নিষিদ্ধ: দ্য প্রিন্স

:: ওয়াসিম ইফতেখারুল হক ::

১৫৫৯ থেকে ৮০ বছর নিষিদ্ধ ছিল গ্রন্থটি। আমাদের বর্তমান রাজনীতিও এর সমাধান বুঝতে ‘দ্য প্রিন্স’ পাঠ ব্যতীত উপায় নেই। সমস্যা হচ্ছে ইংরেজি পাঠে আমরা সাবলীল না। আমিও না। আবার আক্ষরিক অনুবাদ করতে গেলে দুর্বোধ্য কিছু ছাপা হরফ জন্ম হয়। তাই দ্য প্রিন্সের দু’টি বাংলা অনুবাদ ও একটি ইংরাজী অনুবাদকে ভিত্তি করে পড়ে বোঝার মত সহজ করে উপস্থাপনের চেষ্টা করছি। দিন তারিখ না বলি তবে মাঝেমধ্যে দ্য প্রিন্স থেকে পোষ্ট করবো। পড়লে লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না; এটুকু বলতে পারি। আর হ্যা, দয়া করে আমার সাথে কুতর্ক করতে আসবেন না। কারণ বিদগ্ধ নিকোলা ম্যাকিয়াভেলি ১৫২৭-এ পটল তুলেছেন।

মানুষকে শাসন করতে অতীত এবং বর্তমান মিলিয়ে বেশ ক ধরণের রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থা আছে, অতীতেও ছিল। তবে সব ব্যবস্থার ভিত্তি মাত্র দুটি।

এক) সাধারণতন্ত্র (রিপাবলিক)

দুই) রাজতন্ত্র।

রাজতন্ত্রের ভেতর আবার দু’টি ধরন আছে।

বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র আর নতুন করে রাজ্য শাসন করা।

প্রথমটি বংশপরম্পরায় দীর্ঘকাল রাজ্য শাসন করে। (যেমন মুঘল)

আর একদম নতুন করেও রাজতন্ত্র কায়েম হতে পারে। ফ্রান্সেসকো ফারজারের মিলান রাজ্যর উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। (আমাদের প্রেক্ষাপটে সম্রাট বাবর)

উত্তরাধিকার রাজতন্ত্রের ভেতর ধারা ভেঙে নয়া রাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। স্পেনের ন্যাপলস রাজ্য প্রতিষ্ঠার মত।

যেভাবে রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম হোক না কেন; রাষ্ট্র হয় কোন রাজপুরুষের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অথবা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে শাসিত হবে।

তবে স্বাধীনতা অর্জন করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে ঠেলা আছে। স্বাধীনতা অর্জন করতে চাইলে নিজের বাহুবল থাকতে হবে। না থাকলে অন্যের বাহুবল কৌশলে ব্যবহার করার হ্যডাম থাকতে হবে। অর্থাৎ শক্তিই মূল কথা।

এর বাইরে গেলে সৌভাগ্যের চাবিকাঠি আর সাথে অসীম সাহসের সমীকরণ মেলানো লাগবে।

.

রিপাবলিকের আলাপ পরে হবে। এখন রাজতন্ত্র নিয়ে আলাপ হবে। রাজতন্ত্র নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রর শাসন ব্যবস্থা কিভাবে পরিচালিত হয়, টিকে থাকে, স্থায়ী হয় সেই আলাপে আসি।

ভালো কিছু গড়া কঠিন কাম। তাই নয়া রাজতন্ত্রের চেয়ে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রে শাসন-কাজ তুলনামূলক সহজ।

রাজত্ব পোক্ত করতে রাজারে যুগাপোযোগী আইন প্রনয়ন করতে হবে। আবার নয়াআইনে পূর্বর ধারাও মাথায় রাখতে হবে। অর্থাৎ পূর্বপুরুষের আইনের ধারার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখলে তেমন বড় বিপদের সম্ভাবনা নেই। (নব্য বাকশাল)

আইন কৌশলে ব্যবহার করতে পারলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে না। তখন অদক্ষ, অযোগ্য শাসকরাও সহজভাবে শাসনকাজ চালিয়ে নিতে পারে। (যেমন আমাদের পরিচিত দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান)

এমনকি কোন কারণে রাষ্ট্র হারালে, বা ক্ষমতা হারানোর মুখোমুখি হলেও এসব অদক্ষ রাজারা সহজে তা পুনরুদ্ধার করে, রক্ষা করে ফেলতে পারে।

ইতালির ইতিহাসে ডিউক অব ফেরারা ১৪৮৪-তে ভেনিসিয়াসদের এবং ১৫১০-তে দ্বিতীয় পোপ জুলিয়াস-এর রাজ্য আক্রমণ প্রতিহত করেন দীর্ঘ বংশানুক্রমিক শাসন অভিজ্ঞতার সাহায্যে।

পরিহাস কি জানেন! বংশানুক্রমিক রাজা যদি অযথা তার প্রজাদের ক্ষুদ্ধ-ক্ষিপ্ত করে তাহলে তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই রাজা কিন্তু প্রজাদের প্রিয়ভাজন হয়ে থাকে। (আজ্ঞে বাস্তবতা, এই প্যরা সবচে গুরুত্বপূর্ণ)

শুধু অতিরিক্ত ত্রুটি বা চারিত্রিক দুর্বলতার জন্য জনগনের কাছে অতিরিক্ত ঘৃণার পাত্র না হলেই হল।- এইটা হয়ে গেলে ফুটুর অন্ধকার। (নিশ্চিত করতে পত্রিকা আছে না)

যেহেতু অতিরিক্ত ব্যক্তিগত ত্রুটি বা চারিত্রিক খুঁত জনগণ হচ্ছে না তাই জনগণ ভয়জনিত শ্রদ্ধা খুব একটা কমছে না। ফলে আপনি রাজা থাকলে তাদের সমস্যা হচ্ছে না। (বিকল্প দেখান তত্ত্ব। তথ্য প্রযুক্তি আইন কেন বাতিল হবে না?)

তবে মনে রাখতে হবে, জনগন জানে কোনো পরিবর্তন পরবর্তী পরিবর্তনের পথ খুলে দেয় এবং নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *