:: ফতুল্লা প্রতিনিধি ::
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বহুতল ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে রহস্যজনক বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা কুলসুম আক্তার (২৫) ও তার তিন বছরের শিশুপুত্র খালিদ।
রোববার সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টার দিকে খন্দকার ম্যানশন নামের ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। তাঁদের গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
বিস্ফোরণে ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে আগুন ধরে যায়। আগুনে ওই ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণের পর আগুনের শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কালো ধোঁয়া ভবনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আশপাশের লোকজন দগ্ধ কুলসুম আক্তার ও তাঁর ছেলেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে পাঠায়। আগুনে আশপাশের ফ্ল্যাটের দরজা–জানালা পুড়ে গেছে। বিস্ফোরণে ওই ভবনের লিফটের দরজা পর্যন্ত ভেঙে গেছে।
দগ্ধদের স্বজন সাকিনা বলেন, ‘মাসুদ ভাই দোকানে ছিলেন। তার স্ত্রী ও সন্তান বাসায় ছিলেন। হঠ্যাৎ একটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়। তারপর তাদের ঘরের সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। মাসুদ ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে পরিবার।’
প্রত্যক্ষদর্শী আল আমিন বলেন, ‘হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শুনতে পাই। দৌড় দিয়ে ওই ভবনের কাছে যাই। পরে দেখি একটি ফ্ল্যাট থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সেখানে গিয়ে আমরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’
ফায়ার সার্ভিসের ফতুল্লা স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আলম হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পূর্বেই স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই ঘটনায় দুইজন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের দিকে নিয়ে গেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘ভবনের অন্যান্য বাসিন্দারা বিস্ফোরণের মতো বিকট শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ঘরে জমা গ্যাস লিকেজ থেকে এমনটা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নিশ্চিত করে তদন্তের পর বলা যাবে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক ফখরুউদ্দিন বলেন, বিস্ফোরণে ওই ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা উড়ে গেছে। ফ্ল্যাটের আসবাবপত্রসহ মালামাল পুড়ে গেছে। তবে ভবনের কোনো ক্ষতি হয়নি। গ্যাসের পাইপলাইনের লিকেজ থেকে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক বলেন, এটি একটি অগ্নিকাণ্ড। বাসা থেকে আগুন লেগে এ ঘটনা ঘটেছে। তাদের বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ও বিস্ফোরণ হওয়ার মতো কোনো কিছু ছিল না।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ও দেশের কয়েকটি জায়গায় একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটেছে। সর্বশেষ ৭ মার্চ ঢাকায় গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে কুইন ক্যাফে হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা বিধ্বস্ত হয়। প্রাণ হারান ২৪ জন। আহত হন শতাধিক। ঠিক তার দুই দিন আগে ৫ মার্চ ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শিরিন ম্যানশন নামের একটি ভবনের তিনতলায় বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে প্রাণ হারান ৩ জন, আহত হন ১৩ জন। এই ঘটনার একদিন আগে ৪ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনায় প্রাণ হারান ৭ জন, আহত হন ২৫ জন।