:: হাসান আল আরিফ ::
বাংলাদেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বড় একটি বাজার থাকা সত্ত্বেও এই শিল্পের এমন অবস্থা কেনো? কেউ কি এই শিল্পের বিপর্যয়ের নেপথ্য ঘটনা, রাজনৈতিক কারণ ইত্যাদি উদঘাটন করার সময় পেয়েছেন? যদি না পেয়ে থাকেন, আমি বলছি, শুনুনঃ
২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া কিংবা চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় হয় ৭৯৭ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলার। দেশের রপ্তানি আয়ের দিক থেকে এই আয় তৃতীয়। বৈদেশিক রপ্তানি ব্যাতিত দেশের অভ্যন্তরেও চামড়ার অনেক বড় একটি বাজার রয়েছে। রপ্তানিকৃত বাজারের কাছাকাছিই হবে সে বাজার। যদি থুক্কুমুক্কু একটা হিসাব ধরি, বাংলাদেশে চামড়ার মোট বাজার নূন্যতম ১৫০০ মিলিয়ন ডলার। চামড়া খাত থেকে এ যাবৎ সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা আয় ছিলো ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২৫৮ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকেই এই চামড়া শিল্প ক্রমাগত নিন্মমুখী। এখন তলানিতেই বলা চলে।
এবার আসুন এর রাজনৈতিক কারণ অনুসন্ধান করি। বাংলাদেশে চামড়ার প্রধান ও বড় একটি যোগান আসে ঈদুল আযহা তথা কোরবানীর ঈদে পশু কোরবানী থেকে। প্রতিবছর কমবেশী ৯০ লাখ চামড়া এই এক দু দিনেই চামড়া ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে থাকেন। এখানেই রয়েছে প্রথম রাজনৈতিক কারণঃ আমাদের দেশে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এই ৯০ লাখ চামড়া বিক্রির সমুদয় টাকাই গরীব মিশকিনদের দান করে দেওয়া হয়। আমার আইকিউ সেন্স যদি ঠিক থেকে থাকে এই টাকার ৯০% টাকাই চলে যায় কওমীভিত্তিক বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায়। আবার এই মাদ্রাসাগুলোতে রয়েছে রাজনৈতিক ভাবে একেবারেই অদক্ষ ও হুজুগে সংগঠন হেফাজতে ইসলামের একাধিপত্য। অপরিনামদর্শী বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে হেফাজতে ইসলাম বর্তমান সরকারের চক্ষুশূল হয়ে আছেন৷ হেফাজতে ইসলামকে অর্থনৈতিক ভাবে শায়েস্তা করতে তাদের বাৎসরিক আয়ের বড় একটি উৎসে পরিকল্পিত ভাবেই হানা দেওয়া হয়েছে। এবং সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই এই সিন্ডিকেটটির কাজ চলমান আছে। এখন হেফাজতে ইসলাম কিছুটা হলেও অর্থকষ্টে পরেছে। এটি তারাও স্বীকার করবে হয়তো!
এক্ষণে অনেকেই নিজের খাড়া নাক ভোঁতা করতে আমার এখানে তেড়ে আসতে পারেন! বলবেন, চামড়া শিল্পের বিপর্যয়ের কারণ- কোভিড ১৯! ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনি যে কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানার কথা বললেন, এটি ভুল ভাবনা। আমিও চাই, আমার ভাবনাগুলো ভুলই হোক। কিন্তু আপনি দেখান, ২০১৬-১৭ সাল থেকেই এই চামড়ার বাজার নিন্মমুখী। তখন তো কোন কোভিড ১৯ ছিলো না! যেখানে উন্নয়নশীল একটি দেশে চামড়ার বাজার বাড়ার মত সকল অনুষঙ্গই আছে, সেখানে ২০১৬-১৭ থেকেই বাজার কমছে কেনো? এরও রাজনৈতিক উত্তর আছে। শুনুনঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের হাইকোর্ট যখন ২০১৭ সালে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ দেখিয়ে ঢাকার হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানাগুলোকে বন্ধ করতে আনুষ্ঠানিক আদেশ দেন এবং কারখানাগুলো সাভারে ট্রান্সফার করা শুরু হয় তখনই ঘৃণ্য খেলা শুরু হয়। ২০০১-২০০৬, বাংলাদেশের সরকার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিএনপি। বিএনপি সরকার ২০০৩-০৫, সাভারে বর্তমান যে ট্যানারী শিল্প এটির ভিত্তির প্রস্তর স্থাপন করতঃ জমি অধিগ্রহণ, বরাদ্ধ, টেন্ডার ও কাজ শুরু করে। প্রকল্পের কাজ পায় একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। চিন্তা করুন, হাইকোর্ট যে রায় ২০১৭ সালে দিয়ে ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগ থেকে বন্ধ করে দিলো, তার অন্তত ১৪ বছর আগেই বিএনপি সরকার ভিশনারী সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ট্যানারিশিল্প হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে সাভারে নিয়ে যাওয়ার প্লান করলেন। কিন্তু সময়ের অভাবে শেষ করে যেতে পারলেন না। এখন ২০২১ সাল; এখনো সেই কাজ আনুষ্ঠানিক শেষ হয় নি? কেনো হয়নি?
যদি ভুল না বলে থাকি, এটি প্রতিহিংসার কারণেই হয় নি। নানান জটিলতা তো থাকবেই তাই বলে ১৬ বছর আগে নেওয়া প্রজেক্ট এখনো বাস্তবায়িত হবে না! প্রতিহিংসা ছাড়া এখানে অন্য কিছু আছে তা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। অনেক বড় বড় মেগা প্রজেক্ট দেখবেন- ফ্লাইওভার, ভবন ইত্যাদি নির্মান করিয়ে সরকার থ্যাঙ্ক ইউ পিএম নিয়ে থাকতে দেখবেন, কিন্তু দেশের উৎপাদনের অন্যতম অনুষঙ্গ চামড়া শিল্পের উন্নয়নে কোন অগ্রগতি দেখবেন না কারণ এটি বিএনপি সরকারের প্লান। তাদের নেওয়া প্রজেক্ট। এবং এটিই সত্য কথা।
আজকের বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও রপ্তানি বাণিজ্যের তিনটি প্রধান অনুষঙ্গঃ (১) তৈরী পোশাক (২) জনশক্তি রপ্তানি (৩) চামড়াশিল্প মূলত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ব্রেইনচাইল্ড। বহু থ্যাঙ্ক ইউ পিএম কামাচ্ছেন, আপনারাও দিচ্ছেন! কিন্তু নতুন আর একটি শিল্পের বিকাশও কি আপনারা করে দেখাতে পেরেছেন? এই জাতির জাতিগত চরিত্রেই ঘুণে ধরে গেছে। এরা সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলাও ভুলে গেছে। ভয়াবহ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়া এই জাতির কপালে আর কি কি বিপদ অপেক্ষা করছে আল্লাহ ছাড়া কেউ মালুম নেই৷