়তাসহ কয়েক শ ট্রাক প্রবেশ করার কথা রয়েছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জুদ্দিন আল-কাসেম ব্রিগেডস এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়েছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে হামাস বা ইসরায়েল এই বিরতির কথা ঘোষণা না করলেও রয়টার্সের গাজা সংবাদদাতা ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
রয়টার্সের গাজা সংবাদদাতা উত্তর গাজা থেকে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির সময় শুরু হওয়ার পর থেকেই গাজার আকাশে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর আনাগোনা বা কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে। বিপরীতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকেও কোনো রকেট ছোড়া হয়েছে এমন কোনো লক্ষণও দেখা যায়নি। লেবাননভিত্তিক আল-মায়াদিন টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনেও একই কথা বলা হয়েছে।
হামাসের সশস্ত্র গোষ্ঠী ইজ্জুদ্দিন আল-কাসেম ব্রিগেডস জানিয়েছিল, গাজার স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার আল-কাসেম ব্রিগেডস জানিয়েছে, চার দিনের এই যুদ্ধবিরতিতে আল-কাসেম ব্রিগেডস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই অস্ত্র সংবরণ করবে।
আল-কাসেম ব্রিগেডস জানিয়েছে, হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলের ১৯ বছরের কম বয়সী বন্দী, নারী ও শিশুদের মুক্তি দেওয়া হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, প্রত্যেক ইসরায়েলির জন্য নারী, শিশুসহ তিনজন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া, প্রতিদিন ২০০ ট্রাক চিকিৎসা এবং ৪ ট্রাক জ্বালানি ও রান্নার গ্যাস আনা হবে গাজায়।
এদিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির সময় ঘনিয়ে এলেও ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এই হামলায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৮৫৪। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ১৫০ জন শিশু এবং ৪ হাজার নারী। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও অন্তত ৩৬ হাজার। নিহতদের তালিকায় ৭ হাজার জনকে গণনা করা হয়নি। এই ৭ হাজার জনের সবাই এখনো নিখোঁজ আর না হয় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। এদের মধ্যে আবার ৪ হাজার ৭০০ জনই শিশু।
যুদ্ধবিরতি পর আরও ২ মাস তীব্র লড়াইয়ের ঘোষণা ইসরায়েলের
সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আরও অন্তত ২ মাস তীব্র লড়াই চালিয়ে যাবে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি নৌসেনাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এ কথা জানান।
সৈনিকদের উদ্দেশে গ্যালান্ত বলেছেন বিশ্রাম নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শিগগিরই আবার মাঠে নামতে হবে। হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই এখনো শেষ হয়নি। এই বিরতি সাময়িক সময়ের জন্য মাত্র।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাওয়ার পরপরই ইসরায়েলের সশস্ত্রবাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে আরও অন্তত দুই মাস তীব্র লড়াই চালিয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনে প্রথম যে বিষয়টি আপনার দেখবেন তা হলো—জিম্মিদের মুক্তি। তবে বিষয়টি নিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ নেই। এটি কেবলই সাময়িক বিরতি।’
ইসরায়েলি নৌবাহিনীর বিশেষ অভিযান পরিচালনাকারী ইউনিটের উদ্দেশে দেওয়া ওই ভাষণে গ্যালান্ত বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতির সময়ে নিজেরা আবারও সুসংগঠিত হন, বোঝাপড়া তৈরি করুন, অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হন এবং হামলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই অভিযান চলতে থাকবে। কারণ আমাদের জয় ছিনিয়ে আনতে হবে এবং বাকি জিম্মিদের মুক্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ তাদের কেবল (হামাসের ওপর) চাপ প্রয়োগের মাধ্যমেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
এ সময়ই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন যে, যুদ্ধ আরও অন্তত ২ মাস চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশার করছি আমাদের আরও দুই মাস যুদ্ধ করতে হবে।’