:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে পদ্মা ব্যাংক। একীভূত হওয়ার পর এটি এক্সিম ব্যাংক নামেই ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সোমবার চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, এক্সিম ব্যাংক ও বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিমসহ তিন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, একীভূত করার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো চাপ ছিল না। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ ছিল। দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে একীভূত করা হয়েছে। আমানতকারীদের কোনো সমস্যা হবে না। সবাই নিরাপদে থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে দুই পদ্ধতিতে একীভূত করা হয়। একুইজিশন করি নাই, মার্জ করেছি। একটা সবল ব্যাংক এবং তুলনামূলক একটু দুর্বল ব্যাংকের মধ্যে মার্জ হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের মানবসম্পদ যেটা রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন কর্মী। তাঁদের কেউ চাকরি হারাবেন না। সবাই কর্মরত থাকবেন এক্সিম ব্যাংকে। আমাদের আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ক্ষতি হবে না। আগের মতোই চলবে।’
পরিচালক বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এমডি বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তারা দুজনই ডায়নামিক আমরা চেষ্টা করব একটা ভালো সম্মাননীয় অবস্থানে তাদের রাখতে।’
পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পৌনে চার হাজার কোটি টাকা ও সরকারি ব্যাংকের দায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা—এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যেহেতু পদ্মাকে মার্জার করা হলো এর ফলে পদ্মা ব্যাংকের সকল দায়-দেনা এখন এক্সিম ব্যাংক নিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া দুই ব্যাংকের এসেটও আছে। এক্সিম যেহেতু পদ্মার জাল ফেলেছে আশা করছি আরও সবল হবে অর্থনীতি।
শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক নিয়ে তিনি বলেন, ‘এক্সিম ব্যাংক শরিয়াভিত্তিক। পদ্মা ব্যাংক সাধারণ হলেও আমরা (এক্সিম) যেহেতু তাদের মার্জ করেছি, তাই তারাও শরিয়াভিত্তিক হবে। এক্সিম ব্যাংকের প্রতিটি সূচক ভালো অবস্থানে আছে আশা করব ভালো হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংক দুটি একীভূত হতে চুক্তি করেছে। এরপর তারা আবেদন করবে। তাদের প্রস্তাব অনুমোদিত হলে নিরীক্ষা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপর একীভূত হওয়ার অনুমোদন দেওয়া হবে। তখন নতুন একটি ব্যাংক চালুর অনুমতি দেওয়া হলে বিলুপ্ত হবে পদ্মা ব্যাংক। তার আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মে চলবে ব্যাংক দুটি।
পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়। একীভূত হওয়ার বিষয়ে পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ২০১৩ সালের চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন পায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জনতার মঞ্চের সাবেক বিতর্কিত সচিব মহিউদ্দিন খান আলমগীর -এর মালিকানায় থাকা সাবেক ফারমার্স ব্যাংক। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকের মধ্যে এই ব্যাংকেই বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে কার্যক্রম শুরুর কয়েক বছরের মধ্যে। এরপর ব্যাংকটির পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে করা হয় পদ্মা ব্যাংক। যা দীর্ঘ সময় আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ী চৌধুরী নাফিজ শারাফাত এর মালিকানায় ছিল। সম্প্রতি তিনি পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেন।
অন্যদিকে, ১৯৯৯ সালে এক্সিম ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ইসলামী ধারার একটি ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকটি ২০০৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৯ সালে ফারমার্স ব্যাংক থেকে পদ্মা ব্যাংক হওয়ার সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৭০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ৩ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৬৪ শতাংশ।
গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত দাঁড়ায় ছয় হাজার ১৪১ কোটি টাকা। এই আমানতের মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) আমানত মোট এক হাজার কোটি টাকা। আর সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড ও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ৭৬০ কোটি টাকা মিলিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত দুই হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর জানান, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছায় একীভূত না হলে আগামী বছর থেকে তাদের চাপ দিয়ে একীভূত করা হবে।