:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
সব জরিপের ফলাফল ভুল প্রমাণ করে থাইল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনে অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছে সামাজিক ও গণতন্ত্রপন্থি দল মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি (এমএফপি)।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত প্রাপ্ত ৯৪ দশমিক ২ শতাংশ ফলাফলে দলটি নির্বাচনী এলাকায় ১১২ আসন এবং পার্টি তালিকায় ৩৮ আসন পায়। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পায়েটংটার্ন সিনাওয়াত্রার পিউ থাই পার্টি। দলটি নির্বাচনী এলাকায় জয় পেয়েছে ১১৩টি আসনে আর পার্টি তালিকায় জয় পায় ২৯টিতে। পিউ থাই পার্টি বেশি আসন পাবে বলে একাধিক জরিপে উঠে এসেছিল।
সেনাসমর্থিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচার নতুন দল ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টির ভরাডুবি হয়েছে। দলটির অবস্থান পঞ্চম স্থানে। ওচার দল পেয়েছে মাত্র ২৩টি নির্বাচনী আসন এবং ১৩টি আসনে জয় পায় দলীয় তালিকায়।
নির্বাচনে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে গঠন করতে হবে জোট সরকার। এরই মধ্যে এমএফপিকে অভিনন্দন জানিয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পিউ থাই পার্টির নেতা পায়েটংটার্ন সিনাওয়াত্রা। তিনি বলেন, জোট সরকার গঠনে তাঁর দল আলোচনার জন্য প্রস্তুত। পায়েটংটার্ন বলেন, তাঁরা আনুষ্ঠানিক ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন। এমএফপির এই জয়ে তাঁরাও খুশি। একসঙ্গে কাজ করতে চান বলেও জানান তিনি।
এর আগে অবশ্য জোট সরকার গঠনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল এমএফপিও। দলটির নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত রোববার দুপুরে বলেন, মুভ ফরোয়ার্ড এবং অন্য বিরোধী দলগুলো নিয়ে একটি জোট সরকার গঠন করতে পারে পিউ থাই।
তবে ভোটে বড় জয় পেলেও গণতন্ত্রপন্থি দলগুলো ক্ষমতায় যেতে পারবে– এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, ২০১৭ সালে প্রবর্তিত সংবিধানের আলোকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৫০০ নির্বাচিত নিম্নকক্ষ সদস্যের পাশাপাশি ভোট দিতে পারবেন ২৫০ সামরিক নিযুক্ত সিনেটরও। এতে ফলাফল কী হবে, এখনই তা বলা যাচ্ছে না।
এর আগে রোববার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে সারাদেশে ৯৫ হাজার কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষের ৫০০ আসনের ভোট গ্রহণ হয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি নির্বাচনী আসন ৪০০টি এবং দলীয় তালিকায় আসন রয়েছে ১০০টি। দেশটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২৩ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।
এদিকে, নির্বাচনে কোনো ধরনের কারচুপি হয়নি বলে দাবি করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
এক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা সেনাসমর্থিত সরকারের এই ভরাডুবির বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, দেশটিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে মন্থরগতি আর সুশাসনের অভাবে ভোটাররা নতুন নেতৃত্ব বেছে নিয়েছেন।
এই ফলাফলের মধ্য দিয়ে দেশটির সেনা সমর্থিত সরকারের অধ্যায়ের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, প্রগ্রেসিভ মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি পেয়েছে ১৫১টি আসন। অন্যদিকে ১৪১ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ফেউ থাই। এর আগে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ৫০০ আসনের মধ্যে ২৮৬টিতেই জয় পেতে পারে এই দুই দল।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫০০ সদস্য নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৫০ লাখ ভোটার। ৯৫ হাজার ভোটকেন্দ্রে নেওয়া হয় ভোট।
আবারও ক্ষমতায় আসার জোর চেষ্টায় আছেন সেনা সমর্থিত প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচাও। ৬৯ বছরের এই সাবেক সেনাপ্রধান ২০১৪ সালে দেশটিতে সর্বশেষ অভ্যুত্থান ঘটান। সে সময় থাকসিন সিনাওয়াত্রার বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রার কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার সুবিধাজনক অবস্থানে নেই তার দল।
সোমবার থাইল্যান্ডের বিরোধী দল ফেউ থাই বলেছে, তারা সংস্কারপন্থী মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে যোগ দিতে রাজি আছে। জোট সরকারে যোগ দিতে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তা তারা গ্রহণ করছে। দলটি আরও বলেছে, পিটা লিমজারোয়েনরাত সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার অর্জন করেছেন।
মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা ৪২ বছর বয়সী পিটা লিমজারোয়েনরাত সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তিনি তাঁর দলীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। তাঁর অবস্থান স্বৈরশাসক ও সেনাসমর্থিত দলগুলোর বিপক্ষে থাকবে।
তিনি মনে করেন থাইল্যান্ডে এখন আর সংখ্যালঘু সরকার (নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও কোনো দল বা জোটের সরকার গঠন করা) গঠনের সুযোগ নেই। এখন তিনি ফেউ থাই দলের সঙ্গে জোট গড়তে প্রস্তুত আছেন বলে উল্লেখ করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তিনিই প্রধানমন্ত্রী হতে চান।
এদিকে ফেউ থাইয়ের প্রার্থী ৩৬ বছর বয়সী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, নির্বাচনে মুভ ফরোয়ার্ডের অর্জনে তিনি খুশি। তবে জোট গঠন নিয়ে আলোচনার সময় এখনো হয়নি।
চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী থিতিনান পংশুধিরাক মনে করেন, মুভ ফরোয়ার্ডের এ উত্থান থাই রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ‘ফেউ থাই ভুল লড়াই লড়েছে। ফেউ থাই জনতুষ্টি অর্জনের লড়াই লড়েছে, যেটিতে তারা আগে থেকেই জয়ী হয়ে আছে। মুভ ফরোয়ার্ড এ লড়াইকে আরেক ধাপ এগিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দিকে নিয়ে গেছে। এটি থাই রাজনীতিতে নতুন যুদ্ধের ক্ষেত্র।’