:: সর্দার আমিরুল ইসলাম ::
উনি মার্কিন নাগরিক কিনা জানি না, তবে দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন। বিয়ে-থা করেছেন সেখানেই। তাকে নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে তেমন অনুরাগ বা বিরাগ নেই। মাঝে মাঝে দেখি তার অনুসারীগণ তাকে ‘আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসাবে অভিহিত করেন। উপাধিটা সুন্দর। সুন্দরের প্রতি যেহেতু স্বাভাবিক আকর্ষণবোধ করি সে হিসেবে আমি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নিয়ে কয়েকদিন কিছু ঘাটাঘাটি করলাম।
বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেট বা ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু হয় ১৯৯৩ সালে। সে বছর বুলেটিন বোর্ড সিস্টেম বা বিবিএস পদ্ধতিতে ডায়াল-আপ-এর সাহায্যে ই-মেইল ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। অফলাইন ই-মেইলের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার প্রথম ঘটে ১৯৯৫ সালে। খুবই অবাক ব্যাপার যে, বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশনের বিসমিল্লাহ্ হয় বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের আমলে।
তবে এই সুযোগ খুব সীমিত থাকায় ইন্টারনেটের জন্য ভিস্যাট স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিএনপি সরকারই সেই উদ্যোগ গ্রহন করে। ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে সরকার ভিস্যাট ড্যাটা সার্কিট সাবস্ক্রাইব করার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে। এ প্রক্রিয়া চলাকালেই জাতীয় নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার দায়িত্ব নেয়। নোবেল লরিয়েট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস সহ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’-তিন জন উপদেষ্টার বিশেষ আগ্রহ ও তাগিদে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। ১৯৯৬ সালের ৪ঠা জুন দেশে প্রথম ভিস্যাট বেজ ডাটা সার্ভিস কমিশনড করা হয়। সকলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় ইন্টারনেট সার্ভিস। ইন্টারনেট কানেকশন স্থাপনের পর ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ইন্টারনেটের মাধ্যমেই বিশ্বজুড়ে প্রচার করা হয়।
১৯৯৬ সালে এ সরকার পরিবর্তন হয়। এই সময়ে ডিজিটালাইজেশনের তেমন কোন অগ্রগতি ঘটে নাই। দীর্ঘদিন পর আবারও ডিটালাইশেনের ব্রেকথ্রু ঘটে ২০০৬ সালের ২১ মে। ৬৪০ কোটি ডলার খরচে এই দিন বাংলাদেশ প্রথমবারের মতন সাবমেরিন ক্যাবল ‘এসএমডব্লিউ-৪’ সংগে যুক্ত হয়। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার এই বিশাল যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহন করে। এর ফলে যোগাযোগ প্রযুক্তির মহাসড়কে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। গুঞ্জন আছে, পূর্বের সরকার এটা করলে বিনামূল্যে পাওয়া যেত।
বাংলাদেশে প্রথম ইন্টারনেট বা ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু হয় ১৯৯৩ সালে। সে বছর বুলেটিন বোর্ড সিস্টেম বা বিবিএস পদ্ধতিতে ডায়াল-আপ-এর সাহায্যে ই-মেইল ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। অফলাইন ই-মেইলের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার প্রথম ঘটে ১৯৯৫ সালে। খুবই অবাক ব্যাপার যে, বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশনের বিসমিল্লাহ্ হয় বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের আমলে।
অবশ্য এর আগে প্রধানন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া ২০০২ সালে আইসিটি পলিসি প্রণয়ন করে তার অধীনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় তৈরি করেন। ড. মঈন খান ছিলেন এই মন্ত্রনালয়ের প্রথম মন্ত্রী। একই সাথে একই বছর তাঁর সরকার কালিয়াকৈরে দেশের প্রথম হাই-টেক পার্ক স্থাপনের প্রকল্পও হাতে নেয়।
সরকারী বা ব্যক্তি পর্যায়ের পাশাপাশি দলীয় উদ্যোগে ২০০৪ সালে কক্সবাজার জেলা বিএনপির পার্টি অফিসকে ডিজিটালাইজেশন করা হয়। কক্সবাজার জেলার বিএনপির অফিস তাই দেশের প্রথম ডিজিটাইলাইজড রাজনৈতিক কার্যালয়।
বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজেশনে পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন বেগম খালেদা জিয়ার আগে কেউ কল্পনাও করেনি। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো এমন বহু উদ্যোগ বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি সরকার নিয়েছে। স্ট্যাটাস ছোট রাখার স্বার্থে আমি শুধু বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলোর কথা বললাম। বেগম খালেদা দিয়া প্রমান করেছেন অন্য সকলের ক্ষেত্রের মতন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সূচনাও এদেশে বিএনপির হাত ধরেই হয়েছে।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ দেখে জিয়াউর রহমান সবার জন্য মোটা চাল ও মোটা কাপড়ের অঙ্গীকার করেছিলেন। তাই সম্ভবত দলের প্রতীক হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন ধানের শীষ। জিয়াউর রহমানের দেখানো পথে খাদ্য বস্ত্রের সমস্যা মিটেছে বাংলাদেশের। সময় পরিবর্তন হয়েছে, দলের প্রতীক পরিবর্তন করারও সময় এসেছে। এই প্রতীক হতে হবে ‘ঢোল’। সারাদিন ঢোল পিটাতে হবে আর সত্য ইতিহাস বর্ণনা করে যেতে হবে। নয়তো জর্জ কার্লিন যা বলেছিলেন, The caterpillar does all the work, but the butterfly gets all the publicity.
পুনশ্চ: ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদশ’ কথাটা আমি প্রথম শুনি ২০০৪-০৫ সালের দিকে দাদাভাই সিরাজুল আলম খানের এক লেখায়। তিনি কিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারনা পেয়েছিলেন, কিভাবে সেটা আওয়ামীলীগের ইশতেহারে গেল সে ব্যাপারে জানতে চাইলে বিস্তারিত বলেছিলেন। পরে কোনদিন প্রাসঙ্গিকতা এলে সে আলাপচারিতা লিখব।
লেখকঃ ছাত্রদলের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক