দেশের অন্যতম প্রধান জাহাজ নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড সুদান সরকারের জন্য এএসডি টাগবোট রপ্তানীর নতুন কার্যাদেশ পেয়েছে।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই টাগবোটের রপ্তানীমুল্য ৪৮ মিলিয়ন এইডি। ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি কর্তৃক ড্রয়িং এবং ডিজাইন অনুমোদন সাপেক্ষে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন এফএমসি ডকইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ।
এফএমসি ডকইয়ার্ডের চেয়ারম্যান এবং সিইও জনাব মুহাম্মদ ইয়াছিন চোধুরী জানান, আমি সবসময় বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক নতুন বাজার সৃস্টি করতে চেয়েছিলাম, কেবল ইউরোপ আমেরিকা বা মধ্যপ্রাচ্য নয়, আফ্রিকাতে ও যে বাংলাদেশী জাহাজের নতুন বাজার সৃস্টি হতে পারে সেটা প্রমানের একটা তাগিদ ছিল, তাই বাংলাদেশ থেকে সুদানে প্রথম বারের মত জাহাজ রপ্তানী করার সুযোগ পেয়ে আমরা গর্বিত ।
এসময় তিনি আরো বলেন, করোনায় দেশীয় ও বৈশ্বিক বানিজ্যে যে স্থবিরতা ছিল, তা আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠছে বাংলাদেশ । করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান জন্য সরকার গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ কিছুটা হলেও এ মন্দা অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে । কিন্তু সেটাই যথেষ্ঠ নয়, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জাহাজ নির্মাণশিল্প সুরক্ষা দিতে নানা পদক্ষেপ নেয়। যেমন ভারত সরকার ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত জাহাজের রপ্তানি মূল্যের ওপর ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা অনুমোদন করেছে। চীনের উদ্যোক্তারা স্বল্প সুদে ঋণের পাশাপাশি নিজেদের কাঁচামাল ব্যবহারে ভর্তুকি পাচ্ছে। মন্দা থেকে এই ভারী শিল্প খাতকে সুরক্ষা দিতে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয় দেশগুলোতে।
বাংলাদেশ সরকার ও যদি সমমানের সুযোগ সুবিধা দেয়, সেক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন একটি বিশাল ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে, যা দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখবে । জাহাজ নির্মাণে সক্ষমতা থাকার পরও হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করছে। কিন্তু এই খাত যেন এক-দুটি প্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধ না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সরকারী সুযোগ সুবিধার ব্যাবস্থা করা জরুরী । উল্লেখ্য, জাহাজ রপ্তানীর জন্য কয়েকটি দেশের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আরো ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ প্রাপ্তির অপেক্ষায় আছে এফএমসি, করোনার কারণে উক্ত কার্যাদেশ প্রাপ্তিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান এমএমসি কর্তৃপক্ষ ।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদন্ডিতে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেষে প্রায় ৬৫ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড, যা দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিপ ইয়ার্ড হিসাবে স্বীকৃত । অত্যাধুনিক এলটিসি ভেসেল, টিসিভি ভ্যাসেল, অত্যাধুনিক মাল্টি পারপাস ভ্যাসেল, ব্যারাক বার্জ, মাল্টিবীম ইকো সাউন্ডার সংযুক্ত সার্ভে ভ্যাসেল, কন্টেইনার শিপ, অয়েল ট্যাংকার, যাত্রীবাহী জাহাজ, ফিশিং ট্রলার, ড্রেজার, টাগ বোট, পন্টুন সহ মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্মাণ করে এফএমসি। এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও জাহাজ রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ জাহাজ নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান এফএমসি ডকইয়ার্ড এ যাবত সরকারী বেসরকারী স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২০০ টি নতুন জাহাজ তৈরী করেছে এবং বর্তমানে এই ইয়ার্ডে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে । জাহাজ মেরামত এবং জেটি তৈরিতে ও এক পরম নির্ভরতার নাম এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড।