:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাককে যুক্তরাজ্যের ৫৭তম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। বাকিংহাম প্যালেসে রাজার কাছ থেকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণও পেয়েছেন তিনি।
এর মধ্য দিয়ে গত ২০০ বছরের ইতিহাসে ব্রিটেনের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই রাজনীতিক।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হতে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১১টার দিকে বাকিংহাম প্যালেসে যান ঋষি সুনাক। সেখানে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সাথে সাক্ষাৎ করেন তিনি। কিং চার্লসের সাথে সাক্ষাতের পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। গত দেড় মাসের মধ্যে ব্রিটেনের ৩য় সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন ৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাক।
বাকিংহাম প্যালেসের ১৮৪৪ কক্ষে রাজা তৃতীয় চার্লসের সাথে ঋষি সুনাকের বৈঠক হয়।
শুল্ক হ্রাসের পরিকল্পনা ঘিরে তৈরি হওয়া অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া লিজ ট্রাসের স্থলাভিষিক্ত হলেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি।
ব্রিটেনের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ট্রাস। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৩টা) ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বিদায়ী ভাষণ দেন লিজ ট্রাস। তার আগে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে বিদায়ী বৈঠক করেন তিনি।
লিজ ট্রাস হঠাৎ পদত্যাগ করলে শূন্য হয় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদ। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনে কেউ শক্ত চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি সুনাককে।
এর মাত্র দেড় মাস আগেই প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে দেখা করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন ট্রাস। কিন্তু অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত সপ্তাহে পদত্যাগের ঘোষণা দেন লিজ। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছাড়ার সময় নতুন সরকারপ্রধান ঋষি সুনাকের জন্য শুভকামনা জানান লিজ ট্রাস।
এ সময় নিজের বিতর্কিত নীতির সাফাই গান তিনি। বলেন, যুক্তরাজ্য এখন একটি ঝড়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। এসময়ে কঠিন সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। ইউক্রেনের প্রতি লন্ডনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন, ট্রাস।
লিজ ট্রাস আরও বলেন, দ্রুত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে হাজারও মানুষকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছি আমরা। আমি এখনও বিশ্বাস করি, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের।
৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাকের জন্ম ১৯৮০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে। তার বাবা যশবীর সুনাক জন্মগ্রহণ করেন কেনিয়ায়। তার মা ঊষা সুনাক জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন তাঙ্গানিকায়, যা বর্তমানে তানজানিয়ার অংশ। ঋষির দাদা-দাদি অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন ও ১৯৬০ এর দশকে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। যশবীর সুনাক যুক্তরাজ্যে একজন জিপি (জেনারেল প্র্যাকটিশনার) হিসেবে ও ঊষা সুনাক ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ঋষি সুনাকই সবার বড়।
ঋষি সুনাকের মা-বাবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও তারা থাকতেন পূর্ব আফ্রিকায়। সেখান থেকেই তারা ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। তার বাবা সেখানে চিকিৎসক ছিলেন। মা একটি ফার্মেসি চালাতেন। ফলে পরিবার ছিল বেশ সচ্ছল। নামকরা প্রাইভেট স্কুল উইনচেস্টার কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। গ্র্যাজুয়েশন করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ভারতীয় ধনকুবের এবং আইটি সেবা কোম্পানি ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির মেয়ে অক্ষতার সঙ্গে। তারপর প্রেম এবং পরিণয়। দুই কন্যা সন্তান রয়েছে এ দম্পতির।