:: রাজশাহী প্রতিনিধি ::
জয়িতা পুরস্কার পাওয়া রাজশাহীর একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা দিল আফরোজ খুকি বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। খুকির বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
রাজশাহীর মাদার তেরেসা ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি মারা যান। তিনি ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছিলেন।
খুকির ভাগ্নে শামসুর রহমান রুমি জানান, দুপুর পৌনে দুইটার দিকে তিনি মারা গেছেন। তিনি নানা রোগে ভুগছিলেন। বিকেলে গৌরহাঙ্গা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
বৃহস্পতিবার রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, বুধবার রাতে খুকি মারা গেছেন। এ খবর শোনার পর আমি সেখানে পরিদর্শনে যাই। খুকুমনির পরিবার যদি তার মরদেহ নিতে চায় তবে দেওয়া হবে। আর যদি তারা কোনো দায়িত্বভার না নিতে চায়, তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধর্মীয় রীতি মেনে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।
খুকির মারা যাবার খবরে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জয়া মারীয়া পেরেরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, আরএমপির বিশেষ পুলিশ সুপার (নগর বিশেষ শাখা) মুহম্মদ আব্দুর রকিব, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (গোপনীয় শাখা) মো. শামসুল ইসলাম।
কিশোরী বয়সে এক বৃদ্ধের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল খুকির। তার সংসারের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র এক মাস। এরপর খুকির আবার বিয়ে হলেও সেই স্বামী মারা যান। ১২ ভাইবোনের মধ্যে কেউই নিঃসন্তান খুকির দায়িত্ব নেননি।
পৈতৃক ভিটায় সামান্য জায়গায় দুটি ঘর বানিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন খুকি। জীবন চালাতে বেছে নেন পত্রিকা বিক্রি। ৪২ বছর ধরে তিনি পত্রিকা বিক্রি করে আসছিলেন। এক সময় খুকি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।
খুকি ৩০ বছরেরও বেশি সময় সংবাদপত্র বিক্রি করেছেন শিরোইল এলাকায়। তার বাড়ির কাছে এজেন্টদের কাছ থেকে খবরের কাগজ সংগ্রহ করে শহরের রাস্তায় পায়ে হেঁটে বিক্রি করতেন। পত্রিকা বিক্রির টাকা তিনি নানা সামাজিক কাজে ব্যয় করতেন। তার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে প্রধানমন্ত্রীর তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু খুকি পত্রিকা বিক্রির পেশা ছাড়তে পারেননি।
গত বছরের ডিসেম্বরে রাজশাহী লক্ষ্মীপুর এলাকায় খবরের কাগজ বিক্রি করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন খুকি। রাস্তা থেকে এক পুলিশ কনস্টেবল তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। গত ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি মাদার তেরেসা হোমে ছিলেন।
২০২০ সালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খুকির জীবন-সংগ্রামের বিষয়টি উঠে আসে। খুকির পাশে দাঁড়ায় জেলা প্রশাসন। ২০২০ সালে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কারও পান তিনি।