:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
রংপুরের তারাগঞ্জে দুই বাসের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন ঘটনাস্থলে এবং চারজন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। রমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. ফরহাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, চার জনের লাশ হাসপাতালে আছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রী।
সোমবার (০৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে তারাগঞ্জের খারুভাজ সেতুর কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, রাত থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যেই রাত সোয়া ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের শলেয়াশাহ খারুভাজ সেতুর কাছে যাত্রীবাহী জোয়ানা পরিবহনের সঙ্গে ইসলাম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা বৃষ্টিতে ভিজে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছেন। এ পর্যন্ত দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে উদ্ধার কাজ অব্যাহত রেখেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মোর্শেদ জানান, রোববার রাতে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। তবে ২৩ জন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
রমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. ফরহাদুজ্জামান জানান, রাত ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন এবং ভোরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত বাকিদের মধ্যে আরও দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তারাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ইনচার্জ খতিবুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় ব্যক্তিরা উদ্ধার কাজ শুরু করেন। হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি নিহত ও আহতদের নাম পরিচয় জানাতে পারেননি।
রংপুরের তারাগঞ্জে গতকাল রোববার দিবাগত রাতে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রুবেল হোসেন। তিনি ঢাকাগামী ইসলাম পরিবহন বাসের যাত্রী ছিলেন। বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার একান্নপুর গ্রামে। তাঁর দাবি, বৃষ্টি শুরু হলে তাঁদের বাসটি হঠাৎ রাস্তার বাম থেকে ডান দিকে চলে গেলে দুর্ঘটনা ঘটে।
রুবেল হোসেন আজ সোমবার সকালে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। তখন ইসলাম পরিবহন বাসটি হঠাৎ বাম থেকে ডান দিকে চলে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢাকা থেকে সৈয়দপুরগামী জোয়ানা পরিবহন বাসের সঙ্গে আমাদের বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বিকট শব্দ হয়। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন যাত্রীরা। স্থানীয় লোকজন বৃষ্টিতে ভিজে গাড়ির জানালা ভেঙে আমাদের উদ্ধার করেন। আমাদের বাসটি ডান দিকে চলে না গেলে হয়তো এই দুর্ঘটনা ঘটত না। গাড়ির সামনের দিকে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’
ঘটনাস্থলের পাশের নদীর পাড় গ্রামের বাসিন্দা মিলন মিয়া বলেন, ‘ভারি বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ সড়কের দিকে বিকট শব্দ হয়। শব্দ শুনে ছাতা নিয়ে বের হয়ে দেখি, একটি বাস আরেকটি বাসের ভেতরে ঢুকে গেছে। যাত্রীরা হাউমাউ করে কাঁদছেন। পরে আরও লোকজন মিলে জানালা ভেঙে যাত্রীদের বের করি। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা চলে আসেন।’