:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
দেশের ৬৩ জেলাতেই ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৩০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হলো ১৮২। এটি দেশের ইতিহাসে এক বছরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু বাংলাদেশে বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিবছর বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন।
করোনা মহামারি শুরুর বছর ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮ হাজার ৪২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়। করোনা মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে ১ লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ওই বছর সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে মারা যান ১৭৯ জন। এত দিন এটাই ছিল এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
সারাদেশেই কমেছে তাপমাত্রা। কিন্তু কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিন শনাক্ত রোগীর প্রায় অর্ধেকই রাজধানীর বাইরে। কৃুড়িগ্রাম ছাড়া ডেঙ্গু ছড়িয়েছে বাকি সব জেলায়। সবচেয়ে বেশি রোগী চট্টগ্রাম, মাদারীপুর, কুমিল্লা, গাজীপুর ও কক্সবাজারে।
২০২০ সালের নভেম্বরে রোগী শনাক্ত হয় সাড়ে ৩ হাজার। পরের বছরের একই মাসে তা ৫৪৬ জন।অথচ এ বছরের নভেম্বরের প্রথম আট দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি প্রায় ছয় হাজার।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে, দেশে গত ৪০ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৮ হাজার রোগী। মারা গেছেন ১২২ জন। তবে সংক্রমণ কবে নাগাদ কমবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউ।
দেশে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় প্রায় ৪৪ হাজার রোগী। পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হলেও মারা যাচ্ছেন বেশি নারীরা। মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ ভাগই হাসপাতালে যাওয়ার তিন দিনের মধ্যে।
যশোরে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। জেলায় ৬শ’ ৫০ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে অভয়নগরেই আক্রান্ত হয়েছেন ৪শ’ ৭৬ জন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৭ জন।
রোগীর চাপ সামলাতে সদর হাসপাতালের পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় জনসাধারণকে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস। তবে খারাপ পরিস্থিতির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়াকে দায়ী করেছেন পৌরবাসী।
লক্ষ্মীপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় সদর হাসপাতালে ৮০ জন আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। আর পুরো জেলায় আক্রান্ত ২শ’ জন। তবে বেশিরভাগ রোগী ঢাকা ও চট্রগ্রাম থেকে আসা।
গত দুই সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে পাবনা ও কুষ্টিয়ায় ডেঙ্গু রোগী কিছুটা কমেছে। এ দু’জেলার বেশিরভাগ রোগী রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মচারী ও ঢাকা থেকে এসেছেন। এদিকে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৬ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ১৯ জন। এ জেলার আক্রান্তরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে কর্মরত ছিলেন।
মাদারীপুরের সরকারি হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৬ জন রোগীসহ চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৮ জন। জেলায় এখন পর্যন্ত ৪শ’ ৯৫ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া, মৌসুম শেষে ঝুঁকিতে আছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ ও বরিশাল।