:: ওয়াসিম ইফতেখার ::
জেনে নেয়া যাক, একজন ৪০০ টাকার মেজর মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে নারীদের কিভাবে সমান কাতারে এনেছিলেন। নারী সমাজের উপযুক্ত মর্যাদা দান করে তাঁদের দেশের কাজে লাগানোর ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই অগ্রদূত। নারীদের সমস্যা ও তাঁদের অবস্থান উন্নতির ব্যাপারে তিনি সর্বপ্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
” দুটি সবল হাত থাকলে কাজ যত সহজে করা যায়, একহাত সে কাজ অসম্ভব হতে পারে। পুরুষ এবং মহিলা সমাজের দুটি হাতের মতন। দেশকে মনের মত গড়তে হলে দু’টি হাতেরই দরকার এবং দু’টোই সবল হতে হবে।” –— প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান [দৈনিক দেশ , ৩০ জানুয়ারি ১৯৮১]
তিনি বুঝতেন মেয়েরা শিক্ষিত হলে সেই পরিবারের ছেলে-মেয়েরাও শিক্ষিত হবে। মেয়েদের আত্মবিশ্বাস এবং সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য তিনি মেয়েদের গ্রাম প্রতিরক্ষা দলেও অন্তর্ভুক্ত করেন। তাঁর সময়েই গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ৩৫ লাখ মহিলা সদস্য অন্তর্ভুক্ত হয়। জিয়া বিশ্বাস করতেন কাঠমোল্লাদের আপত্তি স্বত্তেও পুলিসসহ বিভিন্ন বাহিনীতে নারী অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করে এগিয়ে যেতে হবে। আনসার, পুলিশ বাহিনীতে নারীদের নিয়োগ দেন জিয়া। তিনি অনুধাবন করেছিলেন ক্রমবর্ধমান অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রনে ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রশাসনের মূল ধারাতে নারীদের অংশ গ্রহণ সমাজকে এগিয়ে দেবে।
মহিলাদের স্বাবলম্বী করতে তিনি মহিলাদের জন্য চাকুরী ক্ষেত্রে শতকরা ১০ ভাগ কোটা বা সংরক্ষিত পদ নির্ধারণ করেন। তিনি বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্র যেমন শিক্ষকতা, এই মর্মে নির্দেশ দেন যে যতদিন না মহিলা কোটা পূরণ হয় ততদিন কেবল মেয়েদেরই নিয়োগ দেওয়া হবে। তাহলে মেয়েদের কোটা পূরণ হতে আর বেশি সময় লাগবে না।
মহিলাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষে জিয়া ১৯৭৮ সালে প্রথম স্বতন্ত্র মহিলা মন্ত্রনালয় স্থাপন করেন এবং মহিলা মন্ত্রী নিয়োগ করেন।
কর্মজীবী মহিলাদের সুবিধার্থে তিনি প্রথম মহিলা কর্মজীবী হোস্টেল নির্মানের ব্যবস্থা করেন । অনেক কর্মজীবী মহিলারা এতে উপকৃত হয়েছেন এবং চাকরিকালে তাঁদের বাসস্থানের সমস্যা অনেকাংশে দূর হয়।
তিনি নারী সমাজকে স্বনির্ভর করতে চেয়েছিলেন। তিনি বুঝতেন যে মেয়েরা নিজেরা যদি উপার্জন ক্ষম হয়, তাহলে সেই পরিবারের সকলের কাছে তাঁর মর্যাদা বেড়ে যাবে এবং নারীদের উপর অযথা হয়রানি ও অত্যাচার কমে যাবে।
তিনি বুঝতেন মেয়েরা শিক্ষিত হলে সেই পরিবারের ছেলে-মেয়েরাও শিক্ষিত হবে। মেয়েদের আত্মবিশ্বাস এবং সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য তিনি মেয়েদের গ্রাম প্রতিরক্ষা দলেও অন্তর্ভুক্ত করেন। তাঁর সময়েই গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ৩৫ লাখ মহিলা সদস্য অন্তর্ভুক্ত হয়। জিয়া বিশ্বাস করতেন কাঠমোল্লাদের আপত্তি স্বত্তেও পুলিসসহ বিভিন্ন বাহিনীতে নারী অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করে এগিয়ে যেতে হবে। আনসার, পুলিশ বাহিনীতে নারীদের নিয়োগ দেন জিয়া। তিনি অনুধাবন করেছিলেন ক্রমবর্ধমান অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রনে ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রশাসনের মূল ধারাতে নারীদের অংশ গ্রহণ সমাজকে এগিয়ে দেবে। লিংকঃ https://goo.gl/2eE41U
আজকে সেনাবাহিনীতে নারীরা যোগ দিচ্ছে। শুধু ডাক্তার বা নার্স হিসাবে নয়, সরাসরি যোদ্ধা হিসাবে, গোলন্দাজ বা কমিউনিকেশন ইউনিটে অফিসার হচ্ছেন। এই সিদ্ধান্ত কিন্তু ১৯৮০ সালেই জিয়া নিয়ে ছিলেন। উনি খুব স্পষ্ট ভাষাতে বলে দিয়েছিলেনঃ “ভবিষ্যৎ সেনাবাহিনীর জন্য মেয়েদের প্রস্তুত হতে হবে।”
প্রায় প্রতিটি জনসভাতেই তিনি মেয়েদেরকে উপদেশ দিতেন যেন তারা স্বাবলম্বী হয়, কোন না কোন কাজ করে যেন তারা সংসারের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে সেইসব পরামর্শ দিতেন। তিনি বলেছিলেন “আপনারা জেগে উঠুন; আপনারা আমাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আপনারা সক্রিয়ভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করুন ,আপনাদের স্বামীদেরকেও বাধ্য করুন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য” ।
পরিবার পরিকল্পনার কথা এই দেশে এক সময় ভাবাই যেতো না। অথচ জিয়া আগামীর সমস্যা সবাইকে বুঝিয়ে এই দেশে পরিবার পরিকল্পনা প্রকল্প হাতে নেন। মিশরের গ্রান্ড ইমামকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনেছিলেন দেশে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ কেন নাজায়েজ নয়, তা বিস্তারিত বুঝিয়ে ছিলেন অতি রক্ষণশীলদের।
নারী সমাজকে উন্নয়নের মূল স্রোতে আনতে জন্ম-নিয়ন্ত্রণ সহ যে সব উদ্যোগ জিয়া নিয়েছিলেন তার কিছুটা জানতে পারবেন এই লিংকে। https://goo.gl/PjCQQL
চট্টগ্রামের মত রক্ষণশীল এলাকাতেও তিনি এমনি ভাবেই কথা বলতেন এবং মেয়েরাও তাঁর কথাতে প্রাণ পেতো, উল্লসিত হতো ; তিনি যে মেয়ের মনের কথাগুলিই বলতেন তা বোঝা যেতো মেয়েদের উল্লাস মুখর আর আন্তরিক হাততালির ধ্বনি থেকে।মহিলাদের মধ্যে আত্মসচেতনতা ও আত্মবিশ্বাস তিনি জাগাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন পুরুষ ও মহিলা সব্বাইকে দেশের উন্নয়নের কাজে শরিক করতে। তিনি বলেছিলেন “সেই জন্য আমাদের পার্টিতে মহিলা অঙ্গ দল, যুব মহিলা অঙ্গ দল আছে এবং জাতীয়তাবাদের যে চেতনা রয়েছে,আমাদের যে আদর্শ রয়েছে তাতে আমরা সকলকে অন্তর্ভুক্ত করেছি।আমাদের ধর্মও বলে যে কাজের বেলাতে পুরুষ ও মহিলা সব সমান।”
মেয়েদেরকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাতে সম্পর্কে সচেতন হতে তিনি সব জনসভাতেই সর্বদা পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলতেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা একই সূত্রে গাঁথা। পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে স্বাস্থ্য থাকবে না। তাঁর আগে আর কোন নেতা মহিলাদের স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যাপারে কোন সক্রিয় মনোভাব বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে অগুনতি মহিলা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে জিয়ার আরো একটি কাজ আমাদের জানা থাকা খুব প্রয়োজন। বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবল খেলাকে আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। তার সময় থেকেই মেয়েদের অন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু হয়। ডকুমেন্টঃ https://goo.gl/zXRVkU
নারীদের যুগোপযোগী করার প্রকৃয়া মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান শুরু করলেও এক্ষেত্রে সবচে শক্তিশালী বাস্তবায়ন অবশ্য মুক্তিযোদ্ধা প্রেসিডেন্ট জিয়ার নয়। সেসব বাস্তবায়ন করেছিলেন একজন ৪০০ টাকার মেজরের গঠিত রাজনৈতিক দলের চেয়ারপার্সন এক নারী, যে নারী আজ কারাগারে বসে প্রতিক্রিয়াশীল শত্রুর বিরুদ্ধে পাঞ্জা লড়ছেন। আমি উন্মুক্ত এ্যকাডেমিক চ্যলেঞ্জ দিতে পারি যে, নারীর ক্ষমতায়ন যুগোপযোগী বাস্তবায়ন করতে বেগম জিয়ার চেয়ে অধিক পারঙ্গমতা এশিয়া মহাদেশে আর কেউ-ই দেখাতে পারেন নি। আমি চ্যলেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। আছেন কোন বীরপুঙ্গব চ্যলেঞ্জ গ্রহন করার মত?
তথ্য সহায়তা
▪ অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক বিচিত্রা
▪ এস আব্দুল হাকিম
▪ দৈনিক ইত্তেফাক
▪ অধুনালুপ্ত দৈনিক দেশ
লেখকঃ অনলাইন এক্টিভিস্ট