:: কুমিল্লা প্রতিনিধি ::
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডা. তাহসিন বাহার সূচনা। শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে মেয়র পদে উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা শেষে তাকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
কুমিল্লা জিলা স্কুল অডিটোরিয়ামে উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন।
মেয়র পদে উপনির্বাচনে ১০৫টি কেন্দ্রের ফলাফলে ডা. তাহসিন বাহার সূচনা বাস প্রতীকে পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৮৯০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ২৬ হাজার ৮৯৭ ভোট। এছাড়াও ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দীন কায়সার ১৩ হাজার ১৫৫ ভোট এবং হাতি প্রতীকের নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম পেয়েছেন ৫ হাজার ১৭৩ ভোট।
ডা. তাহসিন বাহার সূচনা কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে এবং কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি প্রথমবারের মতো সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হন।
২০১২ সালে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আফজল খানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত মনিরুল হক সাক্কু। এরপর ২০১৭ সালের নির্বাচনেও দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন সাক্কু।
২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র সাক্কুকে মাত্র ৩৪৩ ভোটে হারিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত মেয়র নির্বাচিত হন। যদিও ফল ঘোষণার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তাকে আওয়ামী লীগের বাহার এমপির ফোনের পর ফল পাল্টে পরাজিত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার দাবি করেছিলেন সাক্কু। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মেয়র আরফানুল হক রিফাত। এতে মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখ ৯ মার্চ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন।
কুমিল্লা সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ২৭৮, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮২ জন এবং ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। সিটির ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে এসব ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ফলাফল ঘোষণাস্থলে আসেন ডা. তাহসিন বাহার সূচনা। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি কুমিল্লার উন্নয়নে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা নগরী অনেক পিছিয়ে অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতির কারণে। আমি পরিকল্পনা নিয়ে কুমিল্লাকে এগিয়ে নিতে চাই।আগামীর কুমিল্লা হবে স্মার্ট কুমিল্লা। ইনশাআল্লাহ, আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবো।’
মেয়রের চেয়ারে বসার পর প্রথম কোন কাজটাকে গুরুত্ব দেবেন জানতে চাইলে ডা. তাহসিন বাহার সূচনা বলেন, ‘আসলে আমাদের কুমিল্লা ২০১১ সালে সিটি করপোরেশন হলেও আমাদের যে মৌলিক অধিকারগুলো আছে, যে নাগরিক সুবিধাগুলো আছে, সেগুলো থেকে বঞ্চিত। অবশ্যই কিছু স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সবগুলো সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রচারণার সময় আমি যেখানে গেছি সেখানেই দেখছি যে- মানুষ সবচেয়ে বড় সমস্যার কথা বলে জলাবদ্ধতা।যেটা অবশ্যই একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কারণ, আমরা জানি যে, আজকে জলাবদ্ধতার কারণই হচ্ছে অপরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। এছাড়া যানজটের বিষয়টাকেও গুরুত্ব দেব। দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার কারণে জঞ্জালের শহরে পরিণত হয়েছে কুমিল্লা। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কুমিল্লাকে নতুন রূপে সাজাবো। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সমাধানের পথে হাঁটবো।