:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
রোজার আগেই ছোলার দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছোলা আমাদানিতে সরকারকে কোনো শুল্ক দিতে হয় না ব্যবসায়ীদের।
এছাড়া মাত্র তিন দিনের ব্যবধান। এর মধ্যেই কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা আদা কেজিতে বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বনানী, কারওয়ান বাজার ও নাখালপাড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে নিত্যপণ্যের দামের এমন চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। যা তিন দিন আগেও কেনা গেছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। ব্রয়লারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে সোনালি জাতের মুরগির ওপর। এ জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ ধরনের মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়। ডিমের দামও ডজনে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। তবে এক মাস আগে ডিমের দাম ছিল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা।
ব্রয়লারের বাজার আরও অস্থির হবে বলে মনে করেন প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘জানুয়ারির মাঝামাঝিতে একটি ব্রয়লারের বাচ্চার দাম ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা। এখন তা ৪০ থেকে ৪৩ টাকা। মুরগির বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারের উদ্যোগে গত নভেম্বরে মুরগির খাদ্য, বাচ্চা, ডিম ও রেডি মুরগী বেচাকেনা এবং দামসংক্রান্ত বিষয়ে একটি কৌশলপত্র নির্ধারণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে। এ ব্যাপারে আমরা মতামত দিয়েছি। তবে অধিদপ্তর কৌশলপত্র করছে না। এটি করা হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
গত বুধবার থেকে নতুন বাড়তি দরের চিনির প্যাকেট বাজারে আসার কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি। কিছু কিছু দোকানে আগের ১০৭ টাকা দামের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে নতুন দাম ১১২ টাকায়। একইভাবে খোলা চিনির দর ১০৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে। এ কারণে কেউ কেউ চিনির প্যাকেট খুলে তা খোলা বিক্রি করছেন।
কারওয়ান বাজারের হাজি স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. কামাল বলেন, ‘দাম বাড়লেই কী আর না বাড়লেই কী। এক মাস ধরে তো প্যাকেট চিনির চেহারাই দেখি না। খোলা চিনি মাঝেমধ্যে দুই-এক বস্তা পাওয়া যায়। কিনতে হয় বেশি দাম দিয়ে। ডিলাররা বেশি দাম নিলেও ক্রয় রসিদ দেয় না। সেজন্য বিক্রিই বন্ধ রেখেছি।’
বনানী ডিএনসিসি কাঁচাবাজারের রায়হান জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী ইশাবুল আলম বলেন, ‘নতুন বাড়তি দামের প্যাকেট চিনি এখনও দেয়নি কোম্পানিগুলো। পুরোনো চিনি নতুন দামে বিক্রি করছেন ডিলাররা। খোলা চিনির কেজি ১০৭ টাকা করা হলেও আমাদের পাইকারিতেই কিনতে হয় ১০৭ থেকে ১০৮ টাকা দরে। ১১৫ থেকে ১২০ টাকার কমে বিক্রি করলে পোষায় না।’
মাঝে কয়েক দিন সামান্য কমে ফের বেড়েছে আদা, পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, এলাচসহ বেশিরভাগ মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমদানি করা পণ্য। বাজারে দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়, আর আমদানি করা আদা কিনতে হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে দেশি আদা ১৫০ থেকে ১৮০ এবং আমদানি করা চায়না আদা ২৩০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রসুন কেজিতে দাম বেড়েছে ৩০ টাকার মতো। আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। গত সপ্তাহে দেশি রসুনের কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় কেনা গেলেও এখন লাগছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এক মাস আগে আরও অনেক কম ছিল আদা ও রসুনের দাম। চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজিও ৫ টাকা বেশি দামে, অর্থাৎ ৪৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে আদা-রসুন বিক্রেতা জহিরুল মিয়া বলেন, ‘দাম বাড়া-কমা সবই করে আমদানিকারকরা। তারা জানিয়েছে, আমদানি আগের চেয়ে কম। এ কারণে বাজার বাড়তি।’
মাঝে ক’দিন কমে আবারও ছোলার দাম বেড়েছে। ৮ থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। তবে রমজানের আগেই ছোলার দাম ১০০ টাকা পার হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তেজকুনিপাড়া এলাকার মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী হেলাল মিয়া।
মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের রহমান জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী মো. মেহেদী বলেন, ‘ছোলার দাম কিছুটা বেড়েছে। কেজি ৯৫ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
জিরার কেজিতে আরও ৫০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে জিরার কেজি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় কেনা গেছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। দারচিনি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে এলাচের দাম। ছোট এলাচের কেজি ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়।
ভরা মৌসুমেও কয়েকটি সবজির দাম কমার লক্ষণ নেই। পটোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। বরবটি, বেগুন, করলা, ঝিঙা ও চিচিঙ্গার কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি চলছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এখনও শিমের কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুটা কমে মুলা ৩০, গাজর ৪০ থেকে ৫০, শসা ৫০ থেকে ৬০, শালগম ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া প্রতিটি বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর মাঝারি আকারের লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।
আগের বাড়তি দরেই স্থিতিশীল দেখা গেছে চাল, আটা ও ভোজ্যতেলের দাম। মাছের বাজারও রয়েছে একইভাবে স্থির।