:: কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক সমুদ্র উপকূলে ডুবন্ত ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা হয়েছে।
মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার নিহত সামশুল আলমের স্ত্রী রোকিয়া আকতার বাদী হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে মামলা করেন। সামশুল আলম ডুবিয়ে দেওয়া ট্রলারটির মালিক।
মামলায় মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়নের মৃত সামশুল আলমের ছেলে কামাল হোসেন ওরফে বাইট্যা কামালকে ১ নম্বর, কামালের ভাই আনোয়ার হোসেনকে (৪০) ২ নম্বর, বাবুল মাঝি ওরফে শুক্কুর কোম্পানিকে ৩ নম্বর ও মহেশখালীর মোহরাকাটার করিম সিকদারকে (৫৫) ৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৫০-৬০ জনকে। তাঁদের মধ্যে কামাল হোসেন ওরফে বাইট্যা কামাল ও করিম সিকদারকে আজ বিকেলে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, কী কারণে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তিনটি বিষয় সামনে রেখে জেলা পুলিশের পাঁচটি দল ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চালাচ্ছে। এ ঘটনায় নিহত শামসুল আলম মাঝির সঙ্গে পূর্বশত্রুতা, নিহতরা জেলে নাকি জলদস্যু, নাকি মাদকের লেনদেন নিয়ে তারা খুন হয়েছেন, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলারমালিক নিহত সামশুল আলমের নামে হত্যা ও মাদকের পৃথক মামলা রয়েছে। তার সহযোগী হিসেবে পরিচিত খুন হওয়া নুরুল কবিরের নামেও অস্ত্র ও ডাকাতি প্রস্তুতির মামলার তথ্য মিলেছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ভাসমান ট্রলারে অর্ধগলিত ১০টি লাশের রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ চলছে। উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর পরিচয় শনাক্তে প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে পুলিশ ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। লাশের দাবিদার স্বজনদের কাছে লাশগুলো হস্তান্তরও করা হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাকী চারটি লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। ওই চারজনের লাশ কক্সবাজার সদর হাসাপাতালের হিমাগারে রেখে ডিএনএ নমুনা ইতোমধ্যেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশের অন্য ইউনিটের পাশাপাশি জেলা পুলিশের পাঁচটি বিশেষ চৌকস টিম প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। টানা ৪৮ ঘণ্টা অভিযানে সোর্স ও গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাইট্টা কামাল ও করিম সিকদারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তারা এজাহার নামীয় ১ নম্বর ও ৪ নম্বর আসামি।
এই ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ১০টি মরদেহের মধ্যে শনাক্ত হওয়া ছয়জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাতে মহেশখালী এবং চকোরিয়ায় পৃথক জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হয়। এদিন রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে নিহতদের পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. শাহিন ইমরান ও পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান।
হস্তান্তর করা ৬ জেলে হলেন- মহেশখালীর শামসুল আলম, শওকত উল্লাহ, মো. গনি ওসমান, নুরুল কবির, চকরিয়ার মো. তারেক ও মো. শাহজাহান।