:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৫৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৫৩৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৪ হাজার ৪২৮ জন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
দেশের কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হতাহতের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদনে জানানো হয়, জানুয়ারিতে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল (পঙ্গু হাসপাতালে) এক হাজার ১৫৩ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৭২ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৭১ জনসহ সারাদেশে তিন হাজার ৩৭৪ জন যাত্রী ও পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য অনুযায়ী ১ হাজার ৫৪ জন আহত হয়েছেন। এতে মোট আহত সংখ্যা ৪ হাজার ৪২৮ জন।
জানুয়ারিতে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ৭টি দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত, ১৩ জন আহত এবং ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এই সময়ে ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭০ জন নিহত, ১৭৩ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, নিহতের ৩৪ দশমিক ৯০ শতাংশ ও আহতের ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।
জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে ১২৩টি। এ সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৭ জন নিহত ও ২৭০ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে ৩৩টি। এ সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ১২৫ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনের আরও বলা হয়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৩ জন চালক, ৭৪ জন পথচারী, ২৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৯ জন শিক্ষার্থী, ৬ জন শিক্ষক, ৭৫ জন নারী, ৫১ জন শিশু, ৩ জন সাংবাদিক, ১ জন চিকিৎসক, ১ জন আইনজীবী, ১ জন প্রকোশলী, ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন, ৩ জন পুলিশ সদস্য, সেনা বাহিনী ১, বিমান বাহিনী ১, ১ জন চিকিৎসক, ১ জন আইনজীবী, ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১ জন প্রকোশলী, ৯৬ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৬৯ জন পথচারী, ৪৭ জন নারী, ৩৮ জন শিশু, ২৯ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬ জন শিক্ষক, ও ৯ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়া যানবাহনের পরিচয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৭২৭টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা গেছে, ২৫ দশমিক ১৭ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ ট্রাক-পিকাআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বাস, ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ সিএনজিচালিত আটোরিকশা, ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৬ দশমিক ৫ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস।
দুর্ঘটনার সংগঠিত হওয়ার স্থান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জানুয়ারি মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, দশমিক ৯৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও দশমিক ৩৪ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ:
১. ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি।
২. মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল।
৩. সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা। রাতের বেলায় ফক লাইটের অবাধ ব্যবহার।
৪. সড়ক-মহাসড়কে নির্মাণ ক্রটি, ফিটনেস যানবাহন ও অদক্ষ চালকের হার ব্যাপক বৃদ্ধি।
৫. ফুটপাত বেদখল, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৬. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি।
৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশসমূহ :
১. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পুর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালু করা।
২. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা।
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান।
৪. রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা।
৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।
৬. রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৭. ব্লাক স্পট নিরসন করা, সড়ক নিরাপত্তা অডিট করা, স্টার মানের সড়ক করিডোর গড়ে তোলা।
৮. দেশে সড়কে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা, প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা।