:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
ভারতের ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ জন। আহত হয়েছেন ৯০০ জনের বেশি। ট্রেনের ভেতরে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই ট্রেন দুর্ঘটনাকে ২০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে ভয়াবহ বলা হচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওড়িশার বালেশ্বর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ওড়িশা ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সুধাংশু সারাঙ্গি জানান, “এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৮৮ জন।”
কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি ডাউন লাইনে ছিল। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ওডিশার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এই ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মিনিট পাঁচেক পর আপ লাইন দিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিল চেন্নাইগামী শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। হঠাৎ এই ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ সময় পাশের একটি লাইনে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল মালবাহী একটি ট্রেন। করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িতে ধাক্কা দেয় এবং ট্রেনটির ইঞ্জিন মালগাড়ির ওপর উঠে যায়।
ভারতীয় বার্তা সংস্থাকে এএনআইকে এ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন পুরুষ যাত্রী বলেন, ‘করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি একটি মালগাড়িতে ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমার ওপর ১০ থেকে ১৫ জন এসে পড়ে। আমি তখন মানুষের স্তূপের নিচে পড়ে যাই এবং আমার সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে যায়। হাতে ও ঘাড়ের পেছনে আঘাত পেয়েছি আমি। ট্রেনের বগি থেকে বের হওয়ার সময় দেখলাম কারও হাত নেই, কারও পা নেই, কারও মুখ বিকৃত হয়ে গেছে।’
ওড়িশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জানান, উদ্ধার অভিযান চলছে এবং আশেপাশের জেলাগুলোর সব হাসপাতালকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। আটকে থাকাদের উদ্ধারে ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্স (এনডিআরএফ), ওডিশা ডিজাস্টার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স, ফায়ার রেসকিউ , ৩০ জন ডাক্তার, ২০০ পুলিশ কর্মী এবং ৬০টি অ্যাম্বুলেন্সকে ঘটনাস্থলে জড়ো করা হয়েছে।
ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক।
ভারতের কেন্দ্রীর রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব টুইট করে জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, রাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন।
দুর্ঘটনার খবরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি টুইট করে বলেছেন, ‘ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত। এই দুঃসময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহত ব্যক্তিরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। পরিস্থিতি নিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গেও কথা বলেছি।’
ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুর্ঘটনার পর দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করে দেশটির রেল কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিস। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বগিগুলোতে অনেকে আটকা পড়েন। দুর্ঘটনার ব্যাহত হচ্ছে ট্রেন চলাচল। বাতিল করা হয়েছে অন্তত ৫টি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা। নিহতদের প্রতি পরিবারকে ১০ লাখ রুপি এবং আহতদের দুই লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়।
কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের পক্ষ থেকে শুক্রবার বলা হয়, চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসে সাধারণত বাংলাদেশিরা চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করে থাকেন। ফলে রেল কর্তৃপক্ষ এবং ওড়িশা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে হাইকমিশন। দুর্ঘটনাবিষয়ক তথ্য জানতে বাংলাদেশিদের জন্য একটি হটলাইন (+৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩ হোয়াটসঅ্যাপ) নম্বর দিয়েছে উপহাইকমিশন।
স্বাধীনতার পর ভারতের কয়েকটি বড় রেল দুর্ঘটনা
৬ জুন ১৯৮১: সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে বিহার রাজ্যে। বাগমতি সেতু পার হওয়ার সময় একটি ট্রেন নদীতে পড়ে যায়। এতে সাড়ে সাত শতাধিক মানুষের প্রাণ যায়।
২০ আগস্ট ১৯৯৫: উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কালিন্দি এক্সপ্রেস ট্রেনকে ধাক্কা দেয় পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস ট্রেন। সরকারি হিসাবে এ দুর্ঘটনায় ৩০৫ জনের প্রাণহানি কথা বলা হয়েছিল।
২৬ নভেম্বর ১৯৯৮: পাঞ্জাবের খান্না এলাকায় গোল্ডেন টেম্পল মেইল ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ অবস্থায় পেছন থেকে এসে ট্রেনটিকে ধাক্কা দেয় জম্মু তাবি–শিয়ালদহ এক্সপ্রেস ট্রেন। এতে নিহত হন ২১২ জন।
২ আগস্ট ১৯৯৯: পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের গাইসালে অবধ আসাম এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকা ব্রহ্মপুত্র মেইল ট্রেনে সজোর ধাক্কা দেয়। এতে ২৮৫ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন তিন শতাধিক মানুষ। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্য।
২০ নভেম্বর ২০১৬: উত্তর প্রদেশের পুখরায়ানে ইন্দোর–রাজেন্দ্রনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে প্রাণ হারান ১৫২ জন। আহত হন ২৬০ জন।
২৮ মে ২০১০: পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামে মুম্বাইগামী জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পণব্যাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হন ১৪৮ যাত্রী।
৯ সেপ্টেম্বর ২০০২: বিহার রাজ্যের রফিগঞ্জে ধাবে নদীর সেতুর ওপর রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এতে ১৪০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। সন্ত্রাসীদের নাশকতায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ আছে।
২৩ ডিসেম্বর ১৯৬৪: তামিলনাড়ুতে রামেশ্বরম ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে পাম্বান–ধানুস্কোদি যাত্রবাহী ট্রেন। এতে প্রাণ যায় ১২৬ জনের বেশি যাত্রীর।