:: কাফি কামাল ::
[Give back democracy, Return right, Return Justice, Release Begum Khaleda Zia]
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো দিন। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি প্রতিহিংসা চরিতার্থের দিন। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। আজ সে কালো দিনটির তৃতীয় বর্ষে পদার্পন। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচনী ইতিহাসে অপরাজেয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দী জীবনের দুই বছর পূর্ণ হলো। পূর্ণ হল গণতন্ত্র কারাবাসের দুই বছর। সেই সাথে পূর্ণ হলো তার কারামুক্তির জন্য কার্যকর কোন কৌশল বা কর্মসূচি পালনে অক্ষমতার দুই বছর। দিনটির কথা ভাবতেই খুব খারাপ লাগে।
পৃথিবীর ইতিহাসে এই এক অভূতপূর্ব ঘটনা। ৭৫ বছর বয়সেও একজন রাজনীতিবিদ অনির্ধারিত কারাভোগ করতে দ্বিধা করে না। অন্যান্য দেশের রাজনীতিবিদরা ক্ষমতা ছাড়ার পর কারাভোগের ভয়ে দেশ ছেড়ে যান। কিন্তু নিজের সততার প্রতি কত অগাধ বিশ্বাস এই নারীর, তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণতার নিশ্চিত শিকার হবেন জেনেও চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন।
নীলনকশা অনুযায়ী সাজানো মামলার পাতানো রায়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েও ক্ষান্ত হয়নি সরকার। কারাগারে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত করেছে, অমানুষিক পরিস্থিতির মধ্যে রেখেছে। তার নায্য অধিকার জামিনে মুক্তি আটকে রেখেছে ফ্যাসিস্ট সরকারের তাবেদার উচ্চ আদালত। কিন্তু এতকিছুর পরও ইস্পাতকঠিন মনোবলের অধিকারী এই নেত্রীরই একচুল নোয়াতে পারেনি। নানাভাবে প্রভোগ করেও তার কাছে প্যারোলে মুক্তি চাওয়ার মনোভাব জাগ্রত করতে পারেনি। তার এই কারাভোগ কেবলই রাজনৈতিক কারনে। কিন্তু একবার ভাবুন, ৭৫ বছর বয়সী একজন নারী যিনি রাজনীতির মাঠে স্বামীকে হারিয়েছেন, সন্তানকে হারিয়েছেন তারপরও দেশের জন্য, সমাজের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য কতবড় সেক্রিফাইস করতে পারেন? আমার দৃঢ়বিশ্বাস মধ্যরাতের সরকারকে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের হিসাব গুনতেই হবে।
খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে অনেক হুমকি ধামকি দিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা। নেতাকর্মীরা প্রস্তুতির নিয়েছিন রাজপথের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নির্দেশ মেনে নিয়ে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে এমন আন্দোলনে যায়নি। খালেদা জিয়া কারাভোগ করছেন আর তার দলের নেতাকর্মীরা মুক্ত রয়েছেন বিষয়টি এমন নয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে কারাবন্দী করে রেখেছে সরকার। প্রিয় নেত্রীর মুক্তি প্রসঙ্গে তারা প্রতিটি মুহূর্ত অন্ত:দহনে ভুগছেন।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। স্বাভাবিক উপায়ে তার মুক্তি দেবে না সরকার। তার মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। খালেদা জিয়া কেবল বিএনপির চেয়ারপারসনই নন, তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নানামাত্রিক উন্নয়নের রূপকার। দেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার মুক্তির ব্যাপারে দেশের গণমানুষের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষ যদি ফ্যাসিস্ট সরকারের কবল থেকে মুক্তি পেতে চায় তাহলে অবশ্যই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হবেন। অন্যত্থায় নিজেরাই নিজেদের ললাটে ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষতচিহ্ন চিরস্থায়ী করে তুলবেন।
প্রত্যাশার মৃত্যু নেই।
লেখকঃ সাংবাদিক