:: মুহাম্মদ শামীম ::
আপনার অন্তরকে প্রতিশোধ ও ঘৃণা থেকে নিরাপদ রাখুন। এগুলো যেন আপনাকে গ্রাস করতে না পারে। প্রতিহিংসাপরায়ণ আত্মার পরিনতি করুণ হয়। এর পরিবর্তে ক্ষমা করতে শিখুন। ক্ষমা সত্যের মতোই সুন্দর এবং পবিত্র।
ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে, ‘Tit for Tat’ অর্থাৎ যে যেমন তার সাথে তেমন আচরণ করা উচিত। অন্যদিকে ইসলামে রয়েছে, ‘Mercy for Tat’ অর্থাৎ আঘাতের পরিবর্তে ক্ষমা৷ একবার চিন্তা করে দেখুন তো, আঘাতের জবাবে যদি আঘাতই করা হয়; সেই সংঘাত কি কখনো বন্ধ হবে? এটা ব্যক্তির ভেতরে যেমন অস্থিরতা তৈরি করে তেমনি সমাজে এর প্রভাব অত্যন্ত খারাপ। এর দ্বারা সমাজ, প্রতিবেশী সবার মধ্যে এক ধরনের প্রতিশোধমূলক, প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণের প্রকাশ ঘটে। যার নেতিবাচক ফল আমাদেরকেই ভোগ করতে হয়। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিন্তু Tit for Tat এর ফলাফল।
অন্যদিকে, মক্কা বিজয়ের পরে আমরা দেখতে পেলাম এক বিরল দৃষ্টান্ত। সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। একই ধরনের দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই, ক্রসেড যুদ্ধে সম্মিলিত খৃষ্টানদের সেনাপতি রিচার্ডের প্রতি মুসলিম সেনাপতি সালাহউদ্দীনের বিস্ময়কর মহানুভবতা এবং সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা।
পরবর্তীতে ১৯১৮ সালে বৃটিশ সেনাপতি এলেনবি এসে সালাউদ্দীনের কবরে লাথি মেরে বলেছিলেন, ‘We came back Salahuddin! ‘ একইভাবে ১৯২০ সালে ফরাসি সেনাপতি গুরাউড এসে কবরে লাথি দিয়ে বলেছিলেন, ‘Awake, Salahuddin! We have returned!’ দুটি ঘটনাই আমাদেরকে প্রতিহিংসাপরায়ণতার এক করুণ দৃষ্টান্ত মনে করিয়ে দেয়।
কারো প্রতি আপনার প্রচন্ড অভিমান কিংবা রাগ থাকতেই পারে। কিন্তু প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণতা কোন কিছুর সমাধান নয়। আপনি এখন এই মুহুর্তে যে বিষয় নিয়ে যতটা রেগে আছেন, ঠিক এক ঘন্টা পরে একই বিষয়ে আপনার সমপরিমাণ রাগ কিংবা অভিমান কখনোই থাকবে না। একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন তো, রাগের বশে, ক্ষোভে কিংবা প্রচন্ড অভিমানে আপনি যে কাজগুলো আজ থেকে কয়েক বছর আগে করেছিলেন; এই সময়ে এসে সেগুলো কি আপনার সঠিক মনে হয়? আমি নিশ্চিত এর উত্তর হবে, ‘অবশ্যই না’!
সত্য সুন্দর।
ক্ষমা মহৎ গুণ।
আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন।
আসুন আমরা ধৈর্যশীল হই এবং ক্ষমার চর্চা করি।