:: আবু রুশদ ::
পরীক্ষাকে ভয় পেলে পরীক্ষর্থী পরাজিত হয়, কি আছে দুনিয়ায়!
১৯৮১ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেই ক্যাডেট কলেজ থেকে। কেন্দ্র পড়েছিল জেলা স্কুলে। জীবনে যতো পরীক্ষা দিয়েছি তার মধ্যে এসএসসি পরীক্ষাকে মনে হয়েছে সবচেয়ে আজাবের! অবশ্য এর আগে বৃত্তি পরীক্ষাকে একটা অযথা সন্ত্রাস বলে মনে হয়েছে বৈকি! এসব কথিত বৃত্তি পরীক্ষা শিশুদের মনে লেখাপড়া নিয়ে ভীতি সৃষ্টি ছাড়া আর কি করেছে জানি না। যাহোক, এসএসসি’ র পর আর কোন পরীক্ষায় গা লাগাইনি!
এইচএসসি’র সময় হাওয়া খেয়ে বেড়িয়েছি। পরীক্ষা দিয়ে এসে কলেজ লাইব্রেরী থেকে ইস্যু করা রসায়ন ও অংকের বই ছিঁড়ে কুটিকুটি করেছি! আবার ফাইন দিয়েছি কলেজ থেকে চলে আসার সময়! আব্বা,আম্মার দুশ্চিন্তা – কি জানি কি রেজাল্ট হয়? দেখা গেল বেশ ভালো নম্বর নিয়েই ফার্স্ট ডিভিশন! খালি অপশনাল বিষয় অংকের দুই পেপারে যথাক্রমে ৩৩ ও ৩৮! দুই বছর কোন অংক করিনি! ক্লাসে সবার কম্পালসরি সাবজেক্ট ছিল অংক, বায়োলজি ছিল অপশনাল! আমারই একমাত্র বায়োলজি কম্পালসরি!
এরপর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যাচেলর ডিগ্রীর পরীক্ষা। ইংরেজি দুই পেপার একইদিনে। আগের বিকালে আমাকে হুকুম দেয়া হলো ফায়ারিং রেঞ্জে যেতে। কোম্পানির ফায়ারিং টিমের ভোমা হিসাবে। কাদা,পানি মেখে ফিরে এলাম রাতে। গোসল করে সটান ঘুম। বাংলা দুই পেপার ছাড়া সব বিষয় ছিল ইংরেজিতে। ইউরোপীয়ান হিস্ট্রি পরীক্ষার আগের দিনও হুকুম পালন করতে হলো। সাধারণ ব্যাচেলর সাবজেক্টের পাশাপাশি মিলিটারি সাবজেক্টের পরীক্ষাও চলছে। নো টেনশন। পরীক্ষা দিয়ে ক্যান্টিনে যাই। চা, সিগারেট খাই। একাডেমি থেকে কোর্সের প্রথম দিকে থেকে,ক্রস বেল্ট হোল্ডার হিসাবে কমিশন পেয়েছি।
ওই এএসসি’র পর কখনো টেনশন নেইনি। ১৯৮৬ সালে যশোর সেনানিবাসে বেসিক কোর্স করার সময় বিশ্বকাপ ফুটবল চলছে। ফাইনাল পরীক্ষাও চলছে। বদখত সব সাবজেক্ট। ইলেকট্রনিক্স,ইলেকট্রিসিটি এন্ড ম্যাগনেটিজম, মডার্ন কমিউনিকেশন ইত্যাদি। আমি ও আমার কোর্সমেট মেজর জেনারেল (অব.) বারী টিভি রুমে বিশ্বকাপ দেখছি! ম্যারাদোনার সেই বিখ্যাত গোল দেখছি! অন্যান্য সময় কাটছে প্লেবয় ( বহু কসরতে ঢাকার নীলক্ষেত থেকে কেনা) ম্যাগাজিনের খাপসুরত আওরত দেখে নয়তো ফোবি কেটস, ব্রুক শিল্ডসের মুভি দেখে! বারী এরমধ্যে অফিসার্স মেসের টিভি রুমে টম এন্ড জেরি কার্টুন চালু করে দিয়েছে! বিড়াল টম ও ইঁদুর জেরির কার্টুন দেখতে দিন দিন ভিড় বাড়ছে! এরমধ্যে নেশা চাপলো সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও যায় যায় দিন পড়ার। কি আছে দুনিয়ায়! কোন পরীক্ষায় খারাপ করিনি জীবনে!
এখন ভাবি এসএসসি’তে কেন একটু হলেও সিরিয়াস ছিলাম! কারন, ওটা টার্নিং পয়েন্ট।বয়সও থাকে কম। গার্জিয়ান ও শিক্ষকরা দেন অযথা চাপ। এতে টেনশন বেড়ে যায়। পরীক্ষাকে ভয় পেলে পরীক্ষার কাছে পরীক্ষার্থী পরাজিত হয়। পরীক্ষার্থীকে থাকতে হবে খোশ মেজাজে, ভয়হীন অবস্থায়।
আমি আমার ছেলে ও মেয়ে কখন কি পড়েছে তার খবর নেইনি। পরীক্ষা কেমন দিয়েছে জিজ্ঞেসও করিনি। কোন বিষয়ে পড়বে তা ঠিক করে দেইনি। ওরাই সব নিজেরা করেছে। পরীক্ষার আগের রাতে কার্টুন দেখেছে,গেমও খেলেছে। আল্লাহ’র রহমতে দুইজনের রেজাল্ট ও এবং এ লেভেলে ( কেমব্রিজ) অনেক, অনেক ভালো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্টও আশাতীত হয়েছে।
আমাকে মুরুব্বিরা জোর করে বিজ্ঞান বিভাগে পড়িয়েছেন। কখনও এটা আমার মন মেনে নেয়নি! তাই রাগে কলেজে বই ছিড়েছিলাম! মিলিটারি একাডেমিতে গিয়ে জোরাজুরি করে মানবিক বিভাগ নিয়েছিলাম ও প্রথমও হয়েছিলাম ওই বিভাগে।
আপনার সন্তানকে সহজ থাকতে দিন। নিজের টেনশন তার উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের টেনশনে ফেলে দিবেন না। জোর করবেন না। পরীক্ষা কেমন হলো বলে পরীক্ষার পর আরেকবার ক্লান্ত বাচ্চাটার পরীক্ষা নিবেন না। আপনার পছন্দের সাবজেক্টেই বাচ্চাটাকে পড়তে হবে এমন স্যাডিস্ট, গাড়লের আচরণ করবেন না। কি আছে জীবনে। সবাইকে আইনস্টাইন হতে হবে? না।
লেখক : সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের প্রধান সম্পাাদক