:: হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
হবিগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ ও পদযাত্রায় গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এতে ৩০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।
শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জ শহরের পৌরসভা রোড থেকে শায়েস্তানগর পয়েন্ট পর্যন্ত পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের এ সংঘর্ষ হয়।
জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক কাউছার আহমেদ জানান, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে শায়েস্তানগরস্থ দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করে। নেতাকর্মীরা তাতে বক্তব্য রাখেন। একটি বিএনপি নেতাকর্মীদের পদযাত্রা শায়েস্তানগর পয়েন্ট থেকে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশের সময় পুলিশ বিনা কারণে মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তে থাকে। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে বিভিন্নভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পুলিশের ভাষ্য, পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়েছে। সংঘর্ষে হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ১০-১২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ প্রায় ৮ থেকে ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বিকেল চারটায় হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে। এর আগে বিএনপির নেতা-কর্মীরা শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় অবস্থিত বিএনপির জেলা কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন। বিকেল পাঁচটার দিকে সমাবেশস্থল থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জি কে গউছের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়কে আসা মাত্রই হবিগঞ্জ সদর থানার একদল পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একসময় উভয় পক্ষ মারমুখী হয়ে উঠলে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসও ছুড়ে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। দলের অপর একটি অংশ শহরের শায়েস্তানগর মোড়ে অবস্থান নিয়ে একইভাবে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া খেয়ে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে এবং পৌরসভার সামনে এসে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ পুনরায় সংগঠিত হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে। থেমে থেমে এ সংঘর্ষ প্রায় দুই ঘণ্টা চলতে থাকে। পুলিশ মুহুর্মুহু কয়েক শ গুলি ছুড়ে। এ সময় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে সংঘর্ষের পুরোটা সময়।
সংঘর্ষকালে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজেয় চন্দ্র দেবসহ পুলিশের ১০ থেকে ১২ সদস্য আহত হন। আহত হন বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে মনিরুজ্জামান চৌধুরী, রনি, সাজিদুর রহমান, পলাশসহ ১৫ জন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আহত ব্যক্তিদের অনেকেই গ্রেফতার এড়াতে জেলা সদরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। সংঘর্ষস্থল থেকে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীসহ ৮ থেকে ১০ জনকে আটক করেছে।
সংঘর্ষের আগে দলীয় সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছে বিএনপি, আর গাড়িতে আগুন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির আন্দোলন করে বাধাগ্রস্ত করতে তারা এমন ঘৃণ্য পথ বেছে নিয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি চায় বাংলাদেশের মানুষ ভোটকেন্দ্রে ফিরে আসুক। আমার ভোট আমি দিবো যাকে খুশি তাকে দিবো। বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতেই বিএনপি আন্দোলন করছে। ইনশাআল্লাহ বাংলাদশের গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা না করে বিএনপি ঘরে ফিরে যাবে না।
হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো: মিজানুর রহমান চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্থফা রফিক, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাজী নুরুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বেলাল, শায়েস্তাগঞ্জের মেয়র ফরিদ আহমেদ অলি, বিএনপি নেতা আজিজুর রহমান কাজল, নাজিম উদ্দিন শামছু প্রমুখ।