:: মঈনুল সানু ::
-আমার সাথে আপনার রিকশায় যেতে এত আপত্তি কেন?
-তখন গায়ে গা লাগবে।
-লাগলে লাগবে। আমার আপত্তি নেই।
-আমার আছে।
-কেন?
-সুশ্রী কোন মেয়ের সাথে গা ঘেঁষে বসলে আমার গরম লাগে, লম্পট হতে ইচ্ছে করে।
-আপনি নিজেকে কি ভাবেন? হুঁ?
-বদমাশ।
-প্লিজ, চলুন না?
-স্যরি।
রিমা হনহন করে চলে গেল।
আমি কিছু না বলে সিগারেট ধরিয়ে বিড়বিড় করে বললাম, কে হায় অযথা চুলকায়ে ক্ষত বানাতে চায়!
অনেকদিন নিজের মতো ঘুরে বেড়িয়ে একরকম ক্লান্ত হয়ে জীবনের প্রতি একরাশ বিরক্তি নিয়ে ছোটো খালার বাসায় উঠেছিলাম,উদ্দেশ্য রাজশাহীতে বেশ কিছুদিন থাকব। দুইবেলা খেতে পাব অথচ বাজার করার চিন্তা নেই ভবঘুরে জীবনে এর চেয়ে বেশি সুবিধে আর কি হতে পারে?
বাড়তি পাওনা হিসেবে পেলাম, রিমাকে। মুখোমুখি ফ্ল্যাটে আপাদমস্তক এক অপ্সরা। মনে মনে বললাম, চাই! চাই মানে মনের মধ্যে চাই, চোখের আলোয় চাই, শরীরের উত্তাপেও চাই। এত চাওয়ার মধ্যে যেটুকু পাই তা হলো শেষ বিকেলের নরম আলোয় বাসার ছাদে।
চোখে চোখ পড়ে, হাসি বিনিময় হয়।
কোন এক নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়-
অযুহাতে কথা বাড়ে, সখ্যতা গড়ে উঠে।
ভবঘুরে জীবন সংসারে বাধা পড়তে চায়, প্রবল আবেগে- আন্তরিক বিশ্বাসে।
অল্প কয়েকদিনের পরিচয়েই রিমা জায়গা করে নিল আমার সারাদিনমান। নির্ঘুম রাত জুড়ে স্বপ্নগুলো কেমন দলা পাকিয়ে উঠছিল বারবার। স্নায়বিক উত্তেজনায় আমার এক একটা দিনের আকর্ষণ হয়ে উঠছিল, শেষ বিকেল, নরম আলো।
কথা হলো রিমা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখাবে, পদ্মার পাড়ে দুজন বসব পাশাপাশি, এক শরতে আবার দেখা হবে দুজনে!
সেই কথার রেশ কাটতে না কাটতেই দেখলাম রিমাকে, সাহেব বাজারে অটো রিকশায় এক সুদর্শন যুবকের সাথে ঘা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে আছে, গল্প করছে-আহ্লাদে ফেঁটে পড়ছে।
সেই পুরনো কষ্ট,বুকের মধ্যে অতি পরিচিত চিনচিন ব্যথা। তারপর দুইদিন শেষ বিকেলে ছাদে যাইনি,রিমা ভার্সিটি যাওয়ার পথে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকিনি, আড়চোখে তাকায়নি মুখোমুখি ফ্ল্যাটের ব্যালকোনিতে।
আজ পদ্মার পাড়ে একা দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম।
অচেনা অজানা এই শহরটার বুক থেকে কিছু দুখের ভার নিয়ে পরদিন বিদায় হবো বলে….!
কোথা থেকে রিমা এলো জানি না।
রিকশা দাঁড় করিয়ে আমাকে কোথাও নিয়ে যাবে বলে।
আমার তীব্র আপত্তির কারণে রিমা অভিমান নিয়ে চলে গেলো।
পুরুষের আহবান নারী উপেক্ষা করে গেছে চিরদিন, অথচ একজন নারী সে যেমনই হোক কোন পুরুষকে বার বার ডাকলে, পথ আগলে দাঁড়ালে তাকে শেষ অবধি সাড়া দিতেই হয়।
পদ্মার পাড় হতে ফিরে এসে শুয়ে ছিলাম, অবেলায়।
একাকী নিজের সাথে নিজে অন্ধকারে, নিস্তব্দ সন্ধ্যায়।।
রিমা ফোন করে যাচ্ছে, এত উপেক্ষা দেখাবার শক্তি আমার কোথায়?
বেচারা অরণ্য, আমি নিজে।
-ফোন ধরছেন না কেন?
-ইচ্ছে করে।
-বিকেলে বড্ড বাজে ব্যবহার করেছেন?
-জি
-কেন? হঠাৎ এসবের মানে কী?
-আকাশে বিদ্যুৎ চমকায় হঠাৎ, ভূমিকম্প হয় হঠাৎ।
হঠাৎ হঠাৎ মানুষগুলোও বদলে যায়, আকাশের মতো,ভেসে বেড়ানো মেঘেদের মতো!
-তবে আর বিরক্ত করব না। তবে একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে খুব।
-কী?
– ঝড় শুরু হলে পূর্বাভাস পাওয়া যায় আগে থেকে,মানুষগুলো বদলে গেলে তার কারণ জানা যায় কি?
-কাল চলে যাচ্ছি।
ফোন রেখে দিলাম।
মাঝেমাঝে নিজেকে কষ্ট দিতে মন্দ লাগে না।
লাইট অন করে, ঘরের দেয়ালে চোখ রাখতেই
কেমন ঝাপসা হয়ে এলো দৃষ্টি!
কতদিন পর, আজ আবার, নিংড়ে দেয়া হৃদয় নির্মল
অরণ্যের চোখে জল!
রাতে খেতে বসে খালাকে বললাম, অনেকদিন তো হলো। ঢাকায় ফিরতে হবে, কাল।
-উঁহু,না। হবে না। থাক আরো কিছু দিন।
-যেতে হবে এবার।
-তুই বললেই তো হবে না।
– কেন? আর কী দরকার?
– খেয়া তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। যাকগে বলেই দেই ও আসছে পরের শুক্রবার। ওর বরের ছুটি নেই, ও একাই আসছে দু মাসের জন্য।
খেয়া ছোট খালার একমাত্র মেয়ে, বিয়ের পর প্রবাসী বরের সাথে ইতালি থাকছে দু বছর হলো।
আমরা সমবয়সী।
আমি জানি, খেয়া বড্ড অভিমানী।
যদি এখন চলে যাই, ও হয়তো কথাই ছেড়ে দিবে আমার সাথে।
অগত্যা থেকে যেতে হলো।
নিজেকে লুকিয়ে রাখলাম দুই দিন, বদ্ধ ঘরে।
খেয়া যেদিন আসবে তার একদিন আগে খালা খালু দুজনেই ব্যস্ত, বাসায় নেই কেউ।
রাজশাহীতে হালকা শীত পড়েছে, তবু সেদিন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল সকাল থেকেই। কম্বল মোড়া দিয়ে শুয়ে আছি বিছানায়। দরজায় কেউ নক করল, রিমা?
হ্যাঁ, রিমাই!
-আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে এলাম।
-আমি এখনো রাজশাহীতে,আপনি জানেন কি করে?
-আন্টিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।ফোন তো অফ করে রেখেছেন, ভাল!
-কি জানতে এসেছেন?
-আমার কথা হঠাৎ আপনার গার্লফ্রেন্ডকে বলে কি বিপদে পড়ে গেছেন? কঠিন নিষেধাজ্ঞায় পড়ে গেছেন এখন, এমন কিছু।
-জি না।
-তবে।
-প্রথম দিন আপনাকে দেখে মনে হয়েছিল আপাদমস্তক অপ্সরা, পরে জানতে পারলুম আপাদমস্তক ব্যথাও!তাই এড়িয়ে যাচ্ছি, নিজের অবাধ্য হয়ে।
-কিন্তু বারবার আমার যে আয়না দেখার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সে কি জানেন?
-যখন মানুষ আয়না দেখে তখন কেবল তার নিজের বাইরেরটাই দেখে, ভেতরেরটা একবারও না।
-আচ্ছা! ভেতরে কী তবে?
-সাহেব বাজার, অটো রিকশা, সেই সুদর্শন যুবক।
-ও! আচ্ছা!! এই কথা??
কোন নারী একবার হৃদয় দিয়ে ফের প্রেমে পড়ে গেছে অন্য কারো, এক অচেনা আগন্তুকের! কি বলবেন তাকে? অপরাধবোধ কাজ করে না তবু এতটুকুন! ভাল তো কাউকে লেগে যেতেই পারে, হুট করে।
বলবেন তো এ পাপ? তবে শুনে রাখুন, কিছু পাপ সুন্দর বটে! যে পাপ নতুন করে স্বপ্ন দেখায়, বেঁচে থাকাকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। এ পাপ পাপই নয়, এ জীবন!
রিমা কথাগুলো বলে গেল দ্রুত, আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে ওর চোখে চেয়ে রইলুম!
রিমা বলল, সেদিন যে ছেলেটির সাথে আমাকে দেখেছেন ওর নাম এহসান। একদিন বড্ড বেশি ভালবেসেছিলাম ওকে, মাঝমাঝে দ্বিধায় পড়ে যাই এখনো কি বাসি? আগের মতন, অতটাই?
আমি তখন ইউনিভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে, এহসান মাস্টার্স করছে। প্রথমে ভালো লাগা দুজনকে দুজনার, তারপর প্রেম। এহসানের হাতে সময় ছিল মাত্র এক বছর, আমার সবে শুরু। তবু ইউনিভার্সিটির মাস্টার্সের এক বছর মানে আঠারো মাসে বছর, দীর্ঘসূত্রিতা! এই সময়ের মধ্যেই জমে উঠলো আমাদের প্রেম, একদিন তা কান্নার জলে গলে পড়বে বলে- সূর্যের তাপে বরফ যেমন গলে।
-তারপর?
সুখের সময় দ্রুত ফুরায়, সে আর নতুন কি? দেখতে দেখতে এহসানের মাস্টার্স শেষ হলো, ও চাকুরী পেয়ে ঢাকায় শিফট হলো। আমাদের মাঝে যোগাযোগ থাকল তবু, দেখা হতো মাসে একবার। ও রাজশাহী আসত, আমরা ঘুরে বেড়াতাম।
-হু। তারপর?
একবার রাজশাহীতে এসে আমার সামনে সে কি কান্না! বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদছিল ও।এত বড় একটা ছেলে। পথে কত মানুষজন, তাকাচ্ছিল সবাই আড়চোখে! জানতে চাইলাম, কি হয়েছে?
বলল, অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওর বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছে। ঘটনা যা খুলে বলল, যদি সত্যি হয় এহসানকে দোষ দেয়া যায় না মোটেও।
এখনো, এই সময়ে এসে, কি করে বাবা মা ছেলেকে চাঁপিয়ে দিতে পারে,এহসান তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
-হুঁ, বুঝলাম।
না বুঝেননি, এখনো ভুলটাই বুঝেছেন। তারপর বেশ কদিন কান্নাকাটি করলাম,কখনো বালিশে মুখ গুঁজে, কখনো গুমরে গুমরে। পরে মেনে নিলাম, অন্য সবার মতো-নিতে হয় বলে। কিন্তু হৃদয়ে শুন্যতা আসুক, আমি বা এহসান তা চাই নি। আর তাই ওর প্রতি অভিযোগ নয়, ও মাঝে মাঝে ই আসে। আমরা দেখা করি, আন্তরিকভাবেই মিশি, বন্ধুর মতোন।
এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছে এহসান, দাম্পত্য জীবনে খুব সুখী মানুষ।
তবু আসে রাজশাহীতে, আমার প্রতি ওর দায়বদ্ধতা থেকে, আমার মনে শুন্যতা আসতে দিবে না বলে।
-ও! আচ্ছা।
-আপনাকে কিছু বলার আছে আমার।
-বলুন।
-মানুষ বড্ড বেশি স্বার্থপর! নিজেকে একটুখানি ভাল রাখতে এহসানকে মাসে অন্তত একদিনের জন্যে হলেও ওর স্ত্রীর কাছ থেকে চুরি করে নেই।কয়েকদিনের দেখায় আপনাকেও ভাল লেগে গেল, বারবার আয়না দেখার কারণ হয়ে দাঁড়ালেন। জানেন তো? প্রেমে পড়লে মানুষ বারবার আয়না দেখে, নিজের চেহারায় লুকানো লাবণ্য খুঁজে ফিরে।
আমাকে খুব খারাপ ভাবতেই পারেন, কিন্তু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার তো আমারও আছে। তাই নয় কি?
-জি, আছে।
-যেদিন আপনাকে প্রথম দেখি, সেদিনই ভাল লেগে গেল। তারপর আপনি ডাকলেন, আমি সাড়া দিলাম।
দুজন মানুষই আন্তরিক থাকলে বুঝা যায়, দুজনেরই কিছু চাওয়ার আছে, দুজনার কাছে।
হঠাৎ এড়িয়ে গেলেন, আমাকে। আজ জানলাম, সেই চোখের দেখাটাকেই বড় করে তুলেছেন। আমার নতুন করে বলার নেই কিছুই, যদি হৃদয়ের বিশুদ্ধতা দাবি করেন, বলব নেই। তবু আমি জানি, নিজেকে ভাল রাখার অধিকার আছে আমার, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার।
আমি এও জানি না কি করেন আপনি, যতবার জিজ্ঞেস করেছি সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন, তবু ভালবেসে ফেলেছি, এও বুঝে গেছি আমার কারণে আপনার হৃদয়েও কিছুটা ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। কি করব বলুন? সমস্ত দায়ভার আমারই,ক্ষমা করুন ; মার্জনা করুন।
চোখে জল নিয়ে রিমা আমার রুম থেকে দ্রুত চলে গেল। আমি নির্বাক, খাটের ওপর বসে রইলাম।
পরদিন খেয়া এলো, শুধু খেয়াই এলো না সাথে নিয়ে এলো সেই ছেলেবেলার স্মৃতি। দুদিন গেলো,খেয়ার সাথে গল্প আড্ডায়। কিন্তু বারবার রিমার কথাই মনে হচ্ছিল, উঁকি দিচ্ছিলাম বেলকুনিতে,নেই!
খেয়া সেই ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে আমাকে লজ্জা দিচ্ছিল বার বার! আমরা তখন খুব ছোট,তবু বিটিভিতে নাটক দেখে খেলাচ্ছলে দুজনেই নায়ক নায়িকার অনুকরণ করি। সেই সব পুরনো কথা! সত্যিই খেয়া পারে!
সেদিন পদ্মার পাড়ে সন্ধ্যার কিছু আগে, আমি ও খেয়া দুজনে হেঁটে হেঁটে অনেকটা দূরে;সারি সারি কাশফুল ছাড়িয়ে শুভ্র বালুচরে কথা হচ্ছিল অতীত ঘেটে। খেয়া জিজ্ঞেস করছে,
-তারপর?
-এই তো আছি।
-বিসিএস পাশ করে নিয়োগের অপেক্ষায় আছিস।
কি চমৎকার গুছিয়ে নিয়েছিস নিজেকে।
-কোথায়!এখনো তো ভবঘুরেই আছি, কতদিন হলো তোর মা বাপের অন্ন ধ্বংস করছি।
-হয়েছে,হয়েছে। কোন কিছু সত্যায়িত করতে গেলে চিনবি তো?
-ফ্লোরেন্স শহরে এ দেশের আমলাদের সাক্ষরে কাজ হয় না।
-ও শহর ভাল লাগে না তবু, প্রাণ নেই। এমন নির্জন সন্ধ্যা নেই, নদীর ধারে কাশফুল নেই, আর সবচেয়ে বেশি তুই নেই, অরণ্য চৌধুরী!
আমি খানিকটা চমকে উঠলাম, হোচট খেলাম!
খেয়া আবার শুরু করল, দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারিনি আমরা। অচেনা অজানা এক শহরে অনেক বেশি শূন্যতার মাঝে ডুবে যেয়ে আবিষ্কার করেছি, তোর সর্বদা সহাস্যমুখ, আমার সুখের দিনগুলো। কতবার মনে হয়েছে তোকে নিয়েই ভাল থাকতে পারতাম অথচ যেদিন খুব কাছে ছিলি, পাশাপাশি হেঁটেছি জীবনের অনেকটা সময় সেদিন এমন করে ভেবে দেখিনি একবারও। কি বিচিত্র মানুষের এই মন!
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, অন্ধকার নেমে এসেছে। বাসায় চল। খেয়া হঠাৎ আমার বুকে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠল, আমি আর পারছি না রে! এর নাম তো জীবন হতে পারে না!
সেদিন রাতে ঘুম হলো না এতটুকুন।বার বার মনে হলো কেন পড়ে আছি,দুঃখ কুড়াতে?
ফিরতে হবে এবার, মায়ায় জড়ানো চলবে না কিছুতেই।
কিন্তু বার বার আটকে যাচ্ছিলাম,বাঁধা পড়ছিলাম!
খেয়া তবু ফিরবে ফ্লোরেন্স নগরীতে, কিন্তু রিমা?
ভোর পাঁচটার দিকে ফোন দিলাম রিমাকে, জেগে আছে মেয়েটা।
-ছাদে আসবেন একটু? কথা আছে।
-এই কাক ডাকা ভোরে?
-জি,জীবনের মধ্যপথে এসে আবার সকাল শুরু হোক, একসাথে।
রিমা দাঁড়িয়ে আছে আমার পাশে, আমি রিমার পাশে
সামনে রক্তিম সূর্যোদয়, পূব দিগন্তে!
আমি বলছি, আজ ফিরে যাচ্ছি ঢাকায়।
যদি জীবনানন্দ হতাম আপনাকে সুরঞ্জনা নাম দিয়ে যেতাম।
সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলো নাকো কথা অই যুবকের সাথে:
ফিরে এসো সুরঞ্জনা!
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার!
আমার দুর্ভাগ্য আমি জীবনানন্দ নই আমার সামনে সুরঞ্জনা দাঁড়িয়ে নেই। সব পুরুষই চায় তার প্রেয়সী নারীর হৃদয়ে সবটুকু জায়গা নিতে। তবুও তো জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো, অম্ল মধুর অতীত অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি এও জানি কোন কুমারী নারী তার হৃদয়ের সবটুকু বিশুদ্ধতা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করে নেই। তবু আগুনে পুড়িয়ে,জ্বালিয়ে দগ্ধ এক প্রেম আমি চাইতেই পারি, এ চাওয়াটুকু নিশ্চয় অন্যায় নয়!
আমি হয়তো ফিরব আবার, হয়তো ফিরব না।
এর সবটাই নির্ভর করছে আপনার ওপর। এর চেয়ে সহজ করে আমি আর কি বলতে পারি?
রিমা কাঁদছে।
ওর চোখের জলে সকালের রোদের ঝিলিক!
আমি বুঝতে পারছি না, এ জল আনন্দের নাকি বেদনার!
নারীকে কখনো কখনো বোঝা যায় না, একেবারেই।