:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচের চারটিতেই জয়লাভ করল ভারত। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বড় হারের পর এবার ভারতের সাথে হেরে টানা ৩ ম্যাচে জয়শূন্য বাংলাদেশ।
টস জিতে ব্যাটিং নেন নেতৃত্বভার পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত। তরুণ ওপেনার তানজিদ তামিম ও লিটন দাস একশ’ ছোঁয়া জুটি দেন। ভালো ভিত্তি পেয়েও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রানে থেমেছে বাংলাদেশ।
ওপেনার তানজিদ ও লিটন এই ম্যাচে দেখেশুনে ব্যাটিং শুরু করেন। পরে ব্যাট তুলে খেলে তানজিদ ৪৩ বলে ৫১ রান করে আউট হন। তার ব্যাট থেকে পাঁচটি চার ও তিনটি ছক্কার শট আসে। ওপেনিং জুটিতে ৯৩ রান তোলে বাংলাদেশ। কিন্তু তানজিদ ফেরার পরই বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ৪০ রান তুলে হারায় আরও ৩ উইকেট।
একে একে সাজঘরে ফিরে যান নাজমুল শান্ত (৮), মেহেদী মিরাজ (৩) ও লিটন দাস। ওপেনার লিটন এই ম্যাচে ৮২ বলে সাতটি চারের শটে ৬৬ রান করেন। পরে জুটি দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তাওহীদ হৃদয়। তার ব্যাট থেকে ৩৫ বলে আসে মাত্র ১৬ রান।
সেট হওয়া অন্য ব্যাটার মুশফিকও রান বাড়িয়ে নেওয়ার সময় আউট হন। তিনি ৪৬ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ৩৮ রান করেন। শেষে মাহমুদউল্লাহ ৩৬ বলে তিনটি করে চার ও ছক্কার শটে ৪৬ রান করলে আড়াইশ’ ছাড়ানো সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
ভারতের হয়ে পেসার বুমরাহ ১০ ওভারে মাত্র ৪১ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন। মোহাম্মদ সিরাজ ১০ ওভারে ৬০ রান দিলেও নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট। এছাড়া রবীন্দ্র জাদেজা ১০ ওভারে মাত্র ৩৮ রান খরচা করে ২ উইকেট তুলে নেন। শার্দুল ঠাকুর ও কুলদীপ যাদব নেন ১টি করে উইকেট। তাদের দাপুটে বোলিংয়ের কারণে হার্ডিক পান্ডিয়ার ইনজুরির ধাক্কা টের পায়নি ভারত।
জবাবে ওপেনিংয়ে নেমে রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল কোনো সুযোগই দিচ্ছিল না বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরতে। তবে ১৩ তম ওভারে এসে বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায়। ওভারের তৃতীয় বলে রোহিত ছক্কা মারলেও ফিরতি বলেই প্রতিশোধ নেন হাসান মাহমুদ। ভারতীয় অধিনায়ককে তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন উদীয়মান পেসার।
৪৮ রানে আউট হলে গিলের সঙ্গে রোহিতের উদ্বোধনী জুটি ৮৮ রানে থামে। ভারতীয় অধিনায়ক ২ রানের জন্য না পেলেও বিশ্বকাপে প্রথম ফিফটি পেয়েছেন গিল। তবে ফিফটি করার পরেই ৫৩ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে আউট হন তিনি। দুই সতীর্থ আউট হলেও অন্যদের নিয়ে বাকি কাজটুকু সাড়েন বিরাট কোহলি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮ তম সেঞ্চুরি করে ভারতকে ৭ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক। তাঁর অপরাজিত ১০৩ রানের বিপরীতে ৩৪ রানে ব্যাটিংয়ে থাকেন লোকেশ রাহুলও।
হারের দায় ব্যাটারদেরই দিলেন শান্ত
ভারতের কাছে ৭ উইকেটের হারে দায়টা ব্যাটারদেরই দিলেন শান্ত। একটা ভালো জয়ে টানা হারের বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
বিশ্বকাপে এসে নাজমুল হোসেন শান্ত নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। পথ হারিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররাও। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ভারতের কাছে বড় পরাজয়ে বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচে হারল সেমিফাইনালের স্বপ্ন নিয়ে খেলতে আশা বাংলাদেশ।
জাদেজার ম্যাচ সেরার পুরস্কার ছিনিয়ে নেওয়ায় কোহলি দুঃখিত
বিরাট কোহলি ৯৭ বলে হার না মানা ১০৩ রানের ইনিংস খেলে ওই ম্যাচ সেরার পুরস্কার দখল করে নিয়েছেন। ম্যাচ শেষে বিরাট জানিয়েছেন, জাদেজার ম্যাচ সেরার পুরস্কার ছিনিয়ে নেওয়ায় তিনি দুঃখিত।
বিরাট বলেছেন, ‘জাদেজার পুরস্কার ছিনিয়ে নেওয়ায় দুঃখিত। আমি দলে বড় অবদান রাখতে চাচ্ছিলাম। বিশ্বকাপে ফিফটি পেলেও সেগুলো সেঞ্চুরিতে নিতে পারছিলাম না। আমি এই ম্যাচটা শেষ করে আসতে চেয়েছিলাম।’
বিরাট জানিয়েছেন, ক্রিজে এসেই তিনি পরপর ফ্রি হিট পেয়েছেন। সেখান থেকে চার-ছক্কা পেয়েছেন। যেটা মোমেন্টাম তৈরি করে দিয়েছিল। এছাড়া উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হওয়ায় তিনি সুবিধা নিয়ে সেরাটা দিতে মুখিয়ে ছিলেন, ‘উইকেট বেশ ভালো ছিল, যা আমাকে খেলাটা খেলতে সহায়তা করেছে।’
লিটন জানিয়েছেন, ড্রেসিংরুমের অবস্থা বেশ ভালো। বিশ্বকাপ বেশ লম্বা টুর্নামেন্ট, যে কারণে ড্রেসিংরুমে আনন্দ থাকা, জয়ের ধারায় থাকা এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তারা ওই ধারায় থাকতে পারায় খুশি।
বিশ্বকাপে মুশফিকের ১০০০
চলতি বিশ্বকাপ আসরে ৫টি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা একমাত্র উইকেটরক্ষক ব্যাটার মুশফিকই। আজ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে ১০০০ রানও করেছেন তিনি।
পুনেতে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ৯৯৬ রান ছিল মুশফিকের। ইনিংসের ৩০ তম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার বলে দুই রান নিয়ে পূর্ণ করেছেন ১০০০। শেষ পর্যন্ত ৩৮ রান করে জসপ্রিত বুমরার শিকার হয়েছেন। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ১০৩৮ রানে থামলেন আজ। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে ১০০০ রান করেছিলেন সাকিব। ৩২ ম্যাচে ১২০১ রান সাকিবের।
তবে বিশ্বকাপ সর্বাধিক ম্যাচ খেলার দিক থেকে আজ সাকিবকে ছাড়িয়ে গেছেন মুশফিক। ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ৩৩ তম ম্যাচ খেলছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
চলতি বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে মুশফিকের ১৩৮ রান, বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ।
বিশ্বকাপে ১০০০ রান করা তৃতীয় উইকেটরক্ষক ব্যাটারও মুশফিক। উইকেটরক্ষক ব্যাটারদের মধ্যে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ক্রিকেটার কুমারা সাঙ্গাকারার। ৩৭ ম্যাচে ৩৫ ইনিংসে ১৫৩২ রান তাঁর। এরপরই ৩১ ম্যাচে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ১০৮৫ রান। এই বিশ্বকাপে মুশফিকের সুযোগ আছে গিলক্রিস্টকে ছাড়িয়ে তালিকায় দুইয়ে জায়গা করে নেওয়ার।