:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, গত ৪০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা ২৬টি মিথ্যা মামলায় কথিত বিচার কার্যক্রমের নামে বিএনপির ৪১৫ নেতাকর্মীকে সাজা দিয়েছেন ঢাকার আদালত।
রিজভী আরও বলেন, জয়বাংলা বলে আগে বাড়ো- স্লোগান দিয়ে আমলা ও পুলিশের মতো দেশের বিচারকরাও দুর্বার গতিতে অন্ধ-অবিচারের কাজ করে যাচ্ছে। আমলা, পুলিশ ও বিচারকগণ সবাই একত্রে দ্রুত ও দর্পিত পদক্ষেপে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের নির্দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে।
এখন গায়েবি মামলার মতো গায়েবি সাজা দেওয়া হচ্ছে। আগে মৃত ব্যক্তি কবর থেকে উঠে ভোট দিতো আর এখন মৃত ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া হচ্ছে। বিরোধীদল করলে মরেও শান্তি নাই।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ৫১৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও দাবি করেন রিজভী। আর তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৮ মামলায় ৩১৭৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পৃথক মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. হাবিবুর রহমান হাবিব, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর ও বিএনপির সহ স্বেচ্ছাবিষয়বক সম্পাদক আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েলসহ বিএনপির ২১ জন নেতাকে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বিচারপতিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগে আদালত অবমাননার মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তাঁকে দুই হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
আজ বুধবার হাবিবকে হাজির করার পর শুনানি শেষে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর বেঞ্চ এ দণ্ড দেন।
এর আগে শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ তাঁকে হাইকোর্টে হাজির করে। একপর্যায়ে আদালতে হাবিবের বক্তব্যের ভিডিও শোনানো হয় সবাইকে। পরে আদালত জানতে চান, এই বক্তব্য তাঁর কি না? হাবিব বক্তব্যটি তাঁর নিজের বলে স্বীকার করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ থাকাবস্থায় আমার মমতাময়ী মা বেগম খালেদা জিয়া আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাঁর জন্য আমার লিভার, কিডনি, এমনকি জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি। আমার ১০০ বছরের সাজা হলেও আমি ভয় পাই না।’
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমী। আর হাবিবের পক্ষে ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীরসহ বিএনপির ১১ জন নেতাকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত এ রায় দেন। ২০১৩ সালে উত্তরা থানার একটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে এ সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। মামলায় ৭৩ জন আসামি ছিলেন। অন্যরা খালাস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
২০১৩ সালে রাজধানীর পল্টন থানা এলাকায় একটি প্রাইভেট কার ও একটি বাসে আগুন দেয়ার মামলায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলসহ নয়জনকে তিন বছর তিন মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম এই রায় দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মাসুদ পারভেজ।
কারাদণ্ড পাওয়া অন্য আট আসামি হলেন- পল্টন থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, পল্টন থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন, পল্টন থানা যুবদলের তৎকালীন নেতা লিওন হোসেন, উত্তম কুমার, ভাসানী জাহাঙ্গীর, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক ও রুবেল। রায়ে প্রত্যেক আসামিকে দণ্ডবিধির ১৪৩ ধারার (বেআইনি সমাবেশ) অপরাধে তিন মাস ও দণ্ডবিধির ৪৩৫ ধারার (বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে আগুন দেওয়া) অপরাধে তিন বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় ৯ আসামির কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। পরে আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের আইনজীবী ইলতুতমিশ সওদাগর বলেন, তাঁর মক্কেল ন্যায়বিচার পাননি। তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
মামলার এজাহারের বিবরণ অনুযায়ী, ১৮ দলের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর দুপুরে নয়াপল্টন এলাকার ভিআইপি রোডে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১০ থেকে ১৫ জন নেতা-কর্মী মিছিল করছিলেন। একপর্যায়ে মিছিলকারীরা হোটেল অরচার্ড প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেন। খবর পেয়ে পল্টন থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে পুলিশের দুজন কনস্টেবল আহত হন। পরে মিছিলকারীদের ধাওয়া দিলে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা রাজউক ভবনের সামনে থাকা একটি বাসে আগুন দেন। এ ঘটনায় পল্টন থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মনিবুর রহমান বাদী হয়ে নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর কাদের ভূঁইয়াসহ ৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।