:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের ১৩৪ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন। এর মধ্যে ১২৫ কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
১২৫ প্রিজাইডিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণকারী বা নিয়োগকারী দপ্তরকে এক মাসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তা নির্বাচন কমিশনে পত্র মারফত জানাতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
৯৪ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা উদয়ন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. সাইফুল ইসলামকে চাকরি থেকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
সিইসি বলেন, ‘একইভাবে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার ২ নম্বর কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী উপপরিদর্শক (এসআই) তরুণ কুমার, ৫৪ নম্বর কেন্দ্রের এসআই মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, ৫৯ নম্বর কেন্দ্রের এসআই মো. আনিছুর রহমান, ৬২ নম্বর কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী সাদুল্যাপুর থানার এসআই কনক রঞ্জন বর্মন ও ১০৫ নম্বর কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী পঞ্চগড়ের আটোয়ারী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. দুলাল হোসেনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা তথা অসদাচারণের কারণে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে পত্র দিব। কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে।’
সিইসি আরও বলেন, ‘অসদাচারণের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এক মাসের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনে জানাবে।’
সিইসি জানান, নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় দায়ী এজেন্টদের পরবর্তীতে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। সব কেন্দ্রের এজেন্টদের নামের তালিকা সীলকরা অবস্থায় রয়েছে। সেখান থেকে গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে এ তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ পালন করায় ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে পত্র প্রদান করা হবে বলেও জানান সিইসি। তদন্ত প্রতিবেদনে ওই ম্যাজিস্ট্রেটের নাম না থাকায় শুধু মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
এ আসনের পুন:নির্বাচন যথাসময়ে ব্যবস্থা করা হবে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের লিখিত সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
১. তদন্তে প্রমাণিত যে ১২৫টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন, সেসব কর্মকর্তার নামের তালিকা সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণকারী/নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবে। নিয়ন্ত্রণকারী/নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে অবহেলা তথা অসদাচরণের কারণে তাদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে।
২. কেন্দ্র নম্বর ৯৪ এর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, প্রভাষক উদয়ন ডিগ্রি কলেজকে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫(৩) অনুযায়ী চাকরি থেকে ২ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে। সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এক মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করবে মর্মে পত্র দেবে।
৩. একইভাবে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কেন্দ্র নম্বর ২ (তরুণ কুমার, এসআই. গোবিন্দগঞ্জ থানা), কেন্দ্র নম্বর ৫৪ (মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, এসআই গোবিন্দগঞ্জ থানা), কেন্দ্র নম্বর ৫৯ (মো. আনিছুর রহমান, এসআই গোবিন্দগঞ্জ থানা), কেন্দ্র নম্বর ৬২ (কনক রঞ্জন বর্মন, এসআই সাদুল্যাপুর থানা) ও কেন্দ্র নম্বর ১০৫ (মো. দুলাল হোসেন, এএসআই, আটোয়ারী থানা, পঞ্চগড়)-এর পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে -দায়িত্ব পালনে অবহেলা তথা অসদাচরণের কারণে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে পত্র দেবে। কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে।
৪. অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুসারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অসদাচরণের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করার জন্য সচিব নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক পত্র দিতে হবে।
৫. নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সহকারী কমিশনারের নাম জেনে (তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ করা হয়নি) তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ পালনের জন্য ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে পত্র প্রদান করবে।
৬. রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজশাহী) বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য তার বিরুদ্ধে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
৭. এক মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত না করলে কমিশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৬ (২) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৮. সব কেন্দ্রের দায়িত্ব পালনকারী নির্বাচনী এজেন্টদের তালিকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কর্তৃক সিল কৃত ব্যাগে রয়েছে, যেহেতু নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ের ওপর আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই তাই যেসব কেন্দ্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে সেসব কেন্দ্রের ব্যাগ খুলে দায়ী এজেন্টদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, গাইবান্ধা এই তালিকা করবেন। দোষী নির্বাচনী এজেন্টদের পরবর্তী নির্বাচনে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না।
৯. ভবিষ্যতে নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম করা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোটে প্রার্থীদের এজেন্টের অনিয়ম পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। গত ১৬ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘বুথে ঢুকেছে, কোথাও কোথাও বাটন টিপে দিয়েছে। এগুলো দেখেছি। এগুলো তো একেবারেই অসত্য নয়। আইনে প্রার্থীদের লোক করা মানে তো প্রার্থীর করা। প্রার্থীর এজেন্ট মানেই প্রার্থী। একই তো কথা। প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টের অপরাধ প্রার্থীর ওপর বর্তায়।’
গত জুলাইয়ে জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই উপনির্বাচনের শেষ করা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপনির্বাচনে সাঘাটা উপজেলায় ৮৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ৫৭টিসহ ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছিল। সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটিসহ ১৭টি ইউনিয়নে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ১৬০।