:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে প্রতিটি গুমের ঘটনা তদন্তের দাবি করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ’মায়ের ডাক’ আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই দাবি তোলেন গুমের হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা।
২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি রামপুরা থেকে গুম হওয়া ছাত্রলীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা সালেহা বেগম বলেন, “আমার ছেলের সন্ধানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে তিনবার দেখা করেছি, তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি আমার ছেলেকে আর ফিরে পাইনি।”
মানববন্ধনে সালেহা বলেন, ‘আমার সন্তান কেন গুম হলো, তা সরকারের কাছে জানতে চাই। তার কী দোষ ছিল, কী অন্যায় ছিল, তা জানতে চাই। অন্যায় করলে তার বিচার হোক।’
সালেহা বলেন, ‘এখন যে “আয়নাঘরের” কথা শুনতেছি, সেটির তদন্ত করা হোক। আমি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছি। কখন মারা যাই জানি না। মারা যাওয়ার আগে একটিবার সন্তানের মুখে মা ডাক শুনতে চাই। আমার আর কোনো চাওয়া নেই।’
২০১৯ সালের ১৯ জুন ‘গুম’ হন মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন। সে সময় তাঁর মেয়ে আনিশা ইসলাম সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। এখন সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। বাবার খোঁজ পাওয়ার দাবি নিয়ে সে আজ তার মা নাসরিন জাহানের সঙ্গে শাহবাগের মানববন্ধনে এসেছে।
মানববন্ধনে আনিশা বলে, ‘তিন বছর ধরে বাবার জন্য কাঁদছি। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। আমি হতভাগ্য সন্তান। মোনাজাতে বসে বাবার জন্য কী দোয়া করব, তা নিয়ে আমি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যাই। আমি একবার দোয়া করি, আল্লাহ, তুমি আমার বাবাকে বেহেশত নসিব করো। আবার দোয়া করি, আল্লাহ, তুমি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও। আমি জানি না, আমার বাবা জীবিত নাকি মৃত। আমি আবার বাবার সন্ধান চাই।’
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমরা বারবার হাজির হচ্ছি, একটা প্রশ্ন নিয়ে। সেটা হলো, আমাদের পরিবারের সদস্যরা কই? তারা কোথায় আছে? এই উত্তর অবশ্যই সরকারকে দিতে হবে। সারা বিশ্ব আজ গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সঙ্গে আছে। সবার দাবি হচ্ছে, যেহেতু গুমের ঘটনাগুলো বারবার অস্বীকার করা হচ্ছে, সে কারণে সঠিক তদন্ত করা হোক।’
২০১০ সালের ২৫ জুন ঢাকার ইন্দিরা রোড থেকে ‘নিখোঁজ’ হন বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম। মানববন্ধনে তাঁর ভাই খুরশিদ আলম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদাপোশাকে থাকা লোকজন চৌধুরী আলমকে তুলে নেন। অনেক কাকুতি-মিনতি করে বলেছি, আমার ভাইকে যদি মেরে ফেলে থাকেন, তাহলে কবর দেওয়ার জন্য লাশটা ফেরত দেন। সরকারের কাছে কিছু চাই না, কিছু চাওয়ার নেই। আমরা বিচারও চাইব না। তবু ভাইয়ের লাশটা ফেরত দেন।’
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পাঁচ বন্ধুর সঙ্গে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম। ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁর বোন সানজিদা ইসলাম।
গুমের ঘটনায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান সানজিদা। তিনি বলেন, ‘এই টিমের কাজ হবে, যাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের খুঁজে বের করা। আয়নাঘরের মতো গোপন সেল থেকে আমাদের ভাইদের বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। পাশাপাশি যাঁরা এ ধরনের জঘন্য কাজের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা। তদন্তের ভিত্তিতে তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা।’
মানববন্ধনে মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন বলেন, ‘গুমের শিকার হওয়া যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁরা কোনো কথা বলছেন না। এমন একটা পরিবেশে তাঁরা ছিলেন, যেখান থেকে ফিরে এসে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তাঁদের যেখানে রাখা হয়েছে, সেটি আয়নাঘর হোক বা অন্য কোনো সেফ কাস্টডি হোক, সেখান থেকে ফিরে তাঁরা একটি শব্দও বলতে চান না। সরকারের পক্ষ থেকে এখন উদ্যোগ গ্রহণ করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনতে হবে। আর যেসব গোপন বন্দিশালার তথ্য পাওয়া গেছে, তা চিহ্নিত করতে হবে। এই বন্দিশালাগুলো যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য অবিলম্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক।’
‘আয়নাঘর’ প্রসঙ্গ টেনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমাকেও এই রকম একটা ঘরে রাখা হয়েছিল। দুই ঘণ্টা চোখ বেঁধে আমাকে ঘোরানো হয়। তারপর ওই ঘরে আমাকে তোলা হলো। সেই ঘরে কোনোরকমে একটা চৌকি ফেলা যায়। ওই ঘরের কোনো জানালা নেই। একটা দরজা আছে, সেটি বন্ধ করে দিলে নিশ্বাস নেওয়ার পর্যন্ত জায়গা নেই।’
গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক বলেন, ‘গুম হওয়া ব্যক্তিরা আয়নাঘরে বন্দী আছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সুস্পষ্ট বক্তব্য চাই। সুস্পষ্ট বক্তব্য না পেলে সেই আয়নাঘর ঘেরাও করে বন্দীদের মুক্ত করতে হবে।’
এদিকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বাংলাদেশের উচিত গুমের ঘটনায় স্বচ্ছ, স্বাধীন তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক আহবানগুলোয় মনোযোগ দেওয়া।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব মতে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশে গুমের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৬০০টি। এর মধ্যে কাউকে কাউকে পরবর্তীতে আদালতে হাজির করা হয়েছে, কারো লাশ উদ্ধার হয়েছে এবং বাকিরা বছরের পর বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।
‘বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার বলেছি, বিভিন্ন সময়ে সময়ে বলেছি, সবসময়ে বলছি। কিন্তু কেউ আমার বাবাকে নিয়ে আসেন না। আমার বাবাকে যদি মেরেও ফেলা হয় তাহলে তার লাশটা দিন। আমি আমার বাবার লাশটা ছুঁয়ে দেখতে চাই। আমার বাবা কেমন ছিলো তা জানতে চাই। বাবাকে ছাড়া আমার কিছুই ভালো লাগে না।’
এভাবেই ২০১৩ সালে বংশাল থানা ছাত্রদলের নেতা পারভেজ রেজার ৮ বছরের মেয়ে হৃদি তার বাবার জন্য আকুতি-মিনতি করেন। তার মতো করে বিভিন্ন সময়ে হারিয়ে যাওয়া গুম পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের ফিরে পেতে আকুতি-মিনতি করেন।
তারা বলেন, যদি আমাদের স্বজনদের মেরে ফেলাও হয় তাহলে যেন লাশটা ফেরত দেওয়া হয়। আমরা স্বজনদের জন্য, তাদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া-মিলাদটুকু যেন করার সুযোগ পাই।
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে দুপুর ১২টা থেকে মানববন্ধন করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এতে শতাধিক গুম পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনের ছবি নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।
‘গুম হওয়া, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক নিপীড়ন’ বন্ধের দাবি জানিয়ে নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড বহন করে। মানববন্ধন কর্মসূচির অনুষ্ঠানস্থলে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার নিহতদের দৃশ্য নেতাকর্মীরা অভিনয় করে প্রদর্শন করেন। ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইলে নাইটেঙ্গল মোড় পার হয়ে মালিবাগ পর্যন্ত রাস্তায় একপাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
২০১৩ সালে গুম হয়ে যাওয়া বংশাল ছাত্রদল নেতা সোহেলের ৭ বছরের মেয়ে সাফা তার বাবার জন্য আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘জন্মের পর বাবাকে দেখিনি। স্কুলে বন্ধুরা তাদের বাবার হাত ধরে স্কুলে আসে, মেলায় যায়। আমি কখনো বাবার আদর পাইনি। আমারও ইচ্ছা করে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে, বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে। আমি বাবাকে চাই-ই, চাই। আর কতবার বাবাকে ফেরত চাইতে হবে। বাবাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে।’
২০১৩ সালে গুম হওয়া ঢাকা মহানগর ৩৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, ‘সরকার গুম করলেও এখন অস্বীকার করছে। দেশে যত আয়নাঘর আছে সেখান থেকে আমাদের প্রিয়জনদের ফেরত দিতে হবে। ওইসব আয়নাঘর ভেঙ্গে ফেলতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে বাংলাদেশের গুম ঘটনার দ্রুত তদন্ত দাবি জানিয়ে বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের প্রধান পরিষ্কার ভাষায় বলে গেছেন, “বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুমের অভিযোগ আছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।” আমরাও দাবি করছি- গুমের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে, দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এখনই ভয় পেয়ে গেছে। সেজন্য লাঠিয়াল বাহিনী নামিয়ে দিয়েছে। এই লাঠিয়াল বাহিনীতে কাজ হবে না। মানুষ জেগে উঠেছে। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি তরুণ যুবকদের সবাই এগিয়ে আসুন দেশকে রক্ষা করার জন্য, এই শিশুর বাবাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য, ভাইদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ‘আজকে গুম হওয়া পরিবারের কান্না আমরা শুনেছি। এই কান্না কোনোদিন থামবে না যতদিন এই দখলদার সরকারের পতন ঘটাতে আমরা না পারি।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, গুম হওয়া ছাত্র দলের সাইফুর রহমান সজীবের বাবা শফিকুর রহমান, সেলিম রেজার পিন্টুর বোন নদী বক্তব্য রাখেন।
জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান এইচআরডব্লিউর
বাংলাদেশে গুমের অভিযোগ তদন্তে জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে নেত্র নিউজে প্রকাশিত গুমের শিকার ব্যক্তিদের ‘আয়নাঘরে’ আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করেছে এইচআরডব্লিউ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত আগস্টে তিন দিনের বাংলাদেশ সফর করেন। তখন তিনি সরকারের প্রতি গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগগুলো তদন্তে একটি বিশেষায়িত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান, যারা ভিকটিম, তাদের পরিবার ও সুশীল সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে এ ধরনের একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের বাণিজ্য ও কৌশলগত অংশীদারেরাও নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের নিপীড়ন বন্ধের জন্য চাপ বাড়িয়েছে।
এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, গুমের ঘটনায় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততার প্রচুর তথ্য রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের এ বিষয়ে না জানার ভান করাটা বন্ধ করা উচিত। গুমসংক্রান্ত অভিযোগগুলোর বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে জবাব প্রদান এবং কার্যকর জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করা উচিত।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে গুম নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল তারা। পাশাপাশি গুমের ৮৬টি ঘটনা নিয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল। জবাবে বাংলাদেশ সরকার শুধু তা অস্বীকার করেছিল। এর পর থেকে এসব ঘটনা নিয়ে তারা আর কোনো তথ্য দেয়নি।
মিশেল ব্যাশেলেতের বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইকমিশনারের দপ্তর।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমকে পাঠানো এক ই–মেইল বার্তায় বিষয়টি জানিয়েছেন মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রবিনা শ্যামদাসানি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দুঃখের সঙ্গে বলছি যে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।’
বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে যে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়নি।
ই–মেইল বার্তায় রবিনা শ্যামদাসানি বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে হাইকমিশনার বাংলাদেশ সরকার, সুশীল সমাজ ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে বৈঠকে মানবাধিকারসংক্রান্ত অনেক বিষয় নিয়ে তাঁর উদ্বেগ তুলে ধরেছেন। ঢাকা সফর শেষে তাঁর দেওয়া বিবৃতিতেও এ বিষয় উঠে এসেছে। হাইকমিশনার বাংলাদেশের মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তৃতভাবে কথা বলায় মেয়াদপূর্তি উপলক্ষে ২৫ আগস্ট জেনেভায় দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বৈশ্বিক বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেন। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন, খাবার, জ্বালানি তেল ও অর্থনৈতিক সংকট, সুশীল সমাজের কথা বলার অধিকারের মতো বিষয়গুলো ছিল। এসব বিষয় সব দেশেই রয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত। সেখানে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়টি উঠে আসে, ওই দিনই ছিল রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের বছরপূর্তি। তা মানবাধিকার নিয়ে “বৈশ্বিক প্রতিবেদন” ছিল না।’
ই–মেইল বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশ সফর শেষে ঢাকায় দেওয়া বক্তব্যে ব্যাশেলেত বলেছিলেন, মানবাধিকারসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করার প্রথম ধাপই হলো সেগুলো স্বীকার করে নেওয়া। হাইকমিশনার যেসব সুপারিশ করেছেন, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ঢাকাকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর। পাশাপাশি বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষা ও তা এগিয়ে নিতেও সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে তারা।