:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
সর্বশেষ
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে দুর্ঘটনার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। আজ রাত ৯টার দিকে বিকল্প লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
কুমিল্লায় মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় যাত্রীবাহী সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৫ জন। ঘটনার পর থেকে স্টেশন মাস্টার পলাতক।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে যাত্রী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি হাসানপুর রেলস্টেশনের ঢোকার সময় সময় সিগন্যাল পয়েন্টের গড়মিলে আপলাইনের দুই নম্বর লাইনে দাঁড়ানো পার্সেল ট্রেনের পিছন দিয়ে ধাক্কা দিলে ট্রেনের ইঞ্জিন সহ ৭টি ও পার্সল ট্রেনের ২টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ঘটনার পরপরই স্টেশনমাস্টার পালিয়ে যায়।
এ বিষয় ট্রেন যাত্রী জামাল হোসেন বলেন, তার বাড়ি জামালপুর জেলায়। বাড়িতে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে এ ট্রেনে ওঠেন। হঠাৎ ট্রেনটি অনেক কাঁপতে থাকে পরে বিকট শব্দ করে থেমে যায়। দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে অন্য যাত্রীদের উদ্ধার করেন। এতে কেউ মারা যাননি। আহত হয়েছেন অনেক।
দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য আবসার বলেন, ট্রেনের ভেতরে নামাজরত অবস্থায় পড়ে গিয়ে তার নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। কোনোভাবে ট্রেন থেকে ফার্মেসিতে চিকিৎসা নেন। কেউ মারা গেছে কি না তার জানা নেই।
মৌকরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আলমগীর বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে সোনার বাংলার সাতটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে লাইনচ্যুত হয়। এ সময় রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তাকে সেখানে দেখা যায়নি। স্টেশন মাস্টার সোহাগও কর্মস্থল থেকে পালিয়েছে। পরে আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করি।
ওসি জানিয়েছেন, আহতদের উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা-চট্রগ্রাম লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
দুর্ঘটনাকবলিত সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে ছিলেন নির্বাচন কমিশনের ১২ কর্মকর্তা
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলস্টেশনে দুর্ঘটনাকবলিত সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ১২ জন কর্মকর্তা ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রৌশন আরা নিজেও ওই ট্রেনে ছিলেন। তিনি সামান্য আঘাত পেয়েছেন। রৌশন আরা জানান, তাঁরা সবাই চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনের প্রশিক্ষণ শেষে ফিরছিলেন। সবাই এক বগিতেই ছিলেন। অনেকেই আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর তাঁদের টেনে বের করা হয়েছে। তবে ওই মুহূর্তে তিনি সবকিছু ঠিকমতো খেয়াল করতে পারার অবস্থায় ছিলেন না।
সিনিয়র সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম ছাড়াও সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মাদ নাজিম উদ্দিন, সহকারী সচিব মোহাম্মদ আশফাকুর রহমান, আইসিটির সিস্টেম অ্যানালিস্ট মামুনুর হোসেন, নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) হাবিবা আক্তার, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও আবুল কাশেম মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, সহকারী প্রোগ্রামার শুধাংশু কুমার সরকার, এনআইডি উইংয়ের ফারজানা লিজা, রাঙামাটি জেলার এক উপজেলা নির্বাচন অফিসার আমিনুল ইসলাম এবং বাকিরা আইসিটি অনুবিভাগে কর্মরত।
দুর্ঘটনা তদন্তে রেলের ৪ সদস্যের কমিটি
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে আন্তঃনগর সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। কমিটিকে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
রেলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, রেলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ট্রাফিক কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণ তদন্তের পর বলা যাবে। এখনও কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়। তবে একটি ট্রেন অপরটিকে ধাক্কা দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’