:: সৈকত রুশদী ::
নশ্বর এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্র সাংবাদিকদের অন্যতম, কালের সাক্ষী জালাল উদ্দিন হায়দার।
গত ১৪ মার্চ ২০২৩ বাংলাদেশ সময় ভোর রাত ৩:১৫ মিনিটে জালাল উদ্দিন হায়দার ঢাকায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
তাঁর পুত্র নিজামউদ্দীন হায়দার ফেসবুকে পিতার মৃত্যুসংবাদ জানান।
মরহুম জালাল উদ্দিন হায়দারকে জ্যেষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে পেয়েছিলাম আমি ‘দৈনিক দেশ’ পত্রিকায়। প্রায় চার বছর (১৯৭৯-১৯৮৩)।
১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বরে আমি ‘দৈনিক দেশ’-এ স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে যোগ দিই। আলোকচিত্র বিভাগে সহকর্মী হিসেবে পাই চীফ ফটোগ্রাফার মানু মুন্সী, সিনিয়র ফটোগ্রাফার জালাল উদ্দিন হায়দার ও স্টাফ ফটোগ্রাফার লুৎফর রহমান বীনু ভাইকে। তাঁরা তিন জনই আজ প্রয়াত।
এর মধ্যে হায়দার ভাই ও বীনু ভাইয়ের সাথে বহু এসাইনমেন্ট করেছি। সেই সূত্রে তাঁদের সাথে আমার হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। কিছুদিন আগেও জালাল উদ্দিন হায়দার ভাইয়ের সাথে আমার বার্তা বিনিময় হয়েছে।
প্রায় চার দশকের সুদীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে জালাল উদ্দিন হায়দার বাংলাদেশের স্বাধিকার সংগ্রাম ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের এক প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি সেই ইতিহাস ক্যামেরায় ধারণ করে খ্যাতি অর্জন করেন।
তাঁর বিপুল কাজের মধ্যে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় উত্তর পরিস্থিতি ও সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন, পঁচিশে মার্চ উত্তর ঢাকা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ এবং ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের আলোকচিত্র উল্লেখযোগ্য।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, ৭ মার্চ সহ বিভিন্ন জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা এবং নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বৈঠকের জন্য ঐ মার্চ মাসেই ঢাকায় আগত পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সশস্ত্র পাহারায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আগমন ও প্রস্থানের আলোকচিত্র বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
১৯৬৫ সালে জালালউদ্দিন হায়দার বাংলা দৈনিক ‘পয়গাম’-এ আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন। একে একে তিনি ‘আজাদ’, পাকিস্তান অবজারভার’, ও ‘পাকিস্তান টাইমস’ পত্রিকায় এবং ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি ‘গণকণ্ঠ’, ‘দৈনিক দেশ’ ও ‘দ্য ডেইলি নিউজ’ সহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। সর্বশেষ ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ পত্রিকা থেকে ২০০০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
অবসর জীবনযাপনকালে বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি নানা ধরণের অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য জালাল উদ্দিন হায়দার বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন মরহুম জালাল উদ্দিন হায়দার ভাইয়ের রূহকে জান্নাতুল ফেরদৌসে চিরশান্তি প্রদান করেন।
আন্তরিক সমবেদনা হায়দার ভাইয়ের পরিবারের সকলের প্রতি।
টরন্টো, কানাডা
লেখক: কানাডা প্রবাসী গণমাধ্যম বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও লেখক