:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
চলতি মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫.৮ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। শুক্রবার পঞ্চগড়সহ দেশের ১২ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক নাগরিক নিউজকে বলেন, পঞ্চগড়সহ পুরো রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। রংপুর বিভাগ ছাড়া রাজশাহী, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও নওগাঁ জেলাতেও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উত্তরের জনপদগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রামের তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৮, নওগাঁর বদলগাছির ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকে বলে গণ্য করা হয়। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে তা হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
উত্তরের জনপদে শীতের প্রকোপ বাড়লেও রাজধানীতে বেড়ে গেছে এ শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শুক্রবার রাজধানী ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বৃহস্পতিবার তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, ঢাকায় ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ঢাকায় ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর বৃষ্টি হয়েছিল।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির এ প্রবণতা আগামী দুই দিন থাকতে পারে বলে নাগরিক নিউজকে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এরপর থেকে আবার তাপমাত্রা কমতে পারে। সে অনুযায়ী জানুয়ারি জুড়েই শীতের প্রকোপ থাকতে পারে। দক্ষিণাঞ্চলের আকাশে মেঘ আছে। উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশার দাপট কমেনি।
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা নাগরিক নিউজকে বলেন– কিশোরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় তা প্রশমিত হলেও শীত থাকবে এ মাসজুড়েই।
গত ১১ জানুয়ারি দেশের উত্তরের কিছু জেলায় শুরু হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, সঙ্গে ছিল ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিম হাওয়ার দাপট। ২০ জানুয়ারির পর শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার ঘটতে থাকে। তীব্র ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশ। কুয়াশার কারণে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার খবরও মিলছে প্রায় প্রতিদিন। হাসপাতালগুলোয় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে।
তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় বিভিন্ন জেলায় বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাসের সময় পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে সকাল ১০টায়।
তীব্র শীতে জরুরি কাজ ছাড়া এসব এলাকার লোকজন বের হচ্ছে না। শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে সর্দি, কাশি ও হাপানিজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মজুর পরিবারের মধ্য বয়সী ও বৃদ্ধরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
এদিকে তীব্র শীতে নাকাল জনজীবনের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি নিয়েও কিন্তু উদ্বিগ্ন কৃষকেরা। নিম্ন তাপমাত্রা ও কুয়াশাযুক্ত আবহাওয়ার কারণে বোরো ধান, আলু, ডাল ও শীতকালীন বেশ কিছু ফসল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে ২০১৮ সালে। ওই বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড।
একই দিনে সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৯ ডিগ্রি, নীলফামারীর ডিমলায় ৩ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩ দশমিক ১ ডিগ্রি এবং দিনাজপুরে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এছাড়া ২০১৩ সালে ১০ জানুয়ারি সৈয়দপুরে ৩ ডিগ্রি এবং ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। তারও আগে, ১৯৯৬ সালে দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
২০১৯ সালে তেঁতুলিয়ায় ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি, ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি যশোরে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং ২০১৭ সালে কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) পূর্বাভাসে জানানো হয়, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ এবং সড়ক পরিবহণ চলাচল ব্যাহত হতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় জানানো হয়, এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।