:: নিয়ন মতিয়ুল ::
চোখ ধাঁধানো অবকাঠামোই শুধু নয়, বরং নেতা আর সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক আর যুগোপযোগী করুন, দেখবেন জাতীয় প্রেস ক্লাব আধুনিক, স্মার্ট হিসেবে গড়ে উঠছে। আমার একান্ত ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে এই আধুনিকায়ন হতে পারে দু’ভাবে।
ভেতরের পরিবর্তন
১. বহু মত আর পথকে সুসমন্বিত করে গণতন্ত্র আর সুশাসনবিষয়ক মূল্যবোধ তৈরির পথরেখা নির্ধারণ করতে হবে। যার মাধ্যমে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলদের আধুনিক-স্মার্ট দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে সহায়তা করা যাবে।
২. গণমাধ্যমের বিদ্যমান সংকটের বৈশ্বিক ও দেশীয় প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ, সম্ভাব্য উপায় পর্যালোচনা, উত্তরণের পথ নির্ধারণে সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। প্রয়োজনে গাইডলাইন তৈরি করা।
৩. গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন। সাংবাদিকবান্ধব ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনতে হবে।
বাইরের পরিবর্তন
১. স্বাস্থ্যসম্মত বিনোদন: কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক মানসিক চাপে থাকা সদস্যদের স্বাস্থ্যসম্মত চিত্ত বিনোদনের আধুনিক ব্যবস্থা। ইনডোর গেম ছাড়াও অবশ্যই শব্দদূষণ না ঘটিয়ে বড় পর্দায় বিশ্বখ্যাত ডকুমেন্টারি কিংবা মুভি দেখানোর ব্যবস্থা করা।
২. স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও চিকিৎসা: সস্তায় স্বাস্থ্যসম্মত উন্নতমানের পরিচ্ছন্ন খাবারসহ রাখতে হবে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। উন্নত চিকিৎসা সেবার সার্বক্ষণিক ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনে সাংবাদিকদের দ্বিতীয় গৃহখ্যাত প্রেস ক্লাবের সদস্যদের পরিবারের সেবাও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি রাখতে হবে শরীর চর্চা কেন্দ্র।
৩. পরিবেশবান্ধব-সবুজায়ন: গোটা প্রেস ক্লাব চত্বরকে পরিবেশবান্ধব সবুজায়নের পাশাপাশি ধূমপানমুক্ত হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে চত্বরের কোণায় ‘স্মোকিং আর ড্রিকিং জোন’ রাখা যেতে পারে।
৪. নারীবান্ধব: নারী সদস্যদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাসহ চিত্তবিনোদন ও শরীর চর্চার ভিন্ন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৫. সংরক্ষণাগার, গবেষণা, লাইব্রেরি: বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রতিবেদনগুলো প্রদর্শন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পাশাপাশি দেশীয় গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী ও হৈচৈ ফেলে দেয়া প্রতিবেদনসহ প্রতিবেদকের অভিজ্ঞতা প্রদর্শন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তার আগে গণমাধ্যমবিষয়ক বিশেষ লাইব্রেরি ও গবেষণা সেল গড়ে তুলতে হবে।
৬. কল্যাণ তহবিল ও বিকল্প কর্মসংস্থান: বৈরী সময়ে সদস্যদের জরুরি আর্থিক সহায়তা দিতে কল্যাণ তহবিল গঠন করতে হবে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সংবাদসংক্রান্ত বিকল্প কর্মসংস্থান গড়ে তোলার জন্য বিশেষ সেল গঠন করা যেতে পারে।
৭. সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেস ক্লাব: জাতীয় প্রেস ক্লাবের ওয়েরসাইটকে বিশ্বমানের হিসেবে সমৃদ্ধ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেস ক্লাবের নানামুখী প্রচারণায় থাকবে নিয়মিত আপডেট। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা বিষয়ে পরামর্শ কিংবা গণমাধ্যম সংক্রান্ত আইনগুলো বিস্তারিতভাবে থাকবে।
যুগোপযোগী প্রেস ক্লাব বিনির্মাণে নতুন ধারার সাংবাদিকতায় দক্ষতা অর্জনে আরও পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে-
১. আন্তর্জাতিক সেমিনার: বৈশ্বিকভাবে বদলে যাওয়া সাংবাদিকতা বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে বিশ্বসেরা সাংবাদিকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার বা একক বক্তৃতার আয়োজন করা যেতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার গণমাধ্যমগুলোর বদলে যাওয়া বৈশিষ্ট্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত করা যেতে পারে। যেখানে মেধাবী তরুণ সংবাদকর্মীদের উন্মুক্তভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।
২. সদস্যদের বাইরে তরুণ কর্নার: প্রেস ক্লাবের সদস্য হতে ইচ্ছুক তরুণ মেধাবী সংবাদকর্মীদের জন্য আলাদা কর্নার করা যেতে পারে। যেখানে দেশীয় গণমাধ্যমের ইতিহাস, ঐতিহ্য পাঠের পাশাপাশি অবিস্মরণীয় অবদান রাখা গণমাধ্যমে ব্যক্তিত্বদের প্রোফাইল জানার সুযোগ থাকবে। এছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রতিবেদনগুলো পড়ার আর আইকন সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচয় ও আড্ডার সুযোগ থাকবে।
৩. গণমাধ্যম আড্ডা: গণমাধ্যমবিষয়ক শিক্ষক, লেখক ও গবেষকদের নিয়মিত আড্ডার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
প্রেস ক্লাব ভাবনা: ১ জানুয়ারি, ২০২৩। এলিফেন্ট রোড, ঢাকা
লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আনন্দবাজার