:: আরিফুল হক ::
দাও, আরও দাও! কথা দুটির সাথে দাউদাউ শব্দের যেন ধ্বনিগত একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
হ্যাঁ ! বলছিলাম ‘লোভের’ কথা। আজকের বিশ্ব লোভের আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে। যেদিকে তাকাই শুধু ‘দাও’ দাও’! আরও দাও! চাহিদার যেন শেষ নেই। যত পাই তত চাই। পৃথিবীটা হাতে এসে গেলেও, আর একটা পৃথিবী আমার চাই।
শাস্ত্রে ষড়রিপুর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য্য। আমার মনে হয় রিপু একটাই , সেটা হচ্ছে লোভ। আর অন্য পাঁচজন তার অনুষঙ্গ। অর্থাৎ ‘রিপু’ মানে যদি শত্রু হয় ,তাহলে বাকি পাঁচ শত্রুর আবির্ভাব ঘটেছে ঐ ‘লোভ’ মানে জাগতিক পাওয়া বা ছিনিয়ে নেয়ার ইচ্ছা থেকেই।
লোভ থেকেই আসে ‘কাম’ অর্থাৎ ভোগকরা বা রাজা হওয়ার ইচ্ছা। আসে ‘ক্রোধ’ অর্থাৎ রাগ। ‘মোহ’ বা অজ্ঞানতা, ‘মদ’ বা আমিত্ব এবং ‘মাৎসর্য্য’ অর্থাৎ হিংসা। তাহলে লোভই হচ্ছে মানুষের অন্যতম এবং এককতম শত্রু।
লোভীরা মানুষের জীবনের সুখ কেড়ে নেয়,তারা হালাল হারাম বিবেচনা করেনা, সদাই অন্যের সম্পদের দিকে হাঁকরে তাকিয়ে থাকে। সম্পদ অর্জনের জন্য মানুষ হত্যা, প্রকৃতি হত্যা, দেশ বিরান, এমনকি পৃথিবী বিনাশ করতেও তারা পিছপা হয়না, অপরাধ মনে করেনা।
কথায় আছে , লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। লোভ আমাদের মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। লোভীরা বিলিয়ন বিলিয়ন টন বর্জ্য, মেরিন বর্জ্য, ক্রুড অয়েল ফেলে, অস্ত্রপরীক্ষা চালিয়ে সমুদ্রের পানি দূষন ঘটিয়েছে। লোভ, রাসায়নিক বোমা, আনবিক বোমার অমানবিক ব্যবহার এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল দূষিত করে ফেলেছে। লোভ , অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নেমে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট এবং জীব বৈচিত্র ধ্বংস করে ফেলেছে। বর্তমানে আমরা এক দূষিত পৃথিবীতে বাস করছি।
আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে বলছেন, ‘ আমি প্রকৃতিকে বিস্তৃত করে দিয়েছি , তাতে আমি পর্বতমালাকে পেরেকের মত লাগিয়ে দিয়েছি যাতে ভারসাম্য ঠিক থাকে, এবং আমি তাতে প্রতিটি জিনিষ সুপরিমিতভাবে উৎপাদন করেছি ’ (সুরা হিজর: ১৯)।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ এক ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যেই একটা পরিমিতিবোধ আছে । মানুষের লোভ সেই ভারসাম্য এবং পরিমান ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে সর্বত্রই বিশৃঙ্খলা , নৈরাজ্য আর বিপর্যয়। আর সেই বিপর্যয়ের কারনেই আ্মাজনের মত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বনাঞ্চলসহ আরও ৮ হাজার অগ্নিকান্ডের ঘটনা পৃথিবীতে শতাব্দীকালের সর্বোচ্চ অগ্নিকান্ডের ক্ষয়ক্ষতিতে পরিনত হয়েছে।
প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করায়, ভূমিকম্প, টাইফুন, হ্যারিকেন, সুনামী, ভলক্যানো, মাড ভলক্যানো,ওয়াইল্ড ফায়ার, তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ বহু বিপর্যয়ে মানুষ এবং জীব বৈচিত্র্য উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
মানুষের লোভই বায়ুদূষণ সৃষ্টি করে, প্লেগ, পোলিও, ডেঙ্গু, সার্স , ইয়েলো ফিভার, ফ্লু , চিকনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস এজমা, এইডস, হার্টের অসুখ এবং বর্তমানের বিশ্ব মহামারী নামে পরিচিত করোনা ভাইরাস সৃষ্টি করে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে।
আল্লাহর নবী বলেছেন, ‘ পাপী লোক যখন গোত্রের নেতা হয়, অসৎ ও নিকৃষ্ট লোক যখন জাতির চালক হয়, যখন মদ্যপানের আধিক্য ঘটে, তখন লূ-হাওয়া, ভূমিকম্প , ভূমিধস, শিলাবৃষ্টি, আকৃতির বিকৃতি ঘটা ইত্যাদি আজাব একটার পর একটা আসতেই থাকবে’ (হজঃ আবুহুরা্য়রা রা: তিরমিজি )।
আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাব, আজ পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রই অসৎ, লোভী, নিকৃষ্ট পাপীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা পাপ করতে করতে সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। তারা আল্লাহর দল বাদ দিয়ে শয়তানের পক্ষ নিয়ে আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘তুমি বলে দাও, আল্লাহ তোমাদের উপর থেকে অথবা পায়ের নীচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম। অথবা তোমাদের দল উপদলে বিভক্ত করে এক দলকে অন্য দলের শাস্তির স্বাদ গ্রহন করাতেও সক্ষম (আনআম :৬৫)’।
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘তারা কি দেখতে পায়না প্রতি বছর তাদের বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেলে একবার দুবার বিপর্যস্ত করা হচ্ছে তার পরও তারা বিরত হয়না, শিক্ষাও নেয়না(সুরা তাওবা: ১২৬)।
আরও বলছেন, ‘জনপদের মানুষগুলো কি নির্ভয় হয়ে ধরে নিয়েছে যে আমার আজাব (শাস্তি) তাদের উপর মধ্যদিনে এসে পড়বেনা যখন খেলা-তামাশায় মত্ত থাকবে। (সুরা আরাফ: ৯৮)।’
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত শাস্তির দিন হয়তো মানুষের সামনে এসে গেছে। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৪ কিলোমিটার বিস্তৃত আকারের বিশাল এক গ্রহখন্ড , ৩১ হাজার ৩২০কিঃমিঃ বেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে।পৃথিবীর সাথে এর সংঘর্ষ হলে সম্পূর্ণ মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে (ব্রিটেনের এক্সপ্রেস নিউজ)।
তবে এটাই কি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে শেষ শাস্তি যা তিনি; নূহের জাতি, আদ, সামূদ জাতি, ইব্রাহিম ও মাদইয়ানবাসীদের জন্য নির্ধারিত করেছিলেন ?
আল্লাহ কি মানুষের ৭৮ অঙ্গ ৬টি ইন্দ্রিয় সীলমোহর করে বন্ধ করে দিয়েছেন ? তারা কী কিছুই দেখতে, শুনতে বা অনুভব করতে পারছেনা ?
লেখকঃ নাট্য ও চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা