:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রথম ও একমাত্র নারী সদস্য জামিলা আল-শান্তি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি নিহত হন।
রাজনৈতিক ব্যুরো হচ্ছে হামাসের প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী অংশ। জামিলা এই গ্রুপেরই একজন সদস্য ছিলেন। তিনি হামাসের সহপ্রতিষ্ঠাতা আব্দেল আজিজ আল-রানতিসির স্ত্রী।
জামিলা হামাসের নারী উইং খোলেন। ২০২১ সালে তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রথম নারী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তবে কোথায় বিমান হামলায় জামিলা নিহত হয়েছেন, তা জানায়নি ফিলিস্তিনি মিডিয়া।
নিজ বাসায় জামিলা নিহত হয়েছেন খবর দিলেও গাজার কোথায় তাঁর বাসা ছিল সেই বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি হামাস রেডিও।
এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘শহীদ ড. জামিলা আবদেল্লাহ তাহা আল-শান্তি ফিলিস্তিনের অগ্রগতির জন্য নিঃস্বার্থ এবং আত্মত্যাগের জীবন পরিচালনা করেছেন।’
সংসদ, শিক্ষা এবং রাজনীতিতে জামিলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে হামাস আরও বলেছে, ‘আমরা তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করছি। আমাদের আশীর্বাদপূর্ণ জন্মভূমি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনিসহ আমাদের সব শহীদের দেখানো পথে চলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে জামিলার জন্ম হয়েছিল। হামাসে নারীদের একটি শাখা তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালে নারীদের নিয়ে একটি সফল মিছিল করার পর থেকেই ইসরায়েলের টার্গেটে পরিণত হন তিনি। ওই মিছিলটি উপত্যকার উত্তর অংশের বেইত হানুনের উম্ম আল-নাসর মসজিদে ফিলিস্তিনি কর্মীদের ওপর একটি ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে দিয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০৬ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। বুধবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছিলেন, হামাসের হামলায় ১৪০০-র বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
অবরুদ্ধ গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার ভোরে অন্তত আরও ৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২৭ জন। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪ হাজার ৯০৭।
বৃহস্পতিবার ভোরে দক্ষিণ গাজায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে তিন পরিবারের অন্তত ৩০ জন নিহত হয়। আহত হয় আরও অন্তত ২১ জন।
অধিকৃত পশ্চিত তীরের উত্তরেও ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হয় এক শিশু। একই ঘটনায় তার পিতা আহত হয়।
পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ ও বেথেলহামে আলাদা দুই ঘটনায় নিহত হয় আরও তিন ফিলিস্তিনি। এসব ঘটনায় আহত হয় আরও অন্তত ৬ জন। নিহতদের একজনের বয়স ১৪ বছর। তার নাম আহমদ মুনিস সাদৌক।
মধ্য গাজায়ও বুধবার রাতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অনেকে হতাহত হওয়ার খবর শোনা গেছে। তবে হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বৃহস্পতিবার ১৩তম দিনে প্রবেশ করেছে। এ পর্যন্ত উভয় পক্ষে নিহত ৬ হাজার ৩০৭ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে নিজেদের নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ৪০৭।
কিন্তু গাজা সীমান্তবর্তী উভয় অঞ্চল থেকে হামাস যোদ্ধাদের প্রায় ১ হাজার ৫০০ মরদেহ উদ্ধারের দাবি করেছিল ইসরায়েল। হামাস এখন পর্যন্ত তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
হামাসের হাতে বন্দি রয়েছে ১৯৯ থেকে ২৫০ ইসরায়েলি নাগরিক। এসব বন্দির অনেকের আবার যৌথ নাগরিকত্ব রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেম থেকে ইসরায়েল অন্তত ৬৫০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করেছে।
১৩ দিনের যুদ্ধে মোট ১৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ফিলিস্তিনের ১১ জন, ইসরায়েলের তিনজন, লেবাননের একজন।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, অন্তত ১ হাজার ৩০০ মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে শিশু প্রায় ৬০০। এরা নিহত কি না নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি। স্থানচ্যুত হয়েছে ১০ লাখের বেশি। ধ্বংস হয়েছে ১১ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও অন্য অবকাঠামো। ইসরায়েলে আহত হয়েছে ২ হাজারের বেশি মানুষ।