জীবন যুদ্ধের অকেজো কাণ্ডারি
–শহীদুল জাহীদ
জীবন এক খেরোখাতা অমিল উপপাদ্য,
ত্রিভুজের তিনবাহু মেলেনা সেথা
খুঁজেও পাই না- কোথায় তার শেষ আর
কোথায়ই বা আদ্য।
তবু বারেবারে মেলাতে বসি –
সে জীবনের উপাখ্যান- যেন নাছোড় বান্দা এক ছাত্র।
চলার পথের হাজার রঙ সঙ আর কেচ্ছা ভরা বাণী,
কেউবা সাজতে চায় ললনা শুধু
কেউ বা আবার ভাবের ঘরের রানী।
কেউ বলে যুগোপযোগী- সে এক মহীয়সী বাণী বটে,
আকাশ বাতাস মিলায়ে সেথা কত কিছুই রটে।
লাটাই ছেড়ে শিশু মনে অবাক খেলায় মাতে।
অচিন্তনীয় চিন্তায় পড়ে দক্ষ ডুবুরি,
সাঁতারে তার হয় কি কোন ভুল? সে কি আড়াআড়ি
না তাকে শিকার করেছে সুদক্ষ শিকারি?
তুমি কি নিজেকে ভাব –
নিজের জীবনের কাণ্ডারি? সে কেমনে মেলায়
সুখ দুঃখের কাঙালি ভোজ- ডেকচি ভরা আহাজারি?
তোমার সুখের সাম্পান কি শুধুই চলে ভাটির নিশানায়-
সেখানে কি কোন শুকনো বালুচর নেই-
যে তোমাকে রক্তিম চোখ রাঙায়? তোমার সন্মিলিত
প্রচেষ্টায় যদিও বাজে নিনাদ আর ডমরু ধ্বনি,
সে কি শুধু নিতান্তই বালুকাবেলায়- এক তাসের ঘর
বালু সমেত ভেসে চলে খরস্রোতা জীবনের মোহনায়?
এ কেমন উপপাদ্য যার অনুমান সমেত অপ্রমাণিত?
এ খেরোখাতার রস মঞ্জুরি বাতাসে বিলায়-
ভরা যৌবনের অবিলাসি গীত,
সুর সপ্তক, ভাসে দিশাহিন তরী,
তুমি কি তবুও মেলাতে চাও সরল রেখায় কিছু
পিচ্চিল আঠায়- প্রাণপণে চেপে ধরে –
রেখাগুলোর গোঙানি উপেক্ষা করে,
এক সরল প্রমানিত উপপাদ্যের
গর্বিত মালিক হতে চাও- জীবন যুদ্ধের অকেজো
উপেক্ষিত কাণ্ডারি?
তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবে প্রশান্ত নীলাকাশ।
_____________________________
স্রষ্টার গুণ গাই
-শহীদুল জাহীদ
এই যে নদী সাগর দেখো
সদা বহমান,
আকাশ বাতাস মাতিয়ে তোলে
পাখির মিষ্টি গান।
শস্য ফলায় কৃষাণ সকল
জেলে ধরে মাছ,
মৌসুমেতে ফলে ভরে
হাজার রকম গাছ।
ছায়া দিয়ে পরাণ জুড়ায়
সকল বৃক্ষরাজি,
শক্ত হাতে বৈঠা চালায়
উজান গাঙ্গের মাঝি।
সবুজ ঘাসে দোলায় মাথা
দেখতে সুন্দর কত,
সৃষ্টির সেরা মানুষ সে তো
মস্তক অবনত।
এই পৃথিবীর সকল সৃষ্টি
সবই মানব সেবায়,
স্রষ্টার গুণ গাইরে আজি
আয় রে সবাই আয়।
______________________________
তোমার মনের ইচ্ছেগুলো
— শহীদুল জাহীদ
তোমার মনের ইচ্ছেগুলো,
যেদিন থেকে হৃদয় ছুঁলো,
ক্যানভাসে আঁকি শুধু
তোমার মুখচ্ছবি।
আকাশ ভরা রোদের মেলা
ছড়ায় যেমন রবি,
তোমায় নিয়েই ভাবনা ভেবে
কাব্য রচেন কবি।
জমাট বাঁধা কষ্টগুলো
বর্ষা বাদল রাতে,
ইচ্ছে করেই ভাসায়ে দেই
ভরা পূর্ণিমাতে।
চেতন ভরা তোমার যতন
রতন ভরা দেহ,
ঊষা রাঙা গাল যে তোমার
ছোঁবে না আর কেহ।
তোমায় আমি রেখেছি বেঁধে
সময় ঘেরা টোপে,
তোমায় আমি দেখি জেনো
পূর্ণিমার শশী রূপে।
শত কাপ চা’য়ে চুমুক
চমক কি বা তাতে,
জগতের শ্রেষ্ঠ সুখ
শুধুই তোমার ছোঁয়াতে।
_____________________________
তোমার চোখে আমার ভালোবাসা
-শহীদুল জাহীদ
আষাঢ়ের মধ্য দুপুর, সূর্যটাও তেজদীপ্ত,
আকাশে মেঘের মেলা, পবন বহিছে খুবই ক্ষিপ্ত।
সূর্যটা নির্লজ্জয়ের মত-
দেখিছে তোমার গালে রঙের খেলা।
মেঘেরাও নামল ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়ে।
এমন অবাক সুন্দরের মাঝে-
তুমি ঠায় দাঁড়িয়ে- পাগল মিষ্টি মেয়ে।
হাত ধরে যেই টেনে বসি গাঙের ধারে,
ওপারে কাশবন কত সবুজ আহ রে!
মাঝিরা নায়ের পিছে সুর করা গানে,
আমি কিন্ত চেয়েই আছি, তোমার মুখপানে।
টিপটিপ বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে জলের ‘পরে,
সুর তার কত না মধুর,
সুকণ্যা নাচে যেমন নুপুরের তালে,
পাখিরাও তাহাই দেখে বসে গাছের ডালে।
ফোঁটা ফোঁটা জল লাগা ভেজা দুই হাতে,
দু’কাপ চা সেথা ধোঁয়া ওঠে যাতে,
আর চোখে পড়ি তখন তোমার চোখের ভাষা,
কি লেখা সেথায় জানো?- আমার ভালোবাসা।
_____________________________
রক্তিম কড়চায়
— শহীদুল জাহীদ
প্রিয়তমা, ঐ দেখো আকাশ ভরা তারা,
চাঁদ তার মধ্যমণি।
এই পৃথিবীর সমগ্র নাট্যশালা,
সকল রঙ্গমঞ্চে বাজে শত সুরের ধ্বনি।
সাগরের বিশালতা হার মেনে যায়,
যবে বধিছে সূর্যদেবে সময়ের পাড়,
কি রক্তিম বিষাদে সাধিছে বিদায়,
হে কনককূলের মালবিকায়।
কথামালার কবি তার জনম কড়চায়,
রচে যায় নিবিড় নিয়তি কথামালা।
কখন যে ভোর হয় শুনে গীত-পালা,
বেলাশেষে খুলি অবগুণ্ঠন-
বলি, হরিষে বিষাদ পশিছে করুণায়।
ওহ, সে অবনিকূলে নিত্য শঙ্কুলতায়,
আবীরের অধর বেয়ে নামে ভাঙা ঢেউ,
বলি, তুমি কি আমার নহ? তুমি অন্য কেউ?
লেখক: কবি, কলামিস্ট ও অধ্যাপক, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়