:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আগুনে পুড়েছে। গতকাল মধ্যরাতে লাগা আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আজ সকাল প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে।
কৃষি মার্কেট ও নতুন কাঁচা বাজার মিলিয়ে সেখানে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০টি দোকান ছিল। এর মধ্যে আগুনে পুড়ে গেছে অন্তত ৫০০টি। এর মধ্যে ১৮টি জুয়েলারি দোকানও রয়েছে।
মার্কেটের হক বেকারিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। বাতাসে মুহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মার্কেট বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রথমে এসে ভেতরে ঢুকতে পারেননি। এতে চারিদিকে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ার সময় পায়।
আগুনের কারণ সম্পর্কে একই রকম তথ্য দিয়েছেন মার্কেটের নাইটগার্ড মো. দিলশাদ। তিনি বলেন, কৃষি মার্কেটের প্রধান সড়কের পাশের বেকারি পণ্যের দোকান হক স্টোর থেকে প্রথম ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। রাত তখন আনুমানিক সাড়ে ৩টা। দ্রুত তারা বিদ্যুতের প্রধান লাইনটি বন্ধ করে দেন। এরপর নিজেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকেন। সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকেও খবর দেন। অন্তত ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম গাড়ি আসে ঘটনাস্থলে।
নিরাপত্তা প্রহরী মো. দিলশাদ জানান, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছার আগেই ভেতরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। হক স্টোরটিও বন্ধ ছিল। বিদ্যুতের শট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে তার ধারণা।
কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম মনে করেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রথমে মার্কেটে ঢুকতে পারলে এতো দোকান পুড়ত না। কিন্তু মার্কেট বন্ধ থাকায় সেটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘দোকান থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। সবকিছু পুড়ে ছাই।’
ওয়াহিদ নামের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, তিনি রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। এসে দেখেন তখনও তার দোকানে আগুন লাগেনি। তবে একপর্যায়ে তার দোকানও পুড়ে যায়। তার দোকানটি মার্কেটের ভেতরের দিকে হওয়ায় তিনি যেতে পারেননি। তারও দাবি, দুই মার্কেটে পাঁচ ’শর বেশি দোকান পুড়ে গেছে।
কৃষি মার্কেটের নতুন কাঁচা বাজারের মার্কেটের সামনের ও ভেতরের নয়টি করে ১৮টি স্বর্ণের দোকান পুড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, আলিফ জুয়েলার্স, হেনা জুয়েলার্স, দুবাই জুয়েলার্স, সিঙ্গাপুর জুয়েলার্স, মুন জুয়েলার্স, রিয়াদ জুয়েলার্স ও মা জুয়েলার্স আগুনে পুড়ে গেছে।
দুবাই জুয়েলার্সের মালিক আমির হোসেন জানান, তার দুটি জুয়েলার্সের দোকান ছিল। ‘ভোড় চারটায় খবর পেয়ে মার্কেটে আসি। তখনও আমার দোকানে আগুন লাগেনি। মার্কেট বন্ধ থাকায় মালামাল সব সরাতে পারিনি। সামান্য কিছু সরাতে পেরেছি।’
এই ব্যবসায়ী বলেন, মার্কেটে ১৮টি স্বর্ণের দোকান ছিল। সবগুলো পুড়ে গেছে।
সিঙ্গাপুর জুয়েলার্সের আবু কাওশার বলেন, তার দোকানে দুই কোটি টাকার কাছাকাছি মালামাল ছিল। কিছু বের করা গেছে। তবে বেশিরভাগই দোকানে ছিল। এখন দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
স্বর্ণের দোকান ছাড়াও মার্কেটটিতে কাপড়, প্লাস্টিকের মালামাল, ক্রোকারিজ ও ব্যাগের দোকান পুড়েছে।
এর আগে সকালে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাশিদ বিন খালেদ বলেন, রাত ৩টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পান তারা। খবর পেয়ে ১২টি ইউনিট আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে। আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে পরে আরও পাঁচটি ইউনিট যোগ দেয়।
১৭টি ইউনিটের সাড়ে ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা দিতে সেনাবাহিনী ছাড়াও পুলিশ, বিজিবির সদস্যরা যোগ দেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর প্রেস ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মার্কেটের আগুনের সূত্রপাত একটি মুদি দোকান থেকে। আর ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মার্কেটটিতে কোনো অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা ছিল না। আগুন নাশকতা নাকি বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তাৎক্ষণিক আগুনে ক্ষয়ক্ষতি ও পুড়ে যাওয়া দোকানের সংখ্যা তারা জানায়নি। নিরূপণের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড ম্যানটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাও ছিল না। এছাড়া ফুটপাত ও সড়কে বসা দোকান এবং মানুষের ভিড়ের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে। সেখানে পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না। তিনি বলেন, মার্কেটটিতে কোনো সেফটি প্ল্যান নেই। এই মার্কেটেও বারবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে, গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতা প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি সেভাবে তারা সাড়া দেন নাই। মার্কেটটি কিছুটা বঙ্গবাজারের মতো। এখানে ভেতরে যতগুলো রাস্তা এবং বাইরের যে ছোট ছোট রাস্তা পুরোটাই বিভিন্ন মালামালে গাদাগাদি ছিল। এতে বন্ধ ছিল রাস্তা। পুরো মার্কেট শক্ত কলাপবসিবল গেট দিয়ে আটকানো ছিল। নাইট গার্ডদের খুঁজেই পাওয়া যায়নি। এ কারণে ভেতরে ফায়ার ফাইটারদের ঢুকতে বেগ পেতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।