:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
পুলিশের কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে ৪ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১১ অক্টোবর) গত মে মাসে ঢাকা সিটি কলেজের সামনে পুলিশ সদস্যদের লাঞ্ছিত ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা শহিদি হাসান। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম তার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানিতে এ্যানি কিছু বলবেন কি না, বিচারক জানতে চাইলে তিনি বিচারকের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি। কোনো অপরাধ করলে গ্রেফতার করবে। কিন্তু আমাকে থানায় নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা কোন যুগে বসবাস করছি। আমি কি চোর, না ডাকাত। এ্যানি আরও বলেন, রাত তিনটার সময় তারা এসে আমার বাসার দরজা ভাঙছে। আমি বলেছি আমাদের বাসায় ছোট ছোট বাচ্চা আছে। আমাকে যদি গ্রেফতার করতেই হয় আপনারা অপেক্ষা করুন। যেহেতু রাত ৩টা বেজে গেছে আমি ফজরের নামাজ পড়েই আপনাদের সঙ্গে যাবো। তারপরও তারা দরজা ভেঙেছে। ৫ মাস আগের মামলায় আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতোদিন ধরে আমি রাস্তায়ই ছিলাম। কয়েকবার ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়েছি, মিটিং করেছি। তখন কেন ধরল না। রাত তিনটার সময় কেন আমাকে টেনে-হিচড়ে বাসা থেকে বের করে আনবে। আমি একজন হার্টের রোগী। আমি এর বিচার চাই।’
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে গত ২৩ মে পুলিশ সদস্যদের লাঞ্ছিত করেন এবং সরকার পতনের উদ্দেশ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। ওই ঘটনার তথ্য সংগ্রহের জন্য তাকে রিমান্ডে নেওয়া দরকার।’
এ্যানির আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তাওহিদ আদালতকে বলেন, ‘মিথ্যা হয়রানি করার জন্য এ্যানিকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
শুনানিতে এ্যানির পক্ষে অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী, অ্যাডভোকেট মোসলেহ উদ্দিন জসিম, ইকবালসহ অর্ধশত আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। পরে এডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে আসামীকে কখন আটক করা যাবে আর কখন করা যাবে না। অথচ আইনকে অবজ্ঞা করে পুলিশ মধ্য রাতে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে তার বাসগৃহের দরজা ভেঙ্গে আটক করেছে। এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আমরা আদালতে এসব বিষয় তুলে ধরেছি।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ধানমন্ডিতে এ্যানির বাসার দরজা ভেঙে ঢুকে পুলিশ তাকে আটক করে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরের ২৩ মে ধানমন্ডি সিটি কলেজের সামনে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার নেতাকর্মী জড়ো হয়ে পদযাত্রার সমাপনী বক্তব্য শেষে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোটা, ইট-পাটকেল ও ককটেল ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রসহ পুলিশের কাজে বাধাদান, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারকে উৎখাত ও জনসাধারণের জানমালের ক্ষতিসাধন, গণপরিবহন ভাঙচুর ও ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে।
এ সময় পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর হামলা করে এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বিভিন্ন মদপর্যাদার পুলিশ সদস্যরা গুরুতর আহত হন।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, পরে সরকারি সম্পত্তি, জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য আসামিদের ধাওয়া করলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করে।