:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
২০২১-২২ অর্থবছরে রেলের লোকসানের পরিমাণ সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত অর্থবছরে আয় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ১৩ বছরে রেলে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। আরও প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।
নতুন রেলপথ, রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ, অত্যাধুনিক লোকোমোটিভসহ (ইঞ্জিন) ১৪২টি নতুন ট্রেন রেলবহরে যুক্ত হয়েছে। বিদ্যমান ৪৪টি ট্রেনের রুট বর্ধিত করা হয়েছে। এত উন্নয়নের সঙ্গে লোকসানটা কমাতে পারছে না রেল। প্রতিবছরই লোকসানের পালা লাফিয়ে বাড়ছে। ক্রমাগত লোকসানের লাগাম টানতে দুবার ট্রেনের ভাড়া বাড়িয়েও কাজ হয়নি। আবারও ভাড়া বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে রেল। অথচ ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়ানোর কোনো সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রেল ৬২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আয় করে আর ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে। ২০১১-১২ অর্থবছরে আয় ৬০০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং ব্যয় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় ৯৪৬ লাখ টাকা এবং ব্যয় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় ১ হাজার ১০০ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং ব্যয় ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।
রেলওয়ে পরিবহণ ও বাণিজ্যিক দপ্তর সূত্র বলছে, আন্তঃনগর ট্রেনের ক্ষেত্রে গড়ে ৬৯ শতাংশ আসন সংখ্যা অবিক্রীত থেকে যায়। অথচ, এমন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন নেই যেগুলোতে আসনসংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি যাত্রী চলাচল করছেন না।
একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশে আন্তঃনগর ট্রেন যখনই উদ্বোধন হয়-সেই সময় ২-৩টি বিরতি থাকে। পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে অতিরিক্ত ৭-৮টি স্টেশনে বিরতি দিতে হয়। ১০৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে মাত্র ২টি ট্রেন বিরতিহীন চলাচল করে। বর্তমানে ১০৩টি আন্তঃনগর ট্রেন গড়ে ৭ থেকে ১১টি স্টেশনে বিরতি দেয়। মধ্যের স্টেশনগুলোতে আসনসংখ্যা বরাদ্দ থাকলেও মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়। আবার এ সংখ্যক টিকিট মধ্যবর্তী স্টেশনগুলোতে বিক্রি হলেও পরবর্তী স্টেশনগুলোতে আসনসংখ্যা পুরোপুরিই খালি যায়।
বাণিজ্যিক দপ্তর জানায়, ট্রেন পরিচালনা ও স্টেশনগুলোর বেষ্টনী-নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা গেলে শুধু টিকিট বিক্রি থেকে বছরে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা আয় হতো। বর্তমানে ৬৫০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে।
রেলওয়ের হিসাবে কোনো স্টেশনে মেইল, লোকাল বা আন্তঃনগর ট্রেন থামাতে গড়ে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। জ্বালানি, বিভিন্ন পরিকাঠামো, সিগন্যালিংসহ নানা খরচ হয়। বর্তমানে ১২৩টি স্টেশন বন্ধ। এছাড়া নতুন চারটি স্টেশন বছরের পর বছর ধরে বন্ধ। বন্ধ স্টেশনগুলো চালু না করে, কম গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্টেশনে মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেনের লাগাতার বিরতি দেওয়া হচ্ছে। এতে আয় না বেড়ে ব্যয় বাড়ছে।
রেল কর্মকর্তাদের বক্তব্য-ট্রেনের বিরতি দেওয়ার সঙ্গে এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের সম্পর্ক থাকতে হয়। তা না হয়ে অধিকাংশ বিরতি হয়েছে-হচ্ছে শুধু রাজনৈতিক প্রভাবে।
রেলওয়ে বাণিজ্য ও অবকাঠামো দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকা-যশোর, চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার, খুলনা-মোংলাসহ বেশ কয়েকটি নতুন রেলপথ লাইন সম্পূর্ণ হবে। এসব লাইনে যাত্রী পরিবহণ লাভজনক হবে না। মালামাল পরিবহণে সড়কপথের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারলে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখবে রেল। ঢাকা-যশোর রেলপথ সিঙ্গেল ব্রডগেজে তৈরি হচ্ছে। রেল সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার মন্তব্য-এ প্রকল্পে ডাবল ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ হলে আয় বাড়ত। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টি মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হতো। সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় ২০ থেকে ২৫টির মতো ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। ফলে ব্যয় বাড়লেও আয় দিন দিন আরও কমবে।