:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৬ বছর। শনিবার (১৪ মে) অস্ট্রেলিয়ার সময় রাত ১১টার দিকে টাউন্সভিল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কুইন্সল্যান্ড পুলিশ। এ নিয়ে ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার তিনজন ক্রিকেটার মারা গেল।
অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের মৃত্যুতে ক্রীড়াজগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে জানা গেছে যে রাত ১১টার পর এলিস রিভার ব্রিজের কাছে হার্ভে রেঞ্জ রোডে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন সাইমন্ডস। গাড়িটি রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে এবং দুর্ঘটনা ঘটে। জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাইমন্ডসকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে তার আঘাত গুরুতর হওয়ার কারণে সাইমন্ডসের মৃত্যু হয়। ফরেনসিক ক্র্যাশ ইউনিট এই দুর্ঘটনার তদন্ত করছে।’
পুলিশ এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু সূত্র নিশ্চিত করেছেন, দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তি সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। এ ব্যাপারে পেট্রল ইন্সপেক্টর গ্যাভিন ওটস বলেছেন, দুর্ঘটনার কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে এখন পর্যন্ত যা দেখা গেছে তাতে মদ্যপানের কোনো নমুনা দেখা যায়নি।
ওটস বলেছেন, ‘আশপাশের মানুষ দুর্ঘটনার শব্দ শুনেছেন। তাঁরাই প্রথমে দুর্ঘটনাস্থলে এসে জরুরি সেবার মানুষদের খবর দিয়েছেন।’ ইন্সপেক্টর দাবি করেন, সাইমন্ডস গাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন বা ছিটকে পড়েছিলেন দুর্ঘটনায়। প্যারামেডিক তাঁকে গাড়ির বাইরেই শুশ্রূষা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
ওটস জানিয়েছেন, পুলিশ প্রথমেই বুঝতে পারেননি, আহত ব্যক্তি সাইমন্ডস। মৃত্যুর পর তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে পুলিশ, ‘পুলিশ যখন পৌঁছায়, প্যারামেডিক তার আগেই শুশ্রূষা দেওয়ার চেষ্টা করছিল, একটু পরই মারা যান তিনি।’
নিউজ কর্পোরেশনের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, সাইমন্ডের পরিবার একটি বিবৃতি জারি করেছে। তারা সাইমন্ডসের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং জনগণের সহানুভূতি ও শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে। তবে পরিবারের গোপনীয়তাকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
শেন ওয়ার্ন ও রড মার্শের মৃত্যুর পর অস্ট্রেলিয়ার খেলার জগতে এটি আরেকটি শোকাবহ ঘটনা। গত ৪ মার্চ একই দিনে মৃত্যুবরণ করেছেন মার্শ ও ওয়ার্ন।
সাইমন্ডসের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করছে কুইন্সল্যান্ড পুলিশ। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তিনি হার্ভে রেঞ্জের কাছাকাছি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
১৯৯৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি বিশ্বকাপ জেতেন সাইমন্ডস। এর মধ্যে আছে ২০০৩ সালের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজিরও। সেই তারকার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট।
এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান হ্যান্ডারসন জানিয়েছেন, ‘অ্যান্ড্রু তার প্রজন্মের অন্যতম মেধাবী খেলোয়াড়। সে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে। কুইন্সল্যান্ডের ক্রিকেটের উন্নতিতেও তার অবদান অনস্বীকার্য। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। পাশাপাশি আমরা তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
১৯৭৫ সালে বার্মিংহামে জন্মগ্রহণ করা সাইমন্ডসের ইংল্যান্ডের হয়েও খেলার সম্ভাবনা ছিল। ১৯৯৫ সালে গ্লুচেস্টারশায়ারের হয়ে ১৬টি ছক্কাসহ ২৫৪ রান করলে ইংল্যান্ডের ‘এ’ দল থেকে ডাক পান তিনি। কিন্তু সাইমন্ডস সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। খেলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। ১৯৯৮ সালে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় তার।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতারদের সমন্বয়ে গড়া বোলিং ইউনিটের বিপক্ষে ১২৫ বলে ১৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। ওয়ানডেতে এ অলরাউন্ডারের সেঞ্চুরিসংখ্যা ৬টি।
দেশের হয়ে ২৬টি টেস্ট, ১৯৮টি ওয়ানডে ও ১৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন সাইমন্ডস। টেস্টে ১ হাজার ৪৬২, ওয়ানডেতে ৫ হাজার ৮৮ ও টি-টোয়েন্টিতে ৩৩৭ রান করেন তিনি। তিন ফরম্যাটে তার উইকেটের সংখ্যা ১৬৫।