সুখে–শান্তিতে ঘর করার জন্যই তো বিয়ে। সেক্ষেত্রে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ভালো বোঝাপড়াটা জরুরি। বিয়ের আগে এই ব্যাপারটা ঝালিয়ে নিলেই হয়। অন্য সব কাজের মত বিয়ের আগেও কিছু প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। এতে বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনের ঝুটঝামেলা সামলানো যায় সহজে।
জেনে নিন বিয়ের আগের প্রস্তুতি যেমন হওয়া উচিত।
গঠনমূলক
যোগাযোগ
স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে চিন্তাভাবনা এবং
আবেগীয় ভাব বিনিময় আদানপ্রদান নিয়মিত হওয়া জরুরি। কারণ তাতেই তৈরি হয় গঠনমূলক
যোগাযোগ। সঙ্গীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস করতে হবে। তা না হলে সঙ্গী মনে
করতেই পারেন যে তাঁর প্রতি আপনার আগ্রহ কম। এটা মনে হলেই তৈরি হবে অনুযোগ। তা থেকে
সৃষ্টি হতে পারে মনোমালিন্য। সম্পর্কে ঢুকে যেতে পারে পরকীয়াও। সুতরাং অন্যের
সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে আপনার সমস্যা থাকলে, বিয়ের আগেই ঠিক করার চেষ্টা করুন। তা
না হলে পরে কিন্তু পস্তাতে হবে। হতেই পারে আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে
বেঁকে।
ঝগড়া
করবেন সামলে
কোন দম্পতিরা ঝগড়া করেন না? সবাই করেন। কেউ কম, তো কেউ বেশি। ঝগড়ার পর অবধারিতভাবেই
বন্ধ থাকে কথাবার্তা। কিন্তু কখনই সেটাকে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
সংসার থাকলে বাটি–ঘটি
ঠোকাঠুকি লাগবেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে সেটা যেন মাথা ফাটাফাটির পর্যায়ে না পৌঁছয়।
বিশেষ করে রাগ করে বাড়িতে ভাঙচুর, সম্পর্ককে আরও খারাপ করে। দ্বন্দ্বকে এমন
অবস্থায় নেবেন না, যাতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হয়। একে–অপরের মতপার্থক্য গ্রহণ করার
মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। সম্পর্ককে দাম দিতে শিখতে হবে। যাতে একে অন্যের বিরুদ্ধে ‘আমার সঙ্গে সারাদিন দ্বন্দ্ব
অহর্নিশ’–এর অভিযোগ না তৈরি হয়।
সমস্যার
সমাধান করুন দুজন মিলে
একা একা সমস্যা মেটাতে কতদিন ভাল লাগে? আর বিয়ের পর তো অবশ্যই নয়। কিন্তু অনেকে
আবার নিজেকে বেশি পণ্ডিত ভাবেন। মনে করেন, সব সমস্যার সমাধান শুধু তাঁর মাথায়!
তাতেই ঘটে বিপত্তি। ফলে জীবনসঙ্গী নিজেকে অবহেলিত মনে করতে পারেন। তাই বিয়ের পর যে
কোনও সমস্যার সমাধান করুন স্বামী–স্ত্রী
মিলে। দুজনের দুটি পথ তৈরি করার কী দরকার? হোক না পরস্পরের প্রতি তুমি যে আমার
অনুভূতি। তাতে ক্ষতি কী। বরং লাভই বেশি। মিলিত শক্তিই তো ঐক্যতান শোনাবে।
ইতি-নেতি,
গ্রহণ করুন সবই
প্রত্যেক মানুষ আলাদা আলাদা মানসিকতার। তাই প্রত্যেকের মধ্যে রয়েছে দৃষ্টিভঙ্গির
তফাৎ। তাই একসঙ্গে একই পথে চলতে গেলে হয়ত জীবনসঙ্গীর কোনও বিষয় আপনার পছন্দ নাও
হতে পারে। কিন্তু তাই বলে তা নিয়ে সঙ্গীকে বারবার উত্ত্যক্ত করা উচিত নয়। কারণ
তাতে সম্পর্কের ভাঙন পর্যন্ত ঘটতে পারে। তার চেয়ে ভালভাবে বুঝিয়ে বলার অভ্যাস
করুন। একই সঙ্গে এসব বিষয় মেনে নেওয়ার অভ্যাস করুন। গুরুত্ব কম দিন। ধীরে ধীরেই
পরিবর্তন আসবে। সবচেয়ে বড় বিষয় পরস্পরের ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অভ্যাস
গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই বাস্তবায়িত হবে বাঁকা হোক তবু আমার।
রোমান্স করুন প্রাণখুলে
বিয়ে করবেন আর রোমান্টিক হবেন না—তা কি হয়! ‘রামগরুদের ছানা’ হয়ে থাকলে মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করুন। দাম্পত্য জীবন হাসিখুশি করার কোন বিকল্প নেই। তাই তো প্রয়োজন নিধুবনের রসে নিজেকে ভিজিয়ে সঙ্গীকেও সেই রসে ভিজিয়ে তোলা। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে আড্ডা দিন, গল্প করুন। অভ্যাস না থাকলে বিয়ের আগেই এসব ঠিক করে নেওয়া ভাল। মনে রাখবেন, বিয়ের পর স্বামী–স্ত্রী পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল হতে চান। সুতরাং সেই দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতে হবে। তবেই তো এক ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে বলতে পারবেন সম্পর্ক আমাদের শুধু মাখন আর মাখন।