:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
গণপরিবহণে শৃঙ্খলা ফেরাতে তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি।
বুধবার সমিতির দপ্তর সম্পাদক সোমদানী খন্দকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এর আগে গত ৮ আগস্ট বিকালে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিদ্ধান্তগুলো হলো-
১. বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চার্ট অনুযায়ী ভাড়া আদায় করতে হবে। চার্টের বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। প্রতিটি গাড়িতে দৃশ্যমান স্থানে ভাড়ার চার্ট অবশ্যই টাঙিয়ে রাখতে হবে।
২. কোনো পরিবহণের গাড়িতে বিআরটিএ’র পুনঃনির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া যাতে আদায় না করা হয়, সে বিষয়ে সভায় মালিকদের সমন্বয়ে ৯টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়। এসব টিম বিআরটিএ’র ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে থেকে সব অনিয়ম তদারকিসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
৩. ঢাকা শহর ও শহরতলী রুটে চলাচলকারী গাড়ির ওয়েবিলে কোনো স্ল্যাব থাকবে না। রাস্তায় কোনো চেকার থাকবে না। এক স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজ পর্যন্ত গাড়ির দরজা বন্ধ থাকবে, খোলা রাখা যাবে না। রুট পারমিটের স্টপেজ অনুযায়ী গাড়ি থামাতে হবে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ভিজিল্যান্স টিমের কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানায় সমিতি।
চট্টগ্রামে গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ে সকাল-সন্ধ্যায়
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর একদিন ভুগিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হলেও সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় চলছে না গণপরিবহন। আবার সকাল ও সন্ধ্যায় যাত্রীর চাপ বাড়লে বাড়িয়ে দেওয়া হয় ভাড়াও।
বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদে মিনিবাসে ভাড়া ছিল ৯ টাকা। সেই ভাড়া গত বছরের শেষের দিকে এক লাফে ৬ টাকা বেড়ে বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা করে। এখন আরও এক দফা বাড়িয়ে ১৮ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। যাত্রীর চাপ থাকলেও ভাড়ার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। যাত্রীরা অসহায়। সব কিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু আমাদের বেতনও বাড়েনি। অন্য যাত্রীদেরও একই ক্ষোভ।
শুধু বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ রুট নয়, নগরীর প্রত্যেকটি রুটেই এভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিএর পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অভিযান চালানো হলেও বাড়তি ভাড়া আদায়ে এই অভিযান তেমন কোনো কাজে আসছে না।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে যেসব বাস চলাচল করে সেগুলোর প্রায় সবই মিনিবাস। মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা। কিন্তু চট্টগ্রামে দুই টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা করে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে আগে প্রতি কিলোমিটারে বড় বাসের ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা থাকলেও তা বাড়িয়ে ২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। মিনিবাসের ভাড়া ছিল ২ টাকা ৫ পয়সা। এখন সেই ভাড়া ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ৪০ পয়সা করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামে এই ভাড়ার হার মানা হচ্ছে না।
অনেক রুটে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেনও। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরে যেসব বাস চলাচল করে সেগুলোর প্রায় সবগুলোই মিনিবাস। স্বাভাবিকভাবে এসব বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা। কিন্তু অনেকেই ১০ টাকা করে নিচ্ছেন। তেলের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে যাত্রীরাও দুই টাকা করে বেশি দিচ্ছেন। তবে আমরা বলে দিয়েছি, যাতে কোনোভাবে সরকার নির্ধারিত ভাড়া চেয়ে যেন বাড়তি ভাড়া নেওয়া না হয়।’
এই পরিবহন মালিক নেতা জানান, বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব গাড়িতে ভাড়ার তালিকা টানানো হবে। তখন কেউ চাইলেই বাড়তি ভাড়া নিতে পারবেন না।
এদিকে, ডিজেলচালিত হিউম্যান হলারগুলোও তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন। নগরীর চকবাজার থেকে আগ্রাবাদ হয়ে ছোটপুল এলাকায় চলাচলে রয়েছে ১ নম্বর রুটের হিউম্যান হলার সার্ভিস। মাহিন্দ্র গাড়িগুলো ডিজেলচালিত। তেলের দাম বৃদ্ধির আগে চকবাজার থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত ১৫ টাকা ভাড়া আদায় করা হতো। এখন ৫ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। অথচ সরকার নির্ধারিত অনুযায়ী ভাড়া বাড়ার কথা সর্বোচ্চ ২ টাকা করে। একই অবস্থা অন্যান্য রুটেও।