:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
৫৭ জেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে জয়ীদের তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারাদেশের জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
রাতে মাঠপর্যায় থেকে ফলাফল একীভূত করে চেয়ারম্যানদের তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলা পরিষদে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন আদালত কর্তৃক স্থগিত করা হয়েছে। ভোলা ও ফেনী জেলার সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।
সোমবার অনুষ্ঠিত সারাদেশে ৫৭ জেলা পরিষদ নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা ৯টি জেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
একটি জেলায় নির্বাচিত হয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী। এছাড়া ২৩ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছে।
রাজশাহী : রাজশাহী জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। কাপ-পিরিচ প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৫৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের বিদ্রোহী আক্তারুজ্জামান আক্তার পেয়েছেন ৫৬৬ ভোট। মোটরসাকেল প্রতীকে লড়ছিলেন তিনি। ভোট গণনা শেষে মীর ইকবালকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
ফরিদপুর : ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাদাত হোসেন (চশমা)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. ফারুক হোসেন।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ী জেলা পরিষদ নির্বাচনে পাংশা উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আ.লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম শফিকুল মোরশেদ আরুজ তালগাছ প্রতীক নিয়ে ৪২৮ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দীপক কুণ্ডু মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৩৮ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমামুজ্জামান চৌধুরী রিটু আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছে ২৮ ভোট।
নরসিংদী : নরসিংদীতে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইশরাত উদ্দিন আহমেদ মনির আনারস প্রতীক নিয়ে ৬২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এই জেলায় মোট ৩টি আসন বা পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৬ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নড়ছেন ১০ জন।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনের আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন আনারস প্রতীকে ৪৫২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা কে এম বজলুল হক খান পেয়েছেন ৪২৫ ভোট।
খুলনা : খুলনা জেলা পরিষদে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আ.লীগ দলীয় প্রার্থী শেখ হারুনুর রশীদ। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫৩৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এমএম মোর্ত্তজা রশিদী দারা চশমা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪০৩ ভোট। আর ডা. শেখ বাহারুল আলম আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৭ ভোট।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন আ.লীগ মনোনীত মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ নজরুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৬০৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী খলিলুল্লাহ্ ঝড়ু পেয়েছেন ৪৪৭ ভোট। ১৬১ ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এ ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
যশোর : যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আ.লীগের প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের সাইফুজ্জামান পিকুল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আনারস প্রতীকের মারুফ হোসেন কাজল।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম হারুন আর রশিদ আনারস প্রতীকে ৪৭৮ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস তার চশমা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৬৫ ভোট। জেলার ৬ উপজেলা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ভোটে মোট ৯৯৮জন ভোটারের মধ্যে ৯৪১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নড়াইল : নড়াইল জেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান হলেন আ.লীগ মনোনীত জেলা আ.লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে ২৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত চয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমির। মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৭৫ ভোট।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগ মনোনিত প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মনজু নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মোটরসাইকেল মার্কা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩১২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আরেফিন আলম রনজু ঘোড়া মার্কা প্রতীকে পেয়েছেন ২৪৯ ভোট। জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান এই ফলাফল ঘোষনা করেন।
মেহেরপুর : মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন সাবেক ছাত্র নেতা অ্যাড. আব্দুস সালাম। আ.লীগ মনোনীত এই প্রার্থী কাপ-পিরিচ প্রতীকে ১৭৬ ভোট পেয়েছেন। আর তার প্রতিদ্বন্দী সাবেক চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা গোলাম রসুল আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ১১৫ ভোট। এ নির্বাচনে তিনটি উপজেলায় তিনটি ভোট কেন্দ্রে ২৯৩ জন ভোটারের মধ্যে শতভাগ ভোট পোল হয়েছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেলা আ.লীগের সভাপতি তালগাছ প্রতীক আবু বকর সিদ্দিক নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আতাউর রহমান সরকার আতা (ঘোড়া প্রতীক)।
পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুল হান্নান শেখ। তিনি পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চশমা প্রতীক নিয়ে ২৮৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আ.লীগ মনোনীত জেলা আ.লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু তোয়াবুর রহমান। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৩১ ভোট।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আ.লীগের প্রার্থী অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান (আনারস)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদ মনোনীত প্রার্থী আমিনুল ইসলাম (চশমা)।
নেত্রকোণা : নেত্রকোণা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন আ.লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট অসিত কুমার সরকার সজল (আনারস)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আসমা আশরাফ।
বগুড়া : বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ডা. মকবুল হোসেন পুনরায় বিজয়ী হয়েছেন। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে ৯৩২ ভোট পেয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল মান্নান আকন্দের মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬৭০ ভোট।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়য় হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট। মোটরসাইকেল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৬১২ ভোট। এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আ.লীগের মনোনীত ও জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল কবির রুমেন ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৬০৪ ভোট।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের দলীয় প্রার্থী ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর চেয়ে ১২ গুন ভোট পেয়ে দ্বিতীয় বারের মত চেয়রম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ঘোড়া প্রতীকে ৯৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু নঈম মো. শিবলী খায়ের আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭৭ ভোট এবং অপর প্রার্থী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুল হক চশমা প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ৪৩টি।
পটুয়াখালী : পটুয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হাফিজুর রহমান (ঘোড়া মার্কা) ৯৬ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৫৮২ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. খলিলুর রহমান মোহন (আনারস মার্কা) পেয়েছেন ৪৮৬ ভোট। এছাড়া অপর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মাকসুদুর রহমান পেয়েছেন ১০ ভোট।
চাঁদপুর : চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন আলহাজ্ব ওসমান গনি পাটওয়ারী। তিনি মোবাইল প্রতিকে ৭২৯ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী জাকির হোসেন আনারস প্রতিকে ৫২৫ ভোট পেয়েছেন। তাদের ভোটের ব্যবধান ২০৪ ভোট। চাঁদপুরে চেয়ারম্যান পদে ২ জন, সাধারণ সদস্য ৩৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ১২ জনসহ মোট ৫০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১ হাজার ২৬৯ জন ছিলেন।
উল্লেখ্য, দেশে দ্বিতীয়বাবের মতো জেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে ভোট নেওয়া হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। সব কটি ভোটকেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
ইসি জানিয়েছে, ২৬ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ছাড়াও নারীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ১৮ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৬৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন আদালতের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে। ভোলা ও ফেনী জেলা পরিষদের সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এই দুই জেলায় ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না।
আজকের নির্বাচনে ৫৭টি জেলার চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী ৯২ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১ হাজার ৪৮৫ জন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ৬০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৫৭টি জেলায় মোট ভোটার ৬০ হাজার ৮৬৬ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৬২টি এবং ভোটকক্ষ ৯২৫টি।